কিংবদন্তী বিপ্লবী চে গুয়েভারাকে নিয়ে কম বেশী মোট ২৪ টি সিনেমা হয়েছে, টিভি আর সিনেমার পর্দায়। আর দ্য মোটরসাইকেল ডায়রিজ নিয়ে সামহোয়্যারইনব্লগে কম বেশী দুচারটে পোস্ট পড়েছে, তার সাথে যোগ হলো আমার একটা।
তেইশ বছর বয়সে দুই বন্ধু বের হলো মোটর সাইকেল নিয়ে দেশ ভ্রমনে। চার মাসে ৮০০০ কিলোমিটার ভ্রমন করার উদ্দেশ্য থাকলেও একটি গৌন উদ্দেশ্য ছিল পেরুর কোন এক কুষ্ঠ আক্রান্ত এলাকায় কাজ করা। দুজনের একজন ‘ফুসার’ (চে) অন্যজন বয়সে কিছুটা বড় বন্ধু গ্রানাডো, পেশায় একজন বয়োকেমিস্ট। মোটরসাইকেল টা বিশাল, সেই সময় হিসেবে অনেক বড় বটে। বাবা মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওয়ানা হলো ভেনেজুয়েলার উদ্দেশ্যে, বাসনা গ্রানাডোর ত্রিশতম জন্মদিন ভেনেজুয়েলায় কাটানো, রুটটা খুবই ব্যতিক্রম। আন্দেজ পর্বতমালার পাশ দিয়ে চিলি, তারপর মরুভূমি পার হওয়া এবঙ পেরু হয়ে তারপর ভেনেজুয়েলা।
মজার সব ঘটনা ঘটে এই ভ্রমনে। রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেছে কয়েকবার, মোটর নিয়ে সোজা পাশের ডোবায় ডুব দিতে হয়েছে, আন্দিজের ঠান্ডা তীব্র বাতাসে একমাত্র তাবুটি উড়িয়ে নিয়ে ফেলল পাশের খরস্রোতা নদীতে। সুতরাং এবার রাত কাটানোর জন্য এলাকাবাসীকে ‘ম্যানেজ’ করা! গ্রানাডো টুক টাক মিথ্যা বলার মাধ্যমে জায়গার ব্যবস্থা করতে চাইলেও ফুসার বাগড়া দিয়েছে বার বার। মাঝে দেখা হয়েছে বিভিন্ন রোগাক্রান্ত লোকের সাথে, মেডিকেলের ছাত্র ফুসার চেষ্টা করেছে সামর্থ্য অনুযায়ী সেবা করার।
পকেটে প্রেমিকার দেয়া পনেরো ডলার, কিন্তু শত সমস্যা সত্বেও তা খরচ না করায় গ্রানাডোর শত্রুতে পরিণত হয়েছিল যেন ফুসার, অথচ সেই টাকাই খনিতে কাজ করার জন্য জড়ো হওয়া লোকদের মাঝে বিতরন করতে ভুল হয় নি ফুসারের। বরফ গলা পানিতে নেমে শিকার করা হাস উদ্ধারে গিয়ে ঠান্ডা এবং জ্বর বাধায় ফুসার। তাতে পিছিয়ে যায় কয়েকদিন, আবার নষ্ট হয় মোটর সাইকেল, সারানোর ব্যবস্থা করা হয় কোন এক ভাবে। কিন্তু মেকানিকের বউয়ের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টার অপরাধে পালাতে হয় দুজনকেই। আবার নষ্ট হয় মোটরসাইকেল, এবার মৃত্যুমুখে পতিত। তাই মোটরসাইকেল ছাড়াই পায়ে হেটে রওয়ানা হয় দুজনে, পৌঁছায় পেরুতে, পার হয় মরূভুমি।
পথিমধ্যে সামন্তবাদীদের অত্যাচার, ভুমি থেকে উচ্ছেদ আর রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত লোকজন ফুসারের ভাবনায় পরিবর্তন আনে, সবাই যেন কারো অপেক্ষায় রয়েছে। ফুসারের তাকানোর ভংগি আর সাদাকালো ফ্রেমে নিপীরিত মানুষের স্থির দৃষ্টি – সব যেন প্রতীক্ষা করছে একজন নেতার, একটি সফল বিপ্লবের।
শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হয় পেরুর কুষ্ঠ আক্রান্ত কলোনীতে, ভালো ব্যবহার আর চিকিৱসা সেবার মাধ্যমে মন জয় করে সবার। আর তাই তার ২৪ বছরের জন্মদিনটা পালিত হয় অনেক উৱসব মুখরতায়। আর সাথে সামান্য উপহার, একটা ভেলা। ভ্রমণ পূর্ন করার উদ্দেশ্যে।
সুন্দর সব ল্যান্ডস্কেপ আর অসাধারন সব মিউজিক দ্য মোটরসাইকেল ডায়রিজ মুভিটাকে উপভোগ্য করেছে। আর চে এবং গ্রানাডোর চরিত্রে অভিনয় করা গাল গার্সিয়া বার্নেল আর রড্রিগো দি লা সারনা অসাধারণ অভিনয় করেছে।
স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত চে’র আত্মজীবনী বই ‘দ্য মোটরসাইকেল ডায়রিজ’ থেকে নির্মিত এই মুভি থেকে চে কিভাবে বিপ্লবের সাথে জড়িত হলো তা বোঝা যাবে না, তবে বিপ্লবের সাথে জড়িত হবার পূর্ব মানসিকতা বুঝতে সাহায্য করবে ।
মনের গভীরে যদি কোন বিপ্লবের স্বপ্ন লালন করে থাকেন, তবে জানতে হবে দেশের মানুষকে আর তার জন্য বেরিয়ে পড়ুন আজই, না হয় দেরী হয়ে যাবে যে !
মোটরসাইকেল ডায়রিস দেখে খুব বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এত সুন্দর করে সব দেখিয়েছে যে কল্পনাকেও হার মানায়। থিমটাও অসাধারণ, একজন বেশ সাধারণ আর্জেন্টাইন যুবকের সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা। কিভাবে সে বুর্জোয়াদের সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ায় তা বুঝতে পেরে খুব ভাল লেগেছিল। বিশেষ করে জন্মদিন পালনের জন্য নদী পার হওয়াটা। এটা অন্যতম সেরা একটা আইকনিক দৃশ্য। একপাশে ধনী, এক পাশে গরীব, মাঝখানে নদী। একজন যুবক এই প্রমত্তা নদী পারি দিচ্ছে কেবল ধনীদের রাজ্য ছেড়ে গরীবদের কুটীরে পৌঁছানোর জন্য। অসাধারণ…
চে গুয়েভারা নিয়ে গত বছর হওয়া মুভি দুইটা দেখেছেন নাকি:
১। চে – দি আর্জেন্টাইন
২। চে – গেরিলা
দুটোই পরিচালনা করেছেন স্টিভেন সোডারবার্গ, ওশ্যান সিরিজ, এরিন ব্রকোভিচ আর ট্রাফিক এর ডিরেক্টর। দুটো সিনেমাই অসাধারণ, চে চরিত্রে বেনিস্ও দেল তোরো-র অভিনয় ছিল অনবদ্য।
চে নিয়ে আমার দেখা এইটাই একমাত্র মুভি। তবে আরও মুভিগুলো দেখতে চেষ্টা করছি.. বিশেষ করে চে' কে নিয়ে সম্প্রতি দুই পর্বের যেটা বেড়িয়েছে সেইটা (আপনি যেগুলো বললেন)
নানারকম সমস্যার কারণে মুভি দেখা হয়ে উঠছে না…
অসাধারণ একটা মুভি। চরম লাগছে। লেখাটাও অনেক ভালো হইছে 🙂 থ্যাংকস ফর শেয়ার।
স্বাগতম বর্ষণ বায়েজিদ। আবারও আসবেন 🙂
দাদা, আরো বড় করতে পারতেন। 😐
পারতাম, কিন্তু কেন আরও বড় করি নাই সেটাও ভুলে গেছি। অনেক আগে লেখা পোস্ট 🙂
ভালো থাকুন চাটিকিয়াং রুমান 🙂
চমৎকার লাগলো রিভিউ 🙂
ধন্যবাদ নিলয় 🙂
ভালো থাকবেন 🙂