
মাঝে কিছুদিন বেশ পরিমানে রেডিও শোনা হয়েছিল। বাংলাদেশ বেতারের রমরমা যুগ শেষ হয়েছে সেই কবে। এখন রেডিও শোনা মানে হলো এফএম শোনা। এফএম রেডিও মানে গান শোনা। ডিজুস কিংবা গ্রামীনফোনের বিজ্ঞাপন কিংবা আরজেদের বকবক শুরু হওয়া মাত্রই এক ক্লিকে পরের চ্যানেলে, যদি সেখানেও একই অবস্থা হয় তো পরের চ্যানেলে – কোন না কোনটাতে গান চলতে থাকেই, আমিও মন না দিয়ে শুনি।
এরকমই কোন একদিন গানটা শোনা হয়েছিল;
‘আর আমি আমি জানি জানি চোরাবালি কতখানি গিলেছে আমাদের রোজ/
আর আমি আমি জানি প্রতি রাতে হয়রানি , হারানো শব্দের খোঁজ’।
গানের কথা যতটা নয় তার চেয়ে সংগীত আকৃষ্ট করেছিল বেশী আর তাই খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম ‘অটোগ্রাফে’র নাম, কিছু জানার পরে আগ্রহটা চেপে বসলো। আগ্রহের পরিসমাপ্তি ডাউনলোড পরবর্তী সিনেমাদর্শনের মাধ্যমে। এখানে টরেন্ট থেকে মুভিটা ডাউনলোড করতে পারেন।
সত্যজিৎ রায়কে গুরু মানে এমন এক তরুন তার প্রথম চলচ্চিত্রটি নির্মান করতে চান সত্যজিৎ এর ‘নায়ক’ রিমেক করে। মূল চরিত্রে তিনি নির্বাচন করেছেন ইন্ডাস্ট্রির সবচে’ সফল নায়ক তরুন চ্যাটার্জীকে। তরুন চ্যাটার্জী যার নামে কিনা ইন্ডাস্ট্রি চলে তার ইচ্ছাতেই চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগটা মিলে গেল। প্রযোজনাটাও করবেন তরুন চ্যাটার্জী। এভাবেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে পড়লো শুভব্রত মিত্র। নির্মিতব্য চলচ্চিত্রটির নাম ‘আজকের নায়ক’। নায়ক চরিত্রে তরুন চ্যাটার্জী, আর নায়িকার চরিত্রে শুভব্রতের লিভিং পার্টনার শ্রীনন্দিতা। সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে তরুন চ্যাটার্জী আর শ্রীনন্দিতার মাঝে এক নতুন সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। তরুন চ্যাটার্জী শ্রীনন্দিতার অনুরক্ত হয়ে পড়ে। শুটিং শেষে শুভব্রত মিত্র সিনেমার প্রমোশনের জন্য তরুন চ্যাটার্জীর একটি ব্যক্তিগত স্ক্যান্ডালকে মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসে। ইন্ডাস্ট্রিতে সফলভাবেই ঢুকে পড়ে শুভব্রত মিত্র, কিন্তু হারাতে হয় লিভিং পার্টনার শ্রীনন্দিতাকে।
সংক্ষেপে এই হলো চলচ্চিত্রটির কাহিনী। শ্রীজিত মুখার্জির প্রথম পরিচালনা। মুখার্জি এর আগে বেশ ক’টি সিনেমার সাথে সহকারী পরিচালনা থেকে শুরু করে গান লিখা পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন। প্রথম সিনেমায় মাত করে দেয়ার চেষ্টা সবার থাকেই। শুভব্রতের ছিল, শ্রীজিতের ও। শুভব্রত সফল হতে পারেনি, কিন্তু শ্রীজিত পেরেছে। সিনেমার ভেতরেই সিনেমা বানানোর গল্প – ধারনা হিসাবে নতুন নয়। কিন্তু শ্রীজিত মুখার্জি নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন গল্প বলার ঢঙ-এ, সিনেমাটোগ্রাফিতে। চমৎকার ফটোগ্রাফি, দারুন লোকেশন, মিউজিক-লিরিক অসাধারণ। গানের লিরিক লিখেছেন কবি শ্রীজাত। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন দেবজ্যোতি মিশ্র। চলচ্চিত্রটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘নায়ক’ (১৯৬৬ সাল) চলচ্চিত্রের পরিচালক সত্যজিৎ রায় এবং ‘নায়ক’ উত্তমকুমার’কে ।
