মুভি রিভিউ: ঘেটুপুত্র কমলা

জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুক্তি পেয়েছে দেশের মাত্র দুটি প্রেক্ষাগৃহে। জীবিত অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ সম্পর্কে দর্শকদের অনুরোধ করেছিলেন তারা যেন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সিনেমাটা দেখতে না যায়। ছবি মুক্তির আগে থেকেই তাই ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ নিয়ে কিছু গুঞ্জন তৈরী হয়। যে সিনেমা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে না দেখার অনুরোধ স্বয়ং পরিচালক করেন সে সিনেমা বর্তমান সমাজে কতটুকু প্রয়োজন এবং এর প্রভাব কি হতে পারে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সকল প্রশ্নের জবাব আর দারুন মানবিকতার এক গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।

ঘেটুগান বা ঘেটুপুত্র বর্তমান প্রজন্মের নিকট বোধগম্য কোন বিষয় নয়। তাই সিনেমার প্রো-লগে পরিচালক ঘেটুগানের পরিচয় তুলে ধরেছেন। প্রায় দেড়শ বছর আগে হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রামে এক বৈষ্ণব আখড়ায় ‘ঘেটুগান’ নামে নতুন এক সংগীতের ধারার প্রচলণ হয়েছিল। অল্পবয়সী কিশোররা মেয়েদের পোশাক পরে নাচগান করতো যাদের বলা হত ‘ঘেটু’। এই ঘেটুরাই একসময় বিকৃতরুচির বিত্তবানদের ভোগলালসায় ব্যবহৃত হওয়া শুরু করেছিল। সময়ের বিবর্তনে বিলুপ্ত এই ঘেটুগান ও ঘেটু এবং এ সংক্রান্ত কদর্য ইতিহাসকে দর্শকের সামনে নিয়ে এসেছে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।

হাওর অঞ্চলের এক জমিদার পানিবন্দী সময়ের শুরুতে নিজ বিনোদনের জন্য নানারকম উদ্যোগ নেন। এ বিনোদনের জন্য যেমন চিত্রশিল্পী আসে, তেমনি আসে ঘেটুদল। ঘেটুর আসল নাম ‘জহির’, ঘেটু নাম ‘কমলা’। পানিবন্দীর তিনমাস সময় জমিদারের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্য আগত কমলার জানা ছিল না, নাচ গান ছাড়াও তাকে অন্য কোন ভূমিকা পালন করতে হবে কিনা। ইতিহাস অনুযায়ী, ঘেটু-দেরকে স্ত্রীরা সতীন হিসেবে গন্য করতো। জমিদার স্ত্রীর পক্ষেও সংসারে ঘেটুর উপস্থিতি সহ্য করা সম্ভব ছিল না। ঘেটুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন তিনি।

ঘেটুগানের প্রচলন দেড়শ বছর আগে শুরু হলেও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ সিনেমায় নির্দিষ্ট কোন সময়কে উপস্থাপন করা হয় নি। ভিক্টোরিয়ার মুখাংকিত রূপার টাকার অস্তিত্ব থেকে বোঝা যায় সময়কাল অন্তত একশ বছর পূর্বেকার। একই ভাবে, হবিগঞ্জ জেলায় ঘেটুগানের উৎপত্তি হলেও সিনেমায় জমিদার কোন অঞ্চলের তা নির্দিষ্ট নয়। সিনেমার সংলাপে কোনভাবেই হবিগঞ্জ অঞ্চল প্রতিফলিত হয় না।

‘ঘেটুপুত্র কমলা’র কাহিনী ঐতিহাসিকভাবে কতটা সত্য তা জানা নেই। তবে বিত্তবানের ভোগ লালসায় ঘেটু-র প্রকাশ্য ব্যবহারকে তখনকার সমাজ কিভাবে মেনে নিয়েছিল কিংবা আদৌ মেনে নিয়েছিল কিনা – তার কোন উত্তর পাওয়া যাবে না এই সিনেমায়। ফলে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ইতিহাসের অংশকে ধারণ করলেও নির্ভর করার মত উপাদানে পরিণত হয় না।

অন্যদিকে, বিরতির আগে কাহিনী ও চিত্রনাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ যে আবেদন তৈরী করেছিলেন তা কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয় বিরতির পরের ঘটনাপ্রবাহে। ঘেটুপুত্রকে হত্যা করার পরিক্ল্পনা বাস্তবায়িত হবার কোন কর্মকান্ড লক্ষ্য করা যায় না দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর অংশে। ফলে কাহিনীতে ফিরে আসার আগে গান আর টুকরা কিছু দৃশ্যে সময় ব্যয়িত হয়। সিনেমার সমাপ্তিতে দর্শককে কিছুটা আশাহত হতে হবে কারণ যে আবেদন নিয়ে ঘেটুপুত্র কমলার গল্প তৈরী হয়েছিল, তা পুরোপুরি তুপ্ত হয় না। অবশ্য এটা পরিচালকের কৌশলও হতে পারে। জীবনের রূঢ় বাস্তবতাকে তিনি ধরতে চেয়েছেন বলেই দর্শকের চাহিদাকে হয়তো উপেক্ষা করে গেছেন।

গল্পের এই সামান্য দুর্বলতা ঢেকে যায় এর নান্দনিক ও বাস্তবসম্মত পরিবেশে উপস্থাপনার কারনে। পুরানো জমিদার বাড়ির উপস্থাপন একে কখনোই মেকি বলে চিহ্নিত করেনি। বেশ কিছু দৃশ্যে পরিচালকের ডিটেইল সংক্রান্ত মুন্সিয়ানার পরিচয় স্পষ্ট। কিছু দৃশ্যে রূপক এবং আলোছায়ার ব্যবহার দর্শকমনে স্মরনীয় হয়ে থাকবে। সিনেমার গানগুলো শ্রুতিমধুর, দৃশ্যায়ন ছিল চমৎকার। কিন্তু ‘যমুনার জল দেখতে কালো’ গানের সংগীত ও উপস্থাপন প্রকৃত ঘেটুগানের স্বরূপ চিহ্নিত করতে অসহযোগিতা করে।

জমিদার চরিত্রে তারিক আনাম খান বেশ সাবলীল এবং অত্যন্ত মাপা অভিনয় করেছেন। জমিদার স্ত্রী চরিত্রে মুনমুন আহমেদ, কমলার পিতা চরিত্রে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ড্যান্স মাস্টার চরিত্রে প্রাণ রায় – প্রত্যেকেই বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। সে তুলনায় ঘেটু-র মা চরিত্রে তমালিকা কর্মকারের অভিনয় ছিল অনেক বেশী জড়তাপূর্ন, মেকি। কমলা চরিত্রের মামুন স্বাভাবিকভাবেই বেশ মানিয়ে অভিনয় করেছে। অগভীর চরিত্র চিত্রশিল্পীর ভূমিকায় সংগীত শিল্পী আগুন তুলনামূলক ভাবে ভালো অভিনয় করেছেন।

সব মিলিয়ে ঘেটুপুত্র কমলা কেমন ছবি? ভালো ছবি। শিশু নির্যাতন এবং মানুষের বিকৃত মানসিকতার বিরুদ্ধে অসম্ভব আবেদনময় এবং সময় উপযোগী একটি সিনেমা। গুনী এই নির্মাতার মৃত্যুতে এ ধরনের বক্তব্য নির্ভর ভালো ছবি নির্মান যেন বন্ধ হয়ে না যায় সেই কামনা করি।

এক নজরে ঘেটুপুত্র কমলা

কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনা: হুমায়ূন আহমেদ
অভিনয়ে: তারিক আনাম খান, মুনমুন আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, প্রাণ রায়, আগুন, মামুন
রেটিং: ৪.৫/৫

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

75 Comments on “মুভি রিভিউ: ঘেটুপুত্র কমলা”

  1. দারুণ রিভিউ দিলেন…….২/৩দিনের মাঝেই দেখে ফেলবো……আপনার লেখা পড়ে প্রমাণ পেলাম এতদিন বাজারে যেসব গুজব ছড়িয়েছিলো সেগুলো আসলেই ফালতু টাইপের গুজব ছিলো……….

