মানসিক সমস্যা

ডঃ ফাহমিদ-উর-রহমান
এমবিবিএস, এমফিল, এফসিপিএস
প্রাক্তন রেজিষ্ট্রার, সানসাইন হসপিটাল মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
সহকারী অধ্যাপক
মনোরোগ, অনিদ্রা, টেনশন, মাথাব্যাথা ও মাদকাসক্তি রোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা।

গতকাল থেকে ব্যাপক খোঁজাখুজির পর এই ভদ্রলোকের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাকীরা প্রধান ক্রাইটেরিয়াই পূরণ করতে পারে নি, ইনি পেরেছেন। যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি এও জানিয়েছেন – ভদ্রলোক হাফ পাগলা, তবে কামড় বা খামচি দেয় না। মোটামুটি নিশ্চিন্ত হয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছি সকালে, সিরিয়াল নাম্বার সিক্স।

পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারি নি, কারণ ছোট্ট একটা ভুল হয়ে গেছে। আমি খুঁজেছিলাম সাইকোলজিস্ট, কিন্তু এসে পড়েছি সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে। সম্ভবত ইনি সিডেটিভ টাইপ কিছু দিয়ে দিবেন। বড় আপা অবশ্য বলে দিয়েছেন – ডাক্তারকে যেন আগেই বলে দেই সিডেটিভ না দেয়ার জন্য – ঘুমের সমস্যা নেই। 

অ্যাটেন্ডেন্সের কাছে ৫০০ টাকা ভিজিট দিয়ে অপেক্ষা করা শুরু করলাম। একমাসের মধ্যে আরেকবার আসলে হাফ ভিজিট, একমাসের পরে আসলে ফুল। ডাক্তার ভদ্রলোক গড়ে দৈনিক ছয়জন রোগী দেখেন, দেড় ঘন্টা সময়ে। তারমানে রোগী ঢুকলে গতানুগতিক সমস্যা মনে করে প্রেসক্রিপশন লিখে দেবেন -হয়তো তিনি খুব দ্রুতই বুঝে ফেলবেন সমস্যাটা, কিন্তু রোগীর সমস্যাটাই তো মনে – সে যদি কনভিন্সড না হয়? স্ট্রাইকিং কিছু একটা বলতে হবে – যা শুনলে রোগীতে আগ্রহ পাবেন ডাক্তার। কি বলা যায়? কি বলা উচিত?

রোগীদের সাথে বসে টিভিতে নিউজ দেখতে লাগলাম। জাপানে বিশ্বাস করা হয় বাচ্চারা কাঁদলে নাকি স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই এক দেড় বছরের বাচ্চাদের নানা কসরতের মাধ্যমে কাঁদানো হচ্ছে। প্রায় ন্যাংটা দুজন সুমো কুস্তিগীর দুটো বাচ্চাকে আলগে ধরে মুখোমুখি করাচ্ছে আর অদ্ভুত দর্শন এক লোক, তার হাতে একটা হাতপাখা টাইপ কিছু, ইয়াআআআআ বলে চিৎকার করে বাচ্চাদের ভয় দেখাচ্ছে। বাচ্চারা কাঁদছে চিৎকার করে, বাচ্চার মা হাসিমুখে বলছে – আমার ছেলে কেঁদেছে, আমি খুশী। ওইরকম কুস্তিগীর আমাকে ধরলেই আমি আকাশ বাতাস কাপিয়ে কাঁদতে শুরু করতাম, এই বাচ্চাগুলো সে তুলনায় অনেক সাহসী!

কাছেই কোথায় যেন বোমা ফাটল একটা। পটকা বা গোলাগুলির আওয়াজও পাওয়া গেল। রুগীর দর্শনার্থীরা জানালায় ভিড় করেছে। আমি অপেক্ষা করছি ভেতর থেকে মেহরীন বের হয়ে আসার জন্য। মেহরীন গতকালকেও সিরিয়াল নিয়েছিল, মিস করেছে। আজ আবার নিয়েছে। 

দরজা খুলল। প্রথমে যিনি বের হলেন তিনি মেহরীন হতে পারেন না, বয়স্ক এক ভদ্রলোক। তারপর যিনি বের হলেন – তিনিও না, মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। তারপরের জন হতেও পারেন, বয়স্ক মহিলা। কিন্তু তিনি নন। সবশেষে যিনি বের হলেন তিনিই মেহরীন – চমৎকার সুন্দরী তরুণী। এই আকর্ষণীয় মহিলা মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কেন? মাদকাসক্তি? নাকি অনিদ্রা? অথবা মাথাব্যাথা?

চিন্তায় ছেদ পড়ল অ্যাটেন্ডেন্সের ডাকে – নাজমুল হাসান? 

ইয়াপ্প!

আসেন।

২.

ফাহমিদ-উর-রহমান সাহেব ভদ্রজন। সিডেটিভ দেন নাই। তবে বিস্তর আলোচনা করেছেন। তার পড়াশোনার দৌড় শুধু ডাক্তারি বিদ্যা বা গল্প উপন্যাসে সীমাবদ্ধ না, সেটাও জানা গেল। সাইকোলজিক্যাল সমস্যার খুব ভালো দুটো সমাধান তিনি দিয়েছেন।

১. বেশী চিন্তা করবেন না। চিন্তা না করলেই ভালো থাকবেন, চিন্তা করতে গেলেই বিপদ বাড়বে। সুতরাং – নো চিন্তা! চিন্তা থেকে বাঁচার জন্য ব্যস্ত থাকা যেতে পারে, তবে ব্যস্ততা আসলে খুব বেশী সাপোর্ট দিবে না আমার ক্ষেত্রে, কারণ এ কয়দিন সাপোর্ট দেয় নাই।

২. দ্বিতীয় এবং সবচে কার্যকরী সমাধান হল – একা থাকা যাবে না। একা থাকলেই এক নম্বর সমাধান কাজে লাগানো সম্ভব হবে না। কমপক্ষে দোকা থাকতে হবে এবং অ্যাকটিভ থাকতে হবে।

যে কোন ধরনেরই মানসিক সমস্যা / চাপ কাটিয়ে উঠার জন্য এ দুটো পদ্ধতিই বেশ কার্যকর। আপনারা যারা আছেন ফ্রেন্ডলিস্টে – একটু যাচাই করে জানায়েন তো – আসলেই কার্যকর কিনা।

আমি একটু আসি, কম্পিউটারের সামনে বসলে একাই থাকা হয়। বরং আজকে রাতের মত কোথাও পালাই।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *