একটা সিনেমা দেখার পর একটু সময় নিয়ে চিন্তা করতে হয়। চিন্তার গতি প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। এর মাঝে – নির্মাতা কেন এরকম একটি চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন – সেই ভাবনাটা একটু বেশী গুরুত্ব পায় আমার কাছে। সব চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবতে হয় না – কিছু চলচ্চিত্রে ভাবনার কোন বিষয়ই থাকে না; কিছু চলচ্চিত্র নির্মাতার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলে, নির্মাতার উদ্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে সেক্ষেত্রে।
ওপেন রেঞ্জ সিনেমায় নির্মাতার উদ্দেশ্য মোটাদাগে খুব স্পষ্ট নয়, ফলে সিনেমা সম্পর্কে সামান্য চিন্তা ভাবনা করার অবকাশ পাওয়া যায়। সে ভাবনা থেকে সিদ্ধান্তে আসা গেল – কতগুলো মানুষের আদর্শগত সিদ্ধান্ত ও অবস্থানকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই সিনেমায়। হয়তো দুইশত বছর আগের সময়কে তুলে ধরে বর্তমান সময়ের মানুষকে কিছু বলা নির্মাতা কেভিন কস্টনারের উদ্দেশ্য ছিল।
কেভিন কস্টনারের ওয়েস্টার্ন
অভিনেতা কেভিন কস্টনারের ওয়াটারওয়ার্ল্ড বেশিরভাগ দর্শকের পছন্দ হলেও আমার কাছে সেরা হলো দ্য আনটাচেবলস। জেএফকে সিনেমায়ও কেভিন কস্টনার অনবদ্য অভিনয় করেছেন। মূলত এই অভিনয়ের কারণেই তার অভিনীত ওয়েস্টার্ন সিনেমাগুলো দেখা শুরু করেছিলাম। আমার দৃষ্টিতে কেভিন কস্টনার অভিনীত সেরা ওয়েস্টার্ন সিনেমা হলো ওয়াইট আর্প (ছোট্ট একটা পোস্ট আছে সিনেমাটা নিয়ে, পড়তে পারেন এখানে)। আপনারা হয়তো সিলভারাডো-কেও পছন্দ করবেন।
পরিচালক হিসেবে কেভিন কস্টনারের সাথে পরিচয়হয়েছে পরে, কস্টনারের প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘ড্যান্সেস উইথ ওলভস’ এর মাধ্যমে। গতানুগতিকের বাইরের ওয়েস্টার্ন এবং এরকম অসাধারণ ওয়েস্টার্ন সিনেমা খুব কমই দেখা হয়েছে। ওপেন রেঞ্জও তার পরিচালনা। ওয়েস্টার্ন সিনেমার একটি ভিন্ন রূপ চিত্রায়িত করেছেন কেভিন কস্টনার – ড্যান্সেস উইথ ওলভস এবং আলোচ্য সিনেমায়।
ওপেন রেঞ্জ
ওপেন রেঞ্জ সিনেমার গল্প শুরু হয় চারজন ক্যাটলমেনের একটি দলকে দিয়ে, তাদের দুজন বয়স্ক, একজন যুবক, অন্যজন কিশোর। তারা ওপেন রেঞ্জারস, গরুর পাল নিয়ে খোলা জমিতে ঘুরে বেড়ায় তারা, পরিশ্রমী নির্বিবাদ নিঃসঙ্গ জীবন তাদের। ডেন্টন ব্যক্সটার নামে আধিপত্যবাদী এক র্যাঞ্চার – যুবক মোজ-কে হত্যা করে, কিশোর বাটনকে গুলি করে ফেলে রেখে যায়।
ঠিক প্রতিশোধ নয়, বরং ব্যাক্সটার এবং তার দলকে শায়েস্তা করার জন্য দায়িত্বশীল বয়স্ক দুজন, বস স্পিয়ারম্যান এবং তার দশ বছরের সঙ্গী কর্মচারী চার্লি ওয়েইট, শহরে আসে। ফলে সব কিছু ছাপিয়ে তাদের লালিত মূল্যবোধই স্পষ্ট হয়ে ওঠে ছবিতে। দুশো বছর পরে কি এই মূল্যবোধের কোন ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়?

অথেনটিক ওয়েস্টার্ন
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ওপেন রেঞ্জ-কে অথেনটিক ওয়েস্টার্ণ সিনেমা বলা হচ্ছে। দুশো বছর আগের সত্যিকার জীবনযাত্রা ফুটে উঠেছে এই সিনেমায়। সবুজ ঘাসে ঢাকা বিস্তীর্ণ ভূমি, গরুর পাল, কাউবয়দের সংগ্রামী জীবন, গানহ্যান্ড, দারিদ্র্য ইত্যাদির দারুন চিত্র পাওয়া যায় ওপেন রেঞ্জ সিনেমায়। অভিজ্ঞ লোক বস স্পিয়ারম্যানের নির্দেশনা এবং সততা, চার্লি ওয়েইট এর ক্ষিপ্রতা, বুনো স্বভাব, ডেন্টন ব্যাক্সটার এর আধিপত্য-নিষ্ঠুরতা, স্যু বারলো’র সেবাসুলভ মনোভাব ইত্যাদি ওয়েস্টার্ণ যুগের নিষ্ঠুরতার স্বাভাবিক চিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
ব্যতিক্রম আছে এর চিত্রায়নেও। সিনেমার একটি বড় অংশ জুড়ে বৃষ্টি এবং বৃষ্টি। রুক্ষ ওয়েস্টার্নের সাথে সবাই পরিচিত কিন্তু ধূলো-বালির যে শহর বর্ষায় তার রূপ কী অথবা ট্রেইলে ঘুরে বেড়ায় যে কাউবয় – বৃষ্টিতে তার কষ্টটা কোথায় – এই ধারণা সাধারণত অন্যান্য সিনেমায় পাওয়া যায় না – সিনেমাটি সেই দিক থেকে ব্যতিক্রম। বৃষ্টির এই চিত্রায়ন বাস্তবতাকে আরও সুদৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করে।
আর, ছবির গানফাইট দৃশ্যটি এর নামকেই প্রতিফলিত করে – ওপেন রেঞ্জ। আট-দশ জন গানম্যানের সাথে দুইজন মুখোমুখি, শহরের অধিবাসীদের ভূমিকাও চমৎকার। কাদায় মাখা একটা শহরে মুখোমুখি গোলাগুলির যুদ্ধ – এমন কিছু যা সচরাচর দেখা যায় না।
অভিনেতারা
বস স্পিয়ারম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছে দ্য গডফাদার চলচ্চিত্রের টম হেগান-খ্যাত রবার্ট ডিউভ্যাল। বয়স্ক এই অভিনেতা দুর্দান্ত ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন সিনেমায়। চার্লি ওয়েইট চরিত্রে আছেন পরিচালক কেভিন কস্টনার। কিছুটা গম্ভীর, অসামাজিক কিন্তু ক্ষিপ্র গানম্যানের চরিত্রে তার অভিনয় দায়িত্বশীল। স্যু চরিত্রে অ্যানি বেনিং আকর্ষনীয় ও কামনীয়রূপে উপস্থাপিত হয়েছেন।
চমৎকার লোকেশনে দারুন সিনেমাটোগ্রাফি আর সেই সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর – সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য ‘ওপেন রেঞ্জার’। বড় কোন পুরস্কার স্থান পায় নি এই ছবির ঝুলিতে, কিন্তু ‘টাইমআউট লন্ডন’ এর সেরা ৫০ ওয়েস্টার্ণ সিনেমার তালিকায় ৪৮ নম্বর অবস্থান দখল করতে পেরেছে এই ছবিটি।
দেখা হয়নাই মুভিটা এখনো – অনেকদিন ধরে মনের মত একটা ওয়েস্টার্ন মুভির অভাব বোধ করতেছিলাম – এইটা দেখমু।
প্রথমত, ‘সিনেমাখোদের আড্ডা’ গ্রুপে করা কমেণ্টের জন্য দুঃখিত। Kat.ph আমাকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। পরে TPB – তে ভাল প্রিণ্ট পেয়েছি। অন্য কারোর লাগলে এটা নিয়ে কাজ করতে পারে … 🙂
http://thepiratebay.sx/torrent/7338998/Open_Range_%5B2003%5D_BRRip_720p_X264_%5BZeberzee%5D
দ্বিতীয়ত, ক্রাইম আমার একটা প্রিয় genre. আর ওয়েস্টার্ণ ত ঘুরে ফিরে ঐ genre – তেই পড়ে, তাই না? সেজন্য রিভিউতে একটু চোখ বুলালাম। কিন্তু সে অর্থে আর পড়লুম না। 😛
যাই হোক। হেডলাইনে মুভির নামে ভুল আছে। ঠিক করে দিয়েন।
ভাই এই ধরণের কিছু মুভির সাল সহ তালিকা কিংবা ডাউনলোড লিংক দিলে অনেক উপকৃত হইতাম।