    1. ধন্যবাদ নাফিজ।
      বাজারে যা ছড়িয়েছে তা ঠিক গুজব না, এক ধরনের আশংকা। পুরোপুরি না জেনেই এ ধরনের লেখা তৈরী করা এক ধরনের অপরাধের পর্যায়ে পড়ে বলে মনে করি। হুমায়ূন আহমেদ বলেই এ বিষয়ে আমার আশংকা কম ছিল। কিন্তু অন্য কোন পরিচালক হলে আমি আশংকামুক্ত থাকতাম কিনা সেটা নিশ্চিত নয়।
      ভালো থাকুন। আবার আসবেন 🙂

  2. আগেভাগে বলে নেই >>>>
    প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের “ঘেঁটুপুত্র কমলা” সিনেমাটি দেখে যারা ‘পাছায় জ্বলুনি’ অনুভব করবেন,

    তাদের জ্বলুনি নিবারণে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে জানাই – “মোস্ট ওয়েলকাম”

    বি.দ্রঃ পাছায় জ্বলুনি নিয়া সিনেমা দেখবেন আবার ফেসবুকে ও ব্লগে বলবেন বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও ইসলামি মূল্যবোধ রসাতলে গেল। এই সব বক্কর চক্কর চলবে না >:

    ** দারাশিকো আপনাকে নয়, বরং না দেখে/ বুঝে যারা সমালোচনা করে তাদের উদ্দেশ্য করে বললাম। ভালো লিখেছেন। বরাবরের মত ছক্কা 🙂

    1. স্বাগতম রনি 🙂
      আপনার এই মন্তব্যটা আগেই দেখেছি। ব্ড্ড কড়া বলেছেন।

      ভালো থাকবেন। আবার আসবেন 🙂

  3. চমৎকার রিভিউ!
    সুযোগ পেলেই দেখে ফেলবো।

  4. শৈল্পিক দৃষ্টিকোন থেকে কিভাবে দেখবেন? মানে আর্ট ধারার কিনা

    1. শৈল্পিক দিক থেকে এই সিনেমা অবশ্যই খুব ভালো শিল্প। যত্নের ছাপ পাওয়া যায়। এই সিনেমাকেই আর্ট ফিল্ম হিসেবে চিহ্নিত করবে সবাই। আমি অবশ্য করি না। কারণ সিনেমার মধ্যে আমি আর্ট আর কমার্শিয়াল বাছাই করি না।

      সিনেমায় প্রচলিত কমার্শিয়াল ম্যাটারিয়াল এই সিনেমায় অনুপস্থিত। কিন্তু নির্বোধ কিছু দর্শক মামুনের পোশাক পরিবর্তনের দৃশ্য দেখলেও সিটি বাজায়। এদেশের দর্শককে আরও শিক্ষিত হতে হবে বলে মনে করি।

  5. দারুণ রিভিউ , সিনেমাটাও বেশ । জমিদার কন্যার অভিনয়টাও ভালো ছিল। এডিটিং টা একটু দুর্বল মনে হইছে। কমলার ফ্লাশব্যাকের সিনগুলাও মনে হয় আরেকটু ভাল করা যাইত। তবে গরুর মাংসের সিন টা সেইরকম লাগছে। 🙂

    1. স্বাগতম তাইফ সাহেদ। জমিদারের মেয়ে সত্যিই ভালো অভিনয় করেছে। একে হারাতে দেয়া যাবে না। গরুর মাংসের সিনটা সত্যিই সেরকম। তবে আমি সবচে বেশি চমকিত – প্রথম দিকে কমলা যখন নাচঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে, দরজার পাশে হা করা একটা ভয়ংকর কালো চিতার মূর্তি। আর অবশ্যই ছাদের কার্ণিশে একটা চলন্ত ছায়ার পেছনে দুই হাত তুলে তাড়া করছে আরেকটা ছায়া – দুর্দান্ত।

      ভালো থাকবেন। আবারও আসবেন সাহেদ 🙂

      1. ধন্যবাদ। বহুদিন ধরেই চুপিচুপি, বিনা আমন্ত্রণেই আপনার লেখা পড়ে আসছি। মাঝে মাঝে অবশ্য লাইক বাটন টা ব্যবহার করি। কালো চিতার দৃশ্যটা আসলেই দুর্দান্ত ছিল। ছায়ার দৃশ্যটা মিস করে গেছি, এখনো কাঁচা-ত। আপনিও ভালো থাকবেন।

        1. কাচা পাকা নারে ভাই। আমি সিনেমায় ডুব দিই না বোধহয়, এজন্য চোখে পড়ে গেছে 🙂
          ভালো থাকুন সবসময় 🙂

  6. শৌল্পিক ছবি, শৌল্পিক রিভিউ 🙂

    1. প্রশংসা করতে গিয়া বানান ভুল কৈরা ফেলছেন।
      প্রশংসা বন্ধ করেন, বানান ঠিক হয়ে যাবে 🙂

  7. দেখার ইচ্ছা পোষণ করি। রিভিউ পরে আগ্রহ দৃঢ় হলো। ধন্যবাদ সুন্দর রিভিউর জন্য দারাশিকো ভাই। 🙂

    1. ধন্যবাদ ইউসুফ খান 🙂
      খুব দ্রুত দেখে ফেলুন। লম্বা লাইন লেগে যাচ্ছে টিকিটের জন্য, হাহাকার শোনা যায় 😉

    1. দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম 🙂
      একটু দেরী হবে হয়তো। ততদিন ধৈর্য্য ধরতে হবে।
      ভালো থাকবেন। আবারও আসবেন 😉

  8. হুমায়ূনের আহমেদ মুভি মিস করিনা। এটাও দেখবো। লেখার ইচ্ছেও আছে।

  9. আপনার রিভিউ এর বরাবর ই ভক্ত। কারণ আপনি চলচ্চিত্রের নেগেটিভের তুলনায় পজেটিভ দিক গুলো বেশি করে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। যা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য ভাল। কারণ নেগেটিভ রিভিউ লেখার মত অবস্থা বাংলা চলচ্চিত্রে এখনো আসে নি।
    রিভিউ স্বম্পরকে চলচ্চিত্রটি দেখা হয় নি তাই মন্তব্য করতে পারছি না। তবে এই পর্যন্ত অনেক গুলো রিভিউ পড়লাম ঘেঁটুপুত্র কমলা নিয়ে । তাতে মনে হল চলচ্চিত্রটি ভাল হয়েছে। আর হুমায়ুন আহমেদের প্রতি আস্থা আছে। উনি দর্শকদের আশাহত করেন না বলেই মনে করি।

    1. খুব বিশ্লেষন করলে এই সিনেমাটার অনেক খুঁত আছে। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে কাহিনী অনেকটাই ফ্ল্যাট হয়ে গেছে।
      সিনেমার গ্রুপগুলোয় ঘুরলে ইন্ডোর লাইটিং নিয়ে অভিযোগ পাবেন। অ্যামবিয়েন্স সাউন্ড নিয়েও পাবেন। কিন্তু এগুলো খুব বেশী দর্শকের চোখে লাগবে না – তাই সিনেমাটা অবশ্যই ভালো সিনেমা।

      দ্রুত দেখে ফেলুন। সবার সাথে বসে সিনেমা দেখার আনন্দও আলাদা। ভালো থাকুন তানভীর খালেদ 🙂

  10. ভালো রিভিউ । আপনি যা লেখেন বরাবরের মত । মুভিটা দেখবো নেটে আসুক ।

  11. exam er bajna bajtese.abar shorir tao bises valo na.dekte parbo kina bujhtesi na.
    review ta poira ek dhoroner tripti onuvob korlam.

  12. সুন্দর লিখেছেন
    দেখার ইচ্ছা আছে , শত হইলেও হুমায়ুন বাবা’র শেষ সিনেমা বলে কথা :p

  13. ভাই আপনার রিভিও বরাবরই ভাল লাগে। কিন্তু এটা না বলে আমরা কেবল মুভি নিয়া আলোচনা করলেই ভাল মনে করি তাই আপনাকে প্রশংশা করা হয় না।

  14. ধুর……………………। ভাই যাওয়ার সময় জিগাইলেন ও না যামু কি না :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( :'( এখন তো দেখতে ইচ্ছা করতেসে !!!!!!!!!!!!!!! রিভিউ ভাল হইসে । গুড !!!!!!!!!!!!!!!

    1. আগে থেকে বুকিং না দিলে ক্যান জিগামু ?

      কান্নাকাটি বন্দ্। পোস্ট ভিজে ন্যাতা ন্যাতা হয়ে গেছে। পোস্টে প্যাম্পার পড়াই নাই 🙁

    1. দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম ধলা মানুষ এবং ধন্যবাদ।

      সিরিয়াল লেগে গেছে – প্ল্যান করে দেখে ফেলুন। 🙂

      আবার আসবেন 🙂

  15. Dude, I am awe inspired with your sugar coated review of the docufiction (yes, I don’t feel like calling it a film at all). Except the acting, everything about this production is a big, fat failure. Very poor screenplay and terrible cinematography were the menace. There were characters leaving you wondering their need in the first place.
    Period movies should try to be true to their props and setting which was highly lacking in this production. Agun drawing Nawab’s pencil sketch with a stedlar pencil or the horse man wearing a three-quarter with latest cut were only a few of many faux-pax.
    The worst part was sound editing and the way they used all modern instruments in songs was really funny.
    This can be regarded as a very good example of spoiling the scope of making a good movie with a good concept with a good budget.

  16. দারাশিকো ভাই চমৎকার রিভিউ দিয়েছেন। আমি এখন ওয়েটিং লাইনে আছি। ঠিকই বলেছেন, সিরিয়াল দিন দিন লম্বা হচ্ছে !

    1. ভাইয়া, কুইক যান। গরম গরম সিনেমা দেখার মজাই আলাদা।
      ভাবীকে নিয়ে যাইয়েন। (চাচ্চুকে নেয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতেসি না 🙁 )

  17. আমার ছবিটি দেখে আফসোসই হয়েছে বেশি….এমন মসলা ছিল ছবিতে কিন্তু তার আড়ম্বরপূর্ণ ও সিনেমেটিক উপস্থাপন হয়নি বললেই চলে……দারিদ্র্যতার ছাপ ছিল সুস্পষ্ট।
    পরিবেশ ও পরিস্থিতি, তখনকার সমাজ ও জমিদারদের আলিশান জীবন-যাপনের টুকরো চিত্র এসেছে মাত্র …….আরো ঝামেলার বিষয় হল, এই ছবি দেখে কোনোভাবেই আমি ১০০ বছর আগের সময়ে যেতে পারিনি…..

    1. স্বাগতম মোস্তাফিজ।
      আপনি যা বলেছেন তা মানছি। জমিদারদের আলিশান জীবন যাপন সত্যিই ভালো ভাবে ফুটে উঠেনি। তবে আরও ভালোভাবে তুলে ধরার জন্য আরও বড় বাজেট প্রয়োজন ছিল, সম্ভবত পরিচালকের তা ছিল না।
      যদি তাই হয়, তবে সীমাবদ্ধতার মাঝেও বেশ ভালো ভাবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তুলনামূলকভাবে বেশ অনেকটা রিপ্রেজেন্ট করে। আর হ্যা, বাংলাদেশের সিনেমায় এখনো এত আশা করার মত পরিবেশও তৈরী হয় নি বোধহয়। 🙂
      ভালো থাকবেন। আবারও আসবেন। 🙂

  18. ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ নিয়ে সম্প্রতি যে আগ্রহ দৃশ্যমান, আমিও এর বাইরে নই । প্রথমত হুমায়ুন আহমেদের সিনেমা, দ্বিতীয়ত মৃত্যুর আগে হুমায়ুন নিজেই বাচ্চাদের নিয়ে সিনেমাটি দেখতে বারন করেছেন । আর তৃতীয় কারনটি রক্ষনশীলদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া । সিনেমাটি নিয়ে মনে একটু সংশয় ছিল, কিন্তু রিভিউ পড়ে সেটা দূর হয়েছে । যেকোন সামাজিক সংকটকে দর্শকের সামনে ঠিকমত উপস্থাপন করতে পারলে দর্শকের সেটা গ্রহন করতে আপত্তি থাকেনা । রিভিউ পড়ে যেটা বুঝলাম, হুমায়ুন তা মুন্সীয়ানার সাথেই করতে পেরেছেন ।

    জলসুকা গ্রামটি আমার গ্রাম বানিয়াচং থেকে মাত্র ছয় মাইল দুরে । আমার মায়ের নানাবাড়ি এই গ্রামে হওয়ার সুবাদে অনেকবারই গিয়েছি । এখনও কয়েকটি জমিদার বাড়ি সেখানে ম্রিয়মান শান-শওকত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । ঘেটুগান জলসুকা গ্রামে উৎপত্তি হলেও তা যে দ্রুতই পুরো হাওর অন্চলে (হবিগন্জ, সুনামগন্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগন্জের ভাটি অন্চল) জনপ্রিয় হয়ে উঠে অনুমান করা যায় । এই অন্চলের প্রকৃতিই এমন, বর্ষায় চার মাস মানুষ পানিবন্দী থাকে । টুকটাক মাছ ধরা ছাড়া আর কোন কাজও থাকেনা । তাই এখানকার মানুষ যুগ যুগ ধরে এই সময়টা পার করে নিজস্ব কিছু বিনোদন দিয়ে । ঘেটুগান এই এলাকার সকল শ্রেনীর মানুষের কাছেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় । এই গানের কেন্দ্রে থাকে একটি বালক, যে মেয়ে সেজে অভিনয় আর গান করে । গানের কথা আর গীতবর্ননায় প্রচুর আদিরসের ইংগীত থাকে, দর্শকেরা এতে আপ্লুত হয় । আমি যখন ছোট ছিলাম(আশি’র দশকে), তখনও মাঝরাতে পাশের কোন পাড়া থেকে ভেসে আসত ঘেটুগানের সমন্বিত সুর । সারারাত ধরে চলত এই গনবিনোদন । কড়া নিষেধ থাকায় আমি নিজে কখনো সরাসরি ঘেটুগান দেখিনি, কিন্তু গ্রামের অনেকের মুখেই শুনতাম জনপ্রিয় গানগুলোর(আদি রসে ভরপুর) অংশবিশেষ ।

    যাক, ধান ভানতে শীবের গীত অনেক গাইলাম । কি করব বলুন, ছবিটাতো এখনও দেখিনি । তাই ছবি নিয়ে কিছু বলার নাই । রিভিউ পড়ে ঘেটুপুত্র কমলা দেখার আগ্রহটা অনেকটুকু বেড়ে গেল আর কি ।

    1. একটু দেরী হয়ে গেল উত্তর দেয়ায়। দু:খিত মামুন রশিদ।

      সিনেমাটা দেখার আগে আমারও আশংকা ছিল – কিন্তু দেখার পর বুঝলাম অবশ্যই এটা খুব ভালো একটা বক্তব্য নিয়ে এসেছে। সমকামিতা বলতে কিছুই এখানে নেই, আছে শিশুগামিতা, এবং তা কখনোই সমর্থনমূলক নয়। বরং আমি মনে করছি এই সিনেমা দেখার পর – শিশুগামিতার এই নোংরা বিকৃত পন্থার বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃনা তৈরী হবে।

      সিনেমাটা দেখে ফেলুন। যেহেতু এলাকার সাথে পরিচিত, তাই আপনি হয়তো আরও অনেক বেশী একত্ম হতে পারবেন, হয়তো অনেক বেশী ভুলগুলো ধরতে পারবেন।
      দেখার পর জানিয়ে যাওয়ার আহবান থাকল। ভালো থাকবেন। আবারও আসবেন। ধন্যবাদ 🙂

  19. মুভিটি আমার ভালো লেগেছে। কম বাজেট আর শারীরিক অসুস্থতা এই দুটি কে অগ্রাহ্য করে যেই মুভিটি পরিচালক তুলে এনেছেন তা অবশ্যই প্রশংসা পাবার দাবিদার। আর কালো চিতার অংশ , ছায়ার খেলা এই রুপকের কাজগুলোও অনেক ভালো ছিলো। সব মিলিয়ে উপভোগ্য। রিভিউ ভালো লাগলো।

  20. ভালো লিখিয়াছো 🙂 জমিদার কন্যাকে লইয়া কিছু লিখিলে না কেন? কন্যা অতি সুন্দর অভিনয় করিয়াছে! তাহাকে গড়াইয়া নিতে পারিলে একজন পাকা অভিনেত্রী হইতে পারিবে 🙂 চিত্রকারের চরিত্রটির বিশেষ দরকার বোধ করি নাই। তবে এতো অনাদরের মাঝেও কেউ একজন তাহাকে ভালো ভাবে দেখে- এমন চরিত্রটিকে আরো একটু গুরুত্ব দিতে পারিত বলিয়া মনে করি।

    যাই হোক, সর্বোপরি চলচিত্রটি ভালো লাগিয়াছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি যেন শেষ হইয়া গেলো 🙁 আশা করি ভবিষ্যতে এইরুপ আরো ভালো চিত্র তৈয়ার হইবে। ভালো থাকিয়ো 🙂

    1. সাধু ভাষার উত্তর সাধু ভাষায়ই দেয়া উচিত, কিন্তু আমি অনভিজ্ঞ ধ(

      দুইটা চরিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ন হওয়া সত্ত্বেও আমার রিভিউতে আসে নাই, অনিচ্ছাকৃত ভুল। এক, জমিদারের কন্যা, দুই, সহিস। দুইটা চরিত্রই গুরুত্বপূর্ন।

      তবে সিনেমাটা আরও আগে শেষ হওয়া উচিত ছিল অথবা আরও ঘটনাপ্রবাহের সাথে লম্বা হইতে পারতো – এইটা আমার মত।

      ভালো থাকবেন, মনে করে এয়েচেন, এইজন্য ধন্যবাদ। আবারও আইসেন (বেশী বেশী) 🙂

  21. আজ দেখলাম। পজিটিভ সাইড ই বেশি চোখে পড়ল। খুব সম্ভব আমি গান গুলোয় একটু বেশি মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম!

  22. ছবিটা এই মাত্র দেখলাম । আমার কাছে একটা ব্যাপার কেমন-কেমন যেনো লাগল…বুঝতে পারছি না এটা আমার চোখের ভুল কি না…দারাশিকো ভাই, বুঝতে পারলে জানাবেন দয়া করে যে…কোন কোন দৃশ্যে কি শিশু শিল্পি মামুনের বদলে অন্য কাউকে(আমার মনে হয়েছে অহনা) দেখানোর হয়েছে ???