অভিনয়ের জন্য তরুন চ্যাটার্জি চরিত্রে সত্যিকারের টালিউড হিরো প্রসেনজিত চ্যাটার্জী। সস্তাদরের অভিনয় থেকে শুরু করে উচু দরের অভিনয় প্রসেনজিত করেন দক্ষতার সাথে। পরিচালক শুভব্রত চরিত্রে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। শ্রীনন্দিতা চরিত্রে ছিল নন্দনা সেন। নোবেল বিজয়ী অর্মত্য সেন এর কন্যা। এই চরিত্রটিকে আমার কাছে সামঞ্জস্যপূর্ন মনে হয় নি। তার জায়গায় কোয়েল মল্লিক কিংবা রিয়া সেন হলে যেন ভালো মানাতো। বিশেষ করে নন্দনার এক্সপ্রেশনে অনেক ঘাটতি দেখা যায়।
অটোগ্রাফে সামজিক যে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে তা হলো লিভিং টুগেদার। নায়ক শুভব্রতের বন্ধুর ভাষায় – সামথিঙ ইজ মিসিং। লিভিং টুগেদারে মিসিং থাকা এই সামথিং টা কি? পারস্পরিক আস্থা? নাকি প্রচলিত সামাজিক্ সম্পর্কের মধ্যে তৈরি হওয়া বাধ্যবাধকতা? নাকি এই মিসিং হবার যাতনা আধুনিক সমাজের দুঃখবিলাসের বুদবুদ? এই জিনিস হলিউডের সিনেমায়ও ঢের দেখা মেলে। এখন নতুন রমরমা অর্থনীতিতে বৃদ্ধি পাওয়া মহানগরী কলকাতায় এই সব প্রশ্ন হাজির। কিন্তু পুঁজির ধর্মে গোপন বলে কিছু থাকে না। না সম্পর্ক না গোপন ভিডিও। সবই তার মার্কেট প্রমোশনের- আত্মস্ফীতির হাতিয়ার।
সে যা-হোক, এই সামথিং ইজ মিসিং কাহিনীর মধ্যেই অটোগ্রাফ মাধ্যমে কলকাতার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সফল পরিচালক হিসেবে শ্রীজিতের যাত্রা শুরু হয়ে গেল। এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক এই শুভকামনা।
রাজনৈতিক-সম্পাদিত এবং প্রকাশিত
‘autograph’amar o dekha hoeche chobiti,sohoj kothai valo legeche,apnar lekhar satheo ami akmot,tobe kisu bisoy chobite ache jeta na bolleo noy,jemon dhorun manuser onek boro hoye jabar por tar otit vule jawa ba chobir sese jeta dekhano hoeche,je jibone joto boroi ghotona ghotuk jibon kintu theme thakena,tai to orun chaterjee ba shree nandita ba shuvo sobai ato dhakka khabar por o abar o poth cholte shuru kore….tobe chobir majkhane rupok orthe kisu voutik ba kalponik kisu drissher obotarona kora hoeche…ja ar o valo ba sposto hote parto…shadharon dorshokder jonno sei drisso gulote golpo bujte aktu bod hoy somossa hoyar kotha…..ta jai hok sob miliye valo cinema…..
Thanks Sumon for your comment. I agree what you said, I did noticed these things but overlooked in my writing, it shouldn’t be. I ll try my best in future iA.
Inviting you again in my blog 🙂
সুন্দর লিখেছেন।
শুকরিয়া ইচ্ছামানুষ। আবার আসবেন 🙂
খুব ভালো লাগলো।
গানগুলো সুন্দর
দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম সাকা। আবারও আসবেন 🙂
ভাল লাগলো রিভিউ।
++++++++
এই প্রথম কারো ব্যক্তিগত ব্লগ স্পটে মন্তব্য করলাম। 🙂
দারাশিকো’র ব্লগে ওয়েল্কাম শিপু ভাই 🙂 🙂
অনেক ভালো লাগল আপনার মন্তব্য পেয়ে – ব্যক্তিগত ব্লগসাইটে প্রথম কমেন্ট পাওয়ার অধিকারী দেখে ফিলিঙ ব্লেসড :):)
আবার আসবেন শিপু ভাই – পিচ্চিকেও নিয়ে আসবেন 🙂 🙂
আমার তো মনে হয় বিয়ে-তেই “সামথিং ইজ মিসিং”! কারন, প্রণয়-এর পরিণতি হল “পরিনয়”! বিয়ে ইজ দি এন্ড অফ লাভস্টোরি! হা হা হা
দারাশিকো’র ব্লগে সুস্বাগতম স্মৃতিলেখা চক্রবর্ত্তী। মনে হচ্ছে আপনি কোলকাতা নিবাসী- ভাবতেই ভালো লাগছে। কতদূর থেকে উড়ে চলে এলেন এখানে 😀
ভালো থাকুন। আবারও আসার নিমন্ত্রন রইল 🙂