Trilogy of Death: Amores Perros

মুভি ট্রিলজির কথাটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। বিশেষ করে গডফাদার ট্রিলজি, ব্যাক টু দ্য ফিউচার ট্রিলজি, লর্ড অব দ্য রিঙস ট্রিলজি, জ্যাসন বোর্ন ট্রিলজি, কিংবা আমাদের উপমহাদেশের বিখ্যাত সত্যাজিত রায়ের অপু ট্রিলজি ইত্যাদি সিনেমাগুলো মুভি ট্রিলজি সম্পর্কে মুভি দর্শকদের মধ্যে পর্যাপ্ত ধারনা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। সাধারণত একই বিষয়কে কেন্দ্র করে যখন তিনটি সিনেমা নির্মিত হলে সেগুলো ট্রিলজি হিসেবে পরিচিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ট্রিলজিগুলো একই পরিচালকের সৃষ্টি, প্রায় একই অভিনেতারা অভিনয় করেন তবে ব্যতিক্রমও লক্ষ্যনীয়। যেমন গডফাদার ট্রিলজি, কিংবা জ্যাসন বোর্ন ট্রিলজির পরিচালক পাল্টে গেছেন কোন এক পর্বে।

ট্রিলজি অব ডেথ কিংবা সহজ কথায় ডেথ ট্রিলজির মুভি তিনটি ডেথ বা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এ পর্যন্ত দুজন পরিচালক ডেথ ট্রিলজি বানিয়েছেন, এদের একজন আমেরিকান ফিল্মমেকার গাস ভ্যান সান্ত যিনি তার গুডউইল হান্টিঙ এবং গেল বছরের মিল্ম সিনেমার জন্য বেশ সুপরিচিত, তার পরিচালিত তিনটি সিনেমার নাম হলো গ্যারি (২০০২), এলিফ্যান্ট (২০০৩) এবং লাস্ট ডেজ (২০০৫)। অন্য পরিচালক হলেন অালেজান্দ্রো গনজালেস ইনারতু, তিনি একজন মেক্সিকান পরিচালক। তার লিখিত এবং পরিচালিত ডেথ ট্রিলজির সিনেমাগুলো হলো আমোরেস পেরস, 21 গ্রামোস এবং বাবেল। এর মধ্যে তৃতীয় সিনেমাটি মুভি দর্শকদের কাছে বেশ পরিচিত কারণ ২০০৬ সালে সিনেমাটি সেরা চলচ্চিত্র সহ মোট সাতটি ক্যাটাগরীতে অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিল।

অ্যামোরেস পেরস একটি অ্যানথোলজি ফিল্ম। এ ধরনের সিনেমায় কাহিনী দু’তিনুটে ভাগে ভাগ করে বলা হয় যার প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্র, স্বাধীন কিন্তু পরস্পরের সাথে কোন না কোনভাবে এক সুতোয় বাধা। অ্যামোরেস পেরস সিনেমায় মোট তিনটি গল্প। প্রথম অংশে অক্টোভিয়া এবং সুসানার কাহিনী। অক্টোভিয়া তার বড় ভাইয়ের বউ সুসানার প্রেমে পাগল, তাকে নিয়ে পালিয়ে নতুন সংসার গড়ার ইচ্ছে তার। এ জন্য তাদের কুকুর্য কফিকে নিয়ে ডগ ফাইটে যোগ দেয় অক্টোভিয়া যেখানে কফি খুব সহজেই তার প্রতিপক্ষকে পরাভূত করে, কখনো কখনো হত্যা করে এনে দেয় হাজার হাজার ডলার। সেই টাকা অক্টোভিয়া আর সুসানা মিলে ভবিষ্যতের জন্য জমা করে। সিনেমার আরেক অংশে রয়েছে ড্যানিয়েল এবং ভ্যালেরিয়ার কাহিনী। নিজ স্ত্রীকে ত্যাগ করে ড্যানিয়েল সুপার মডেল ভ্যালেরিয়ার সাথে সংসার বাঁধে কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় পা হারাতে হয় সুপার মডেল ভ্যালেরিয়াকে। ঘটনা গুরুতর হয়ে দাড়ায় যখন ভ্যালেরিয়ার পোষা আদুরে কুকুর রিচি ঘরের কাঠের মেঝেতে ছিদ্র নিয়ে নিচে পড়ে যায় এবং দিন কতক আটকে থাকে। এই নিয়ে ড্যানিয়েল এবং ভ্যালেরিয়ার সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়।
ড্যানিয়েল-ভ্যালেরিয়া কিংবা অক্টোভিয়া-সুসানার থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের কাহিনী তৃতীয় অংশে যেখানে মূল চরিত্র এল চিভো, কাচা পাকা দাড়ি গোফের জঙ্গলে ঢাকা একজন নোংরা, অপরিস্কার ভবঘুরে, বেশ কিছু পোষা কুকুর নিয়ে শহরের এদিকে সেদিকে ঘুরে বেড়ায় সে। যৌবনে একজন গেরিলা যোদ্ধা এল চিভো বর্তমানে একজন ভাড়াটে খুনী, পয়সার বিনিময়ে মানুষ খুন করে সে। আর খুজে বেড়ায় তার মেয়েকে যাকে দুবছর বয়েসে ফেলে সে বেরিয়ে গিয়েছিল পৃথিবীকে পাল্টে দেবে বলে।