    1. দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম কালো পিপড়া 🙂
      আপনি কোথায় দেখেছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনি কি দেখেছেন। টিভি ভর্সনে নাকি প্রায় পনেরো মিনিট কম আছে। তারা রিপ্লেসও করতে পারে কোন কারেক্টারকে।
      তবে আমার কোথাও মনে হয় নি মামুনের বদলে অন্য কাউকে দেখানো হয়েছে।
      কোন দৃশ্যে মনে হয়েছে বলবেন কি?
      ভালো থাকুন, আবারও আসবেন। 🙂

  23. গানগুলো ভালো লেগেছে। কিছু কিছু দৃশ্য চমৎকার ছিল। তাবলিগ জামায়াত স্টাইলের খাওয়া-দাওয়া খুব লোভনীয় ছিল।
    কিন্তু ফিনিশিং একদম ভালো লাগেনি। এমনও হতে পারে যে হয়তো ওটা আমার বোঝার আয়ত্তে ছিলনা।
    কিন্তু ভাই, আমার কাছে মনে হয়েছে যে হুমায়ূন স্যার পুরো পরিচালনা একা না করে সাথে ভালো কাউকে নিলে আরও ভালো হত। ওনার প্রথম দিককার কাজগুলো উনি হয় অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন, অথবা আরেকজনের সহযোগিতা নিয়ে করেছেন। কেন যেন মনে হয় একারণেই ওনার প্রথম দিকের কাজগুলো বেশি মনে রেখেছে মানুষ। যদিও আমি নিশ্চিত না। অন্তত আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি যে ওনার আগেকার কাজগুলো বারবার দেখতেও ভালো লাগে। কিন্তু ঘেটুপুত্র আমার দ্বিতীয়বার দেখার ইচ্ছা নাই। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।

    1. দারাশিকো’র স্বাগতম তারিফ শেরহান।
      আপনার মতামতটা ভালো লাগল। তবে বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে। তার আগের কাজগুলো অন্যকে দিয়ে করিয়েছেন বা আরেকজনের সহায়তা নিয়ে করেছেন – ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক ক্লিয়ার না। আমি তো জানতাম তার কাজগুলো তারই পরিচালনা, এবং তার কিছু উপন্যাস থেকে তৈরী কাজগুলো অন্যদের করা, সেখানে তার ভূমিকা নেই বললেই চলে। সত্যিটা কি? একটু সাহায্য করবেন প্লিজ।
      আশা করছি তারপর বলতে পারবো 🙂

      1. আমি খুবই দুঃখিত যে আমি অনেক দিন পর রিপ্লাই দিচ্ছি। আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ মনে হতেই এই পেজটা থেকে আপনার মন্তব্যটা পড়লাম।
        প্রথমেই বলে নেই যে আমি কাজ বলতে তাঁর নাটক-সিনেমা দুটিকেই বুঝিয়েছি। হুমায়ূন আহমেদ শুরুতে নিজে পরিচালনা করতেন না। সমস্যা হচ্ছে আমি আপনাকে কোন রেফারেন্স দিতে পারছিনা কারণ আমার এসব কম মনে থাকে। স্যারের মৃত্যুর পর ওনার প্রথম দিককার প্রযোজকদের কয়েকটা সাক্ষাৎকার পড়ে আমি ব্যপারটা জানতে পারি। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ তৈরির সময় একজন পরিচালক ওনার সাথে সবসময় ছিলেন। ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকটির পরিচালকও উনি নিজে ছিলেন না। আমি নিশ্চিত না তবে তাঁর ‘এলেবেলে’ বই দুটোতেও এ ব্যপারে কিছু থাকতে পারে। অনেকদিন আগে পড়েছি তাই পুরোপুরি মনে করতে পারছি না। আপনি যেহেতু এই লাইনে অনেক জানেন আপনি একটু খোঁজ নিলেই বিস্তারিত জানতে পারবেন। আমাদেরও বিস্তারিত জানালে খুব খুশি হতাম।
        আর আমার আপনার কাছে একটা প্রশ্ন আছে। সাধারণ দর্শক হিসেবে আমার মনে হয়েছে ওনার প্রথম দিককার কাজগুলো বেশি ভালো ছিল। শেষের দিকের কাজগুলো অমন মনে হয়নি। আমি একটা সম্ভাব্য কারণ আগেই বলেছি। আপনি দয়া করে একটু আপনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করবেন কি?
        শুভকামনা রইলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *