ষাঁড়ের ছবি: ফার্দিনান্ড

ফার্দিনান্ড

আমাদের এই বাংলাদেশে একসময় ষাড়ের লড়াই বেশ প্রচলিত থাকলেও এখন তেমন একটা দেখা যায় না। আমাদের দেশে ষাড়ের লড়াই বিশ্বখ্যাতি অর্জন না করলেও স্পেনের বুলফাইট বিশ্ববিখ্যাত। ফার্দিনান্ড নামের অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটি এই বুলফাইটকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

অবশ্য দুই দেশের বুলফাইটের মধ্যে বিশাল তফাৎ বিদ্যমান। আমাদের দেশে ষাড়ের লড়াই হয় ষাড়ে ষাড়ে। আর স্পেনের বুলফাইটে লড়াইটা হয় মানুষে আর ষাড়ের মধ্যে। যে সকল মানুষ ষাড়ের সাথে লড়াই করেন তাদেরকে বলা হয় ম্যাটাডোর। ম্যাটাডোররা নানা উপায়ে ষাড়টিকে ক্ষেপিয়ে তুলেন। ক্ষিপ্ত ষাড়টি বারবার আক্রমণের চেষ্টা করে এবং ম্যাটাডোর দক্ষতার সাথে এড়িয়ে যায়। এটিই বুলফাইট।

ফার্দিনান্ড

ফার্দিনান্ড সিনেমার প্রধান চরিত্র একটি গরু। স্পেনের এমন একটি খামারে তার জন্ম হয় যেখান থেকে বুলফাইটের উদ্দেশ্যে ষাড় সরবরাহ করা হয়। তাই ছোটবেলা থেকেই সকল ষাড়ের লক্ষ্য থাকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা এবং ম্যাটাডোরের সাথে লড়াইয়ের জন্য বাছাই হওয়া। অথচ ফার্দিনান্ড লড়াই পছন্দ করে না, সে ভালোবাসে ফুল, সৌন্দর্য। তাই ছোটবেলায়ই সে পালায় সেই খামার থেকে।

ফার্দিনান্ড

স্পেনের এক গ্রামীন পরিবেশে ছোট্ট মেয়ে নিনার বন্ধুত্ব আর ভালোবাসায় বড় হয়ে উঠে ষাড়টি। শক্তি আর আকৃতিতে সে ভীতিকর হয়ে উঠে। তারপর একদিন ঘটনাচক্রে তাকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় সেই খামারে যেখানে তার জন্ম হয়েছিল। তার শৈশবের সাথীরাই এখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী। সবাইকে হারিয়ে যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে পারবে সেই অর্জন করবে দেশসেরা ম্যাটাডোরের মুখোমুখি হবার সৌভাগ্য৷ ফার্দিনান্ড কি পারবে?

ফার্দিনান্ড নামের এই সিনেমাটি ২০১৭ সালে মুক্তি পেলেও গল্পটি কিন্তু নতুন নয়। ১৯৩৬ সালে সর্বপ্রথম এই গল্প নিয়ে একটি শিশুতোষ গল্প রচিত হয়৷ তখন থেকেই এই গল্পটি মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়। ফার্দিনান্ডকে নিয়ে কার্টুন ছবিও নির্মিত হয়েছিল। তাই বলে অবশ্য এই অ্যানিমেশন সিনেমার আবেদন কমেনি একটুও।

বরাবরের মতই এই অ্যানিমেশন সিনেমার কিছু ‘ইনসাইট’ (Insights) রয়েছে যা উপলব্ধি করতে হয়। সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ সকল চরিত্র গরু হলেও তাদের মধ্য দিয়ে আমাদের মত মানুষের চরিত্রের বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। এ সকল পার্থক্য এড়িয়ে কিভাবে একটি কল্যাণকর লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় সেই গল্প বলা হয়েছে ফার্দিনান্ড-এ।

ষাড়ের ছবি ফার্দিনান্ড এর ট্রেলার

ভারিক্কি শোনালেও ভয়ের কিছু নেই। সিনেমাটি কিন্তু খুবই উপভোগ্য এবং আমুদে। চরিত্রগুলোর কার্যকলাপ এতটাই মজাদার যে বারবার দেখলেও ক্লান্তি বোধ হয় না৷ কিছু কিছু দৃশ্যে তো হেসে লুটোপুটি খেতে হয়। ছোট্ট একটি তথ্য দেই – ফার্দিনান্ড চরিত্রের কন্ঠস্বর দিয়েছেন জন সিনা। তোমরা যারা রেসলিং এর ভক্ত তারা হয়তো তাকে চিনেছো।

যে বুলফাইটকে কেন্দ্র করে সিনেমার গল্প সেটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। শ্রেষ্ঠ ষাড় আর ম্যাটাডোর জীবন-মৃত্যুর এক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু দর্শক হিসেবে তোমরা উপলব্ধি করতে পারবে – এ লড়াই ষাড় আর মানুষে নয়, বরং পশুদের প্রতি মমত্ব আর নিষ্ঠুরতার লড়াই।

শেষ করার আগে তোমাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই, স্পেনের অনেক শহরেই এখন আর সে রকম বুলফাইট নেই, আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বন্ধ করা হয়েছে সকল ধরনের হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতা৷ আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সেটাই তো আমাদের কর্তব্য, নাকি?

দেখা হবে আবার – নতুন কোন সিনেমা নিয়ে!

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *