দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড

দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড

দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড। চেনা পরিচিত গন্ডি থেকে যদি হঠাৎ বের হয়ে আসতে হয় এবং সম্পুর্ণ অপরিচিত পরিবেশে নতুন সঙ্গীদের সাথে মিশতে হয় তাহলে ব্যাপারটা খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তিকেই এ ধরণের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলেও তাদের সংখ্যা নিতান্ত কমও নয়।

অন্যদিকে পশু পাখিদের মধ্যে এ সংখ্যা তো প্রচুর। বিশেষ করে বন্য পরিবেশ থেকে খাঁচায় আবদ্ধ পরিবেশে স্থানান্তরের অভিজ্ঞতা সকলের জন্য সুখকর হয় না। কিন্তু যদি উল্টোটা হয়? অর্থ্যাৎ, মানুষের সাথে থেকে অভ্যস্ত কোন পোষা জন্তু যদি প্রতিকূল পরিবেশে গিয়ে পড়ে – তাহলে কি সে মানিয়ে নিতে পারবে? ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড সেরকমই একটা গল্প নিয়ে নির্মিত।

দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড

এই গল্পের প্রধান চরিত্র একটি কুকুর। তার নাম বাক। আশেপাশের বাকী সকল চরিত্রই অবশ্য মানুষ। বাক একটি বিশাল আকৃতির কুকুর, তার বাস ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পরিবারে। এক রাত্রে তাকে চুরি করে বিক্রি করে দেয়া হয়, চোরের দল তাকে পাঠিয়ে দেয় আলাস্কায়। সেখানে স্লেজ গাড়ি টানার দায়িত্বে থাকা একটি কুকুর দলের সাথে যুক্ত করা হয় বাককে। শুরু হয় বাকের জীবনের পরিবর্তন। বেঁচে থাকার জন্যই পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার সংগ্রামে নিজেকে ব্যস্ত করে নেয় বাক। কিন্তু জীবনের আরও অনেক কিছু বাকী ছিল। এ্যাডেঞ্চারপ্রিয় এক ব্যক্তির সাথে জড়িয়ে পড়ে সে।

যদি বিশ্বসাহিত্যের সাথে পাঠকের পরিচয় থাকে তবে দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড সিনেমার নাম অথবা গল্পটা পরিচিত মনে হবে। বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক জ্যাক লন্ডনের একই নামের একটি গল্প অবলম্বনেই সিনেমাটি নির্মাণ করেছে টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি স্টুডিও। পরিচালনা করেছেন ক্রিস স্যান্ডার্স।

জেনে রাখা উচিত, দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড মূল গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৩ সালে। প্রকাশের পরপরই গল্পটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। উপন্যাসে যে সব স্থানগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে লেখক জ্যাক লন্ডন সে জায়গাগুলোয় নিজে ভ্রমণ করেছিলেন। তার মাত্র চল্লিশ বছরের জীবন অবশ্য নানা রকম এডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ ছিল। কল অভ দ্য ওয়াইল্ড সম্ভবত অন্যতম মাস্টারপিস।

সে কারণেই চলচ্চিত্রের রূপালী পর্দায় উপস্থিত হতে বেশী সময় নেয়নি বাক। ১৯২৩ সালে প্রথম এই গল্প অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল। তারপরে আরও অনেকগুলো চলচ্চিত্র-টিভি সিরিজ ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড গল্প থেকে। ২০২০ সালের সিনেমাটি সর্বশেষ সংযোজন।

ক্রিস স্যান্ডার্সের এই সিনেমার সাথে অবশ্য মূল কিশোর ক্ল্যাসিক উপন্যাসের বেশ পার্থক্য রয়েছে। মূল উপন্যাসে লেখক জ্যাক লন্ডন একটি নির্দিষ্ট দর্শনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সিনেমায় সেবিষয়টি থাকলেও গুরুত্বের দিক থেকে সেটা বাকের এডভেঞ্চারের তুলনায় গুরুত্ব কম পেয়েছে। এক দিক থেকে এই কাজটি ভালোই হয়েছে। মূল বইয়ের পাঠক চলচ্চিত্রটির সাথে বইয়ের তুলনামূলক বিচারের বিড়ম্বনা এড়িয়ে নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারবেন।

দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড
দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড সিনেমার পোস্টার এবং সেবা প্রকাশনীর বইয়ের প্রচ্ছদ

অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর সাথে ২০২০ সালে নির্মিত দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড চলচ্চিত্রটির কিছু পার্থক্য রয়েছে। এই সিনেমাটি লাইভ একশন-কম্পিউটার এনিমেটেড ফিল্ম। অর্থ্যাৎ এখানে যে সকল মানুষ অভিনয় করেছেন তারা সকলেই রক্ত মাংসের মানুষ হলেও কুকুর বা অন্যান্য পশুগুলো সত্যিকারের নয় বরং কম্পিউটারে তৈরী। বর্তমানকালে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রযুক্তি এতটা এগিয়ে গিয়েছে যে কম্পিউটারের সাহায্যে যে সব পশু-পাখি তৈরী করা হয় তা বাস্তবের চেয়েও জীবন্ত মনে হয়। তবে অভিজ্ঞ চোখের নিকট এখনও এই কৃত্রিমতা স্পষ্ট হয়ে উঠে।

আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো – এই সিনেমার মাধ্যমে বহুদিন পর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন হ্যারিসন ফোর্ড। এই অভিনেতা ইন্ডিয়ানা জোনস চরিত্রে এত সব দুর্দান্ত অভিযানে অংশ নিয়েছেন যে, এ্যাডভেঞ্চার সিনেমার নাম উঠলে তার নাম আলোচনায় আসবেই। দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড (২০২০) সিনেমাতেও তিনি নানা দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, সাথে থাকে প্রভূভক্ত বিশাল কুকুর বাক।

সেবা প্রকাশনী থেকে খসরু চৌধুরীর অনুবাদে প্রকাশিত হয়েছিল দ্য কল অভ দ্য ওয়াইল্ড। কুকুরের প্রতি ভালোবাসা তৈরী করে দিয়েছিল এই বই। বইয়ের তুলনায় ২০২০ সালের সিনেমা মোটেও উপভোগ্য নয়, তবে মাথা থেকে বইটি দূরে সরিয়ে যদি এই সিনেমা দেখা সম্ভব হয় তাহলে উপভোগ করা সম্ভব হবে সহজেই।

হ্যাপি ওয়াচিং!

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *