ছবির এই ভদ্রলোককে আপনারা এক দেখাতেই চিনবেন জানি। তিনি বলিউডের অভিনেতা কাদের খান, গতকাল কানাডার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
যে খবরটি আমাকে নাড়া দিয়েছে তা তার মৃত্যুসংবাদ নয়। তিনি ছিলেন একজন কুরআন স্কলার। কাদের খানের বাবার নাম মাওলানা আবদুল রহমান খান। ভারত-পাকিস্তান ভাগের আগে তিনি আফগানিস্তানের কাবুলের বাসিন্দা ছিলেন। দেশভাগের পরে ১৯৫০ এর শুরুর দিকে তিনি হল্যান্ড এ পাড়ি জমান এবং সেখানে আরবী ও ইসলামী ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন।
কাদের খান তার বাবার মত ছিলেন না। ইসলাম, আরবী, উর্দু ইত্যাদি বিষয়ে তার জ্ঞান যথেষ্ট গভীর ছিল না। বলিউডের চলচ্চিত্রের সাথে জড়িয়ে তিনি সফলতা অর্জন করেন। তিনি প্রায় ২০০টি ছবির সংলাপ লিখেন। বলা হয়, তার লেখা সংলাপই আজকের অমিতাভ বচ্চনকে তৈরী করেছে। তার রচিত কিছু বিখ্যাত সংলাপ (ভিডিওসহ) পাওয়া যাবে এখানে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শক্ত অবস্থানে পৌছান। বিশেষ করে, কমেডিয়ান চরিত্রে তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৯০ এর দশকে তার বাবা আবদুল রহমান খান কাদের খানকে ডেকে নিয়ে তার আদর্শ প্রচারের কাজেকে এগিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেন। কাদের খান তার অজ্ঞতার কথা স্বীকার করে এ ব্যাপারে তার অনুপযুক্ততার যুক্তি তুলে ধরে। জবাবে মাওলানা বলেছিলেন, তুমি যেভাবে কিছু না জানা সত্ত্বেও সিনেমার ডায়লগ লিখতে শিখেছো, তেমনি চাইলে এসবও তুমি শিখতে পারবে।
বাবার এই কথায় কাদের খান ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি উসমানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক স্টাডিস এন্ড অ্যারাবিক লিটারেচারে মাস্টার্স ডিগ্রি গ্রহণ করেন। তার বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তিনি পরবর্তীতে মুম্বাই ও তার বাসস্থান পুনেতে ইসলামিক স্কলারদের নিয়ে নার্সারি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট এর শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ইসলামিক কোর্স ডিজাইন করেন। পরে তিনি দুবাইয়ে কেকে ইনস্টিটিউট অব অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ চালু করেন। সাধারণ মানুষ এমনকি অমুসলমানরাও যেন কুরআন এবং শরীয়া আইন সহজভাবে বুঝতে পারে তার জন্য তিনি সাধনা চালিয়ে ২০০৫ সালে সফল হন। বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারার জন্য তিনি বেশ তৃপ্ত ছিলেন।
২০১৪ সালে তিনি পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করেন।
মহান রাব্বুল আলামীন কুরআন ও ইসলামের এই বিরাট খেদমতকারকে ক্ষমা করে দিক, তার সকল অবদানকে গ্রহণ করুন এবং তাকে তাঁর আরশের পবিত্র ছায়াতলে আশ্রয় দান করুক। আমীন।
সূত্রঃ খালিজটাইমস