নেতিবাচক দিয়ে শুরু করি। ওয়াইট আর্প সিনেমাটি পাঁচটি ক্যাটাগরীতে রেজ্জি অ্যাওয়ার্ড নমিনেশন পেয়েছিল – সবচে বাজে ছবি, সবচে বাজে পরিচালক, সবচে বাজে অভিনেতা, সবচে বাজে রিমেক/সিক্যুয়েল এবং পর্দায় সবচে বাজে জুটি। পাঁচটির মধ্যে দুটি ক্যাটাগরীতে রেজি অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে ছবিটি – সবচে বাজে অভিনেতা এবং সবচে বাজে রিমেক/সিক্যুয়েল। পুরস্কার এবং ‘সবচে বাজে’ শব্দগুলো নিয়ে যারা কনফিউজড তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি – রেজ্জি অ্যাওয়ার্ড হল গোল্ডের রাস্পবেরি অ্যাওয়ার্ড (Golden Raspberry Award) এর ডাক নাম। ১৯৮০ সাল থেকে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কারের পরের দিন সিনেমার সবচে খারাপ দিকের জন্য এই পুরস্কার দেয়া হয়। বলা বাহুল্য, অস্কার যেমন সকলের আরাধ্য, তেমনি রেজ্জি সকলের কাছে ঘৃনার্হ।
রেজ্জি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া সিনেমা নিয়ে কেন লিখছি? সিনেমা দেখার আগে জানা ছিল না। একটু পড়াশোনা করে নিলে হয়তো এই ছবিটা দেখা হত না। দেখার আগ্রহ মূলত ছবির প্রধান চরিত্র ওয়াইট আর্প রূপী কেভিন কস্টনার।
পরিচালক কেভিন কস্টনারের প্রতি আমার সামান্য দুর্বলতা তৈরী হয়েছে তার পরিচালিত দুটো ওয়েস্টার্ণ সিনেমা – ওপেন রেঞ্জ এবং ড্যান্সেস উইথ ওলভস দেখার পর। আর অভিনেতা কেভিন কস্টনারের সাথে পরিচয় ঘটেছিল ব্রায়ান ডি পালমার দ্য আনটাচেবলস সিনেমায়, পরে অলিভার স্টোনের জেএফকে দেখে পরিচালক কস্টনারের সাথে সাক্ষাতের আগ্রহ তৈরী হয়। ওয়াইট আর্প সিনেমা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের সময় আমি একটু ভুল করেছিলাম – সিনেমাটি যে কস্টনারের পরিচালনা নয়, সেটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। সিনেমা দেখার পর আমি অবশ্য আফসোস করছি না মোটেও। রেজ্জি অ্যাওয়ার্ড পেলেই যে চলচ্চিত্রটি খারাপ হয়ে যাবে তেমনটি আমি বিশ্বাস করি না।
ওয়াইট আর্প একটি বায়োগ্রাফিক সিনেমা। উনিশ শতকের শেষের দিকে ওয়াইট আর্প নামের একজন ব্যক্তি ডজ সিটিতে লম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং দ্রুত সুনাম কুড়াতে সক্ষম হন। তার যোগ্য পরিচালনায় আইন শৃঙ্খলা অবস্থার উন্নতি ঘটলেও সে এবং তার ভাইয়েরা কিছু লোকের চক্ষুশূলের শিকার হন। আততায়ীর হাতে এক ভাই নিহত এবং আরেক ভাই আহত হলে ওয়াইট আর্প তার ডাক্তার বন্ধু হলিডের সাথে মিলে আততায়ীদের কয়েকজনকে খুজে বের করেন এবং হত্যা করেন। সারা জীবন আইনের পক্ষে কাজ করেছেন যিনি, তিনিই নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করেছেন, কিন্তু আমেরিকান ইতিহাসে ওয়াইট আর্প তার কর্মকান্ডের জন্য বিশেষ জায়গা দখল করতে সক্ষম হন। লরেন্স কাসডানের পরিচালনায় ওয়াইট আর্প সিনেমাটি বাস্তবের ওয়াইটের জীবনকে সংক্ষেপে তুলে ধরেছে।
কিশোর বয়স থেকে শুরু করে প্রতিশোধ গ্রহনের পূর্ব সময় পর্যন্ত তুলে ধরার চেষ্টায় এই সিনেমার কাহিনী বর্ণনা একটু ভিন্নতর। ওয়াইটের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে সিনেমায়। ফলে, অগুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে বা খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। ড্যান্সেস উইথ ওলভস বা ওপেন রেঞ্জ সিনেমায় গতানুগতিক পশ্চিমা রুক্ষ প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপরীত চিত্র পাওয়া গিয়েছিল, ওয়াইট আর্প সিনেমায় খুব সামান্য অংশে সেটা পাওয়া যায়। আর্পের বাফেলো হান্টার হিসেবে জীবনধারণ দৃশ্যটি এর অন্যতম।
ওয়াইট আর্প সিনেমায় যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে, তা হল রক্তের বাঁধন। Nothing counts so much as blood. The rest are just strangers – ওয়াইট আর্পের বাবার এই সংলাপকে ওয়াইট সারা জীবনে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিল যে – তার অন্যান্য ভাইদের স্ত্রী-রাও তার কাছে খুব বেশী গ্রহনযোগ্য ছিল না। বক্তব্যটা কতটুকু গ্রহনযোগ্য সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, তবে রক্তের বাঁধনকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়া আদর্শ হিসেবে মোটেও মন্দ নয়।
বাস্তবের ওয়াইট আর্প নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। তাকে একজন আমেরিকান হিরো হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে হলিউডের সিনেমাগুলোতে। তাকে নিয়ে সিনেমা তৈরী শুরু হয়েছে যখন, ওয়াইট আর্প তখনও জীবিত। বলা হয়, তার জীবনভিত্তিক সিনেমা তৈরীতে তার নিজেরই সহযোগিতা ছিল, স্ক্রিপ্ট লিখতে সাহায্য করতে গিয়ে তিনি তার জীবনে অনেক রং চড়িয়েছেন। সিনেমা নির্মাতাদের সাথে সখ্যতার কারনে তার জীবনের অনেক খারাপ দিক তিনি ঢেকে দিতে সক্ষম হয়েছেন – এমন দাবীও করেছেন একজন গবেষক।
ওয়াইট আর্প সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি খুবই চমৎকার। রেজ্জি অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেশন পেলেও সিনেমাটোগ্রাফির জন্য অস্কারের নমিনেশনও পেয়েছিল এই সিনেমা। রেজ্জি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার বিষয়টি মাথায় না রাখলে ওয়াইট আর্প চমৎকার এবং উপভোগ্য ওয়েস্টার্ণ সিনেমা হতে পারে।
রেটিং: ৪/৫