এই তিনটি কাহিনী আপাত দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কিছু বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে। আহত কুকুর কফিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবার সময় ভ্যালেরিয়ার গাড়িকে ধাক্কা দিয়েছিল অক্টোভিয়া। মারাত্মক আহত অক্টোভিয়া এবং ভ্যালেরিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও রাস্তার উপর ফেলে যাওয়া হয় কুকুর কফিকে। আর সেই কুকুরকে সেবা শুশ্রুষার মাধ্যেমে সুস্থ্য করে তোলে এল চিভো।
আলেসান্দ্রো গনজালেস তার এই মুভিতে মেক্সিকোর নিচু, মধ্যবিত্ত এবং উচু তলার মানুষের জীবনযাত্রার কিছু দিক তুলে ধরতে পেরেছেন। মানুষে মানুষে এবং মানুষে পশুতে ভালোবাসা-ঘৃণার যে রূপ খুব নিরাবেগের সাথে তুলে ধরা হয়েছে এই মুভিতে। অক্টোভিয়া সুসানাকে ভালোবেসে তার আপন ভাই রামিরোকে পেটানোর ব্যবস্থা করে, অথচ সেই সুসানা শত অত্যাচার সহ্য  করে শেষ পর্যন্ত রামিরোকে ঠকিয়ে অক্টোভিয়ার সাথে পালাতে পারে না। এল চিভোকে দিয়ে ভাইকে হত্যা করার চেষ্টা করে একজন, ঘটনাক্রমে এল চিভো তার টার্গেটকে বন্দী করে, কৌশলে নিয়ে আছে তার ক্লায়েন্টকেও। তারপর মুখোমুখি দুজনকে বন্দী করে মাঝখানে রাখে পিস্তলটা যেটা আয়ত্তে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায় দুজনেই, তবে এই চেষ্টা কি নিজেকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নাকি অপরপক্ষকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সেটা অবশ্য অপরিস্কার থেকেই যায়। সব কিছু ছাপিয়ে উঠে এল চিভোর পশুপ্রেম। রাস্তার কুকুরকে সে খুব ভালোবাসে, অথচ অর্থের বিনিময়ে মানুষ হত্যা করতে তার বাধে না।
২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় আরেকটি ব্যাপার বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়, সেটা হলো ভাগ্য, আরেকটু স্পষ্ট করে বললে সেটা হলো নিয়তি।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

One Comment on “Trilogy of Death: Amores Perros”

  1. রিভিউ পড়ে তো খুবই ইন্টারেস্টিং লাগছে!

    21 Grams, Babel এগুলার নাম শুনেছি। কিন্তু এগুলা যে একটা ট্রিলজির অংশ জানা ছিল না।

    মুভিগুলার নাম মাথায় রইল।
    একদিন অবশ্যই দেখব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *