গুপ্তহত্যা এবং গুপ্তঘাতক
নিশ্চল মূর্তি।
রাশিয়ায় তৈরী ড্রাগোনভ রাইফেলের টেলিস্কোপে চোখ রেখে অপেক্ষা করছে সে। আরেকটু বাদেই এদিক দিয়ে যাবে টার্গেট। ম্যাগাজিনে দশটা লম্বা চোখা বুলেট। রিলোড করতে সময় লাগবে দুই সেকেন্ডের কম সময়। কিন্তু সুযোগ মাত্র একটাই। জায়গামত পৌছে দিতে হবে বুলেটটিকে। স্নায়ুর চাপ প্রচন্ড। কিন্তু সব কিছুকে উপেক্ষা করে সে অপেক্ষা করতে লাগল। সে একজন গুপ্তঘাতক।
যে কোন সিনেমায় বিশেষতঃ হলিউডের, এ ধরনের দৃশ্যে দর্শককেও টানটান উত্তেজনায় থাকতে হয় – এটাই নিয়ম। এই ধরনের সিনেমা পছন্দ না করলেও এ স্নায়ুচাপ এড়ানোর সুযোগ নেই। শুধু স্নাইপার নয়, অ্যাসাসিনস-হিটম্যানদের নিয়ে সিনেমাগুলো আমার বেশ পছন্দের। গেল জুন মাসে দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল দেখার পর বেশ কিছু হিটম্যান সিনেমা দেখে ফেললাম – ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তালিকার সেরাগুলো। সব হিটম্যান মুভি দারুন হয় না, তাই পছন্দের চারটি সিনেমা নিয়ে এই পোস্ট – সিনেমায় গুপ্তহত্যা।
The Day of the Jackal, 1973
আলজেরিয়াকে স্বাধীন ঘোষনা করায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গল কিছু সামরিক এবং সরকারী অফিসারের চক্ষুশূলে পরিনত হন। একদি বিদ্রোহী দল গড়ে উঠে, যার নাম -ওএএস। প্রেসিডেন্টকে হত্যার একটা চেষ্টা হয় বটে কিন্তু ব্যর্থ হ্ওয়ায় হামলাকারীরা এবং তাদের নেতৃবৃন্দ ফাসিকাষ্ঠে ঝুলেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আধ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একজন হিটম্যানকে নিয়োগ দেয়া হয়। তার আসল নাম কেউ জানে না, শুধু জানে তার নাম ‘দ্য জ্যাকল’।
এই দ্য জ্যাকল এর গুপ্তহত্যা প্রস্তুতি এবং তাকে ঠেকানোর জন্য সরকারী প্রচেষ্টা – এই নিয়েই সিনেমা – দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল। ১৯৭৩ এ নির্মিত সিনেমা বলে হয়তো একটু পুরোনোই লাগবে সিনেমাটি, কিন্তু তাই বলে এর উত্তেজনা মোটেও পুরোনো হয় নি। পাক্কা ১৪০ মিনিটের এই সিনেমাটির গল্প নেয়া হয়েছে বিখ্যাত লেখক ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের একই নামের উপন্যাস থেকে। উপন্যাসটিই দ্য জ্যাকল নামের একজন হিটম্যানকে বিখ্যাত করে তোলে। দেখা যায়, নানাভাবে হিটম্যানের সাথে দ্য জ্যাকল নামটি মিশে আছে।
JFK, 1991
জেএফকে সিনেমাটিকে গুপ্তহত্যার মুভি বলা যাবে না হয়তো। কারণ সিনেমাটা জন এফ কেনেডির হত্যাকান্ড সংক্রান্ত ঘটনা বিশ্লেষন নিয়ে। জিম গ্যারিসন নামে একজন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কেনেডির হত্যাকান্ডের কয়েক বছর পরে সম্পূর্ন নিজের আগ্রহে তার দলবল নিয়ে তদন্ত শুরু করে। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাবলী বিশ্লেষন-পুনরায় বিশ্লেষনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে থাকে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত।
একসময় আদালতে গড়ায় – সংগৃহীত তথ্যাবলীর আলোকে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকান্ডের ঘটনাটি নতুন করে ব্যাখ্যা করেন গ্যারিসন – জানিয়ে দিলেন, একজন গুপ্তঘাতক নয়, কমপক্ষে তিনজন গুপ্তঘাতক জড়িত ছিলেন হত্যাকান্ডে, সন্দেহভাজন আটক হার্ভে লি অসওয়াল্ড আসলেই খুনী নয়, ফাদে আটকে পড়া বেচারা, আর হ্যা, মাত্র তিনটি বুলেট ছোড়া হয়নি – কমপক্ষে সাতটি বুলেট ছোড়া হয়েছিল প্রেসিডেন্টকে হত্যার উদ্দেশ্যে।
১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ঝাড়া তিনঘন্টার এই দুর্দান্ত সিনেমাটার পরিচালক অলিভার স্টোন। তিনঘন্টার মধ্যে এই বিশাল কাহিনী এঁটে নেয়ার জন্য পরিচালনার যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন – তা সিনেমাটিকে তার মাস্টারপিসে পরিণত করেছে নি:সন্দেহে। জিম গ্যারিসন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কেভিন কস্টনার।
জেএফকে সিনেমাটি দেখার পাশাপাশি আরেকটা সিনেমা দেখতে পারেন – সেটাও কেনেডি গুপ্তহত্যা নিয়ে। কিন্তু সেখানে একজন কল্পিত প্রেসিডেন্টকে হত্যার ঘটনার রহস্যভেদ দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো – খুনীর মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ। সিনেমার নাম I …. for Icarus. হাইলি রেকমেন্ডেড!
In the Line of Fire, 1993
১৯৯৩ সালে ক্লিন্ট ইস্টউডের অভিনয়ে ইন দ্য লাইন অব ফায়ার মুক্তি পায়, সিনেমার পরিচালক উলফগ্যাঙ পিটারসন। বৃদ্ধ ফ্রাংক হুরিগান হঠাৎ দায়িত্ব পায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করার, কারণ একজন পথভ্রষ্ট সিআইডি এজেন্ট মিচ ল্যারি তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে।
হুরিগান আর মিচ ল্যারির কার্যক্রম সমানতালে এগিয়ে চলে – একজন প্রস্তুতি নেয় গুপ্তহত্যা করার অন্যজন তা ঠেকানোর। দারুন উত্তেজনার এই সিনেমায় ক্লিন্ট ইস্টউডের তুলনায় মিচ ল্যারির ভূমিকায় জন মালকোভিচ বেশী ভালো অভিনয় করেছে – তার ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা আর খুনি মনোভাব শীহরন জাগায়।
তিনটি ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমি অ্যা্ওয়ার্ডস এর নমিনেশন পেলেও একটিও জিততে সক্ষম হয়নি এই সিনেমাটা – তাই বলে কিন্তু সিনেমার আবেদন একটু্ও কমেনি। রোটেন টম্যাটোস এর ভাষায় এই সিনেমার ৯৭ ভাগই ‘ফ্রেশ’।
Assassins, 1995
অনেক দুর্বল রেটিং প্রাপ্ত সিনেমা অ্যাসাসিনস আমার সবচে’ প্রিয় সিনেমা – গুপ্তহত্যা/ঘাতক সিনেমার তালিকায়। দুর্বলতার পরিমাণ কিরকম সেটা একটু দেখুন: আইএমডিবি ৬.০, রোটেন টম্যাটোস ৩.৭।
সম্ভবত আমার সিনেমা দেখার কৈশোর-প্রেম এই সিনেমা। ২০০২-০৩ এ দেখেছিলাম। পছন্দের আরও একটি কারণ অ্যান্টোনিও বান্দেরাস এর অভিনয়। এই সিনেমায় সে ভিলেন, পাগলা কিসিমের কিন্তু অত্যন্ত দক্ষ গুপ্তঘাতক, স্নাইপার। নায়কের ভূমিকায় সিলভেস্টার স্ট্যালোন। সেও একজন গুপ্তঘাতক। দুই হিটম্যানের লড়াই – একজন জিতবে, অন্যজন হারবে।
বিশেষ কিছুই বলার মতো নেই এই সিনেমায় – অ্যান্টোনিও বান্দেরাসের অভিনয় ছাড়া – চমৎকার। পরিচালক রিচার্ড ডোনার ৮০’র দশকে লেথাল ওয়েপন নামক কিছু সফল সিনেমার পরিচালনা করেছিলেন।
In the Line of Fire, Assassins,
ei 2ta dekha ache….
sundor post….etake series akare likhte paren…guptohotta niye aro kcu cinema ache
হুম। গুড আইডিয়া – দেখা যাক পারি কিনা 🙂
দ্যা ডে অফ দি জ্যাকেল বইটা আছে আমার কাছে। কিন্তু এখনো পড়া হয় নি। 🙂
ফ্রেডরিখ ফরসাইথের ওডেসা ফাইল আর ডগস অফ ওয়ার পরেছি। খারাপ লাগেনি। শুনেছি এটা তার সবচেয়ে বিখ্যাত বই।
অনেক বেশি বই+সিনেমা+এনিমেশন জমে গেছে। পরিমাণ দেখে এত ভয় লাগে যে শুরুই করতে পারছি না।
🙂
🙂
দেখুন -পড়ুন – শেয়ার করুন 🙂
শুভকামনা
সর্বশেষ দুইটি দেখা। দ্য এসাসিনস আমারও খুব প্রিয় ম্যুভি……তবে আন্তনিও বান্দেরাসের পাশা পাশি ঠান্ডা মাথার সিলভেস্টার স্ট্যালোনের নির্বিকার ঠান্ডা মাথায় অভিনয় আমার বেশ ভালোই লেগেছিল……
ইন দ্য লাইন অফ ফায়ার স্পেশাল কিছু না মনে হলেও, উৎরে যায় আর কী!!
দ্বিতীয়টা এট্টু কঠিন সিনেমা, কিন্তু প্রথমটা মাস্ট সি। অ্যাসাসিন্স এখনো আমার অত্যন্ত পছন্দের সিনেমা।
ইন দ্য লা্ইন অব ফায়ারে ক্লিন্ট ইস্টউডের তুলনায় খুনী জন মালকোভিচকে বস মনে হৈসে, তাই এইটা ভালো লাগে।
আফনার প্রোফাইল ফটুটা চমৎকার হৈসে 🙂
ইদানিং দেশে যেভাবে গুপ্তহত্যা হচ্ছে, তাতে আমাদের দেশের পরিচালকরাও ছবি বানাতে শুরু করবেন মনে হয়
ভালোই হবে, কি বলেন?
কিছু কিছু শর্ট ফিল্ম তৈরী হয়েছে, হচ্ছে – নাটক, টেলিফিল্মও কিছু হয়েছে দেখছি। সিনেমায় শুরু হলে তো বেশ ভালোই লাগবে। শুরু হোক – জনরা ভিত্তিক সিনেমা চাই 🙂
কোনটাই এখনো দেখিনি 🙁
তবে দেখে ফেলবো শীঘ্রই ………