জ্যাক নিকলসনের ওয়েস্টার্ন সিনেমা

জ্যাক নিকলসনকে আমরা প্রধানত তার চায়নাটাউন, ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কুক্কুস নেস্ট এবং দ্য শাইনিং ছবির জন্য চিনি। এছাড়াও আরও কিছু চলচ্চিত্র আছে যা তাকে খ্যাতি এনে দিয়েছে, তিনবার অস্কার পুরস্কারে ভূষিত করেছে এবং প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে অভিনয়জগতে সম্মানের সাথে অবস্থান করছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি মাত্র পাঁচটি ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন যার সবগুলোই তার ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে। এমনকি নিকলসন একটি ওয়েস্টার্ন সিনেমার কাহিনী রচনাও করেছেন, কিন্তু এই ছবিগুলো সাধারণত আলোচনায় গুরুত্ব পায় না। এর প্রধান কারন সম্ভবত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর উজ্জ্বল সাফল্য। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কারণ হল তার অভিনীত ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্রগুলোর ব্যবসায়িক ব্যর্থতা অথবা যথেষ্ট পরিমান সাফল্য না পাওয়া। তা সত্ত্বেও, জ্যাক নিকলসন রচিত এবং অভিনীত ওয়েস্টার্ন সিনেমাগুলো সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা যেতে পারে – ছবিগুলোর গল্পের মৌলিকত্ব ও অভিনবত্ব, ছবিতে জ্যাক নিকলসনের অভিনয় এবং সার্বিক বিচারে উপভোগ্যতা নিয়ে।

দ্য ব্রোকেন ল্যান্ড

নিকলসন প্রথম যে ওয়েস্টার্ন ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তার নাম দ্য ব্রোকেন ল্যান্ড। ওয়েস্টার্ন ছবির তালিকায় বলুন আর জ্যাক নিকলসনের ছবির তালিকা, ছবিটি এতটাই ম্রিয়মান যে এর সম্পর্কে তথ্য পাওয়াই দুষ্কর। রোটেন টম্যাটোসে এই ছবিটি সম্পর্কে কোন রিভিউ নেই। ছবিতে জ্যাক নিকলসন একজন গানস্লিঙ্গারের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যে ছোট একটি শহরে এসে দুর্নীতিবাজ শেরিফের সাথে কোন এক ঝামেলায় জড়িয়ে জেলে ঢুকে পড়ে। একই ভাবে ঢুকে পড়ে আরও দুইজন। তাদেরকে বাঁচাতে মুক্ত করে দেয় সুন্দরী মাভেরা। তাদেরকে ধরার জন্য পেছনে ছুটে আসে শেরিফের নেতৃত্বে পসিদল।

দ্য ব্রোকেন ল্যান্ড: বামদিকে অপেক্ষাকৃত অগুরুত্বপূর্ণ স্থানে জ্যাক নিকলসনকে দেখা যাচ্ছে।

ছবিটি দেখলেই বোঝা যাবে কেন এই ছবিটি এত গুরুত্বহীন। গল্পে গভীরতা নেই, শক্ত কোন ভিত্তি নেই – হুট করে শুরু হয়ে শেষ হয়ে যাওয়া একটি গল্প। জ্যাক নিকলসনের চরিত্রটি প্রধান নয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি অভিনয়ের সুযোগ ছিল না ছবিতে, তাই আলাদা করে চেনার সম্ভাবনাও নেই। নিশ্চিত নই, তবে এ ধরনের ছবি প্রশিক্ষণ ফিল্ম হিসেবে নির্মান করা হলেই কেবল গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

দ্য শ্যুটিং

দ্বিতীয় যে ছবিতে জ্যাক নিকলসন অভিনয় করেন তার নাম দ্য শ্যুটিং। চরিত্রটি গানস্লিঙ্গারের, তবে গল্পে হাজির হতে সময় পার হয়ে যায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ। একজন রহস্যময়ী নারীকে অনুসরণ করে সে। নারীটি একজন সাবেক বাউন্টি হান্টারকে তার সাথীসহ নিয়োগ করে কিংসলে নামের এক জায়গায় পথ দেখিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু কোনভাবেই তার উদ্দেশ্য প্রকাশ করে না সে। একসময় বন্দুকবাজ জ্যাক নিকলসন যোগ দেয় তাদের সাথে।

দ্য শ্যুটিং: গানস্লিঙ্গারের চরিত্রে জ্যাক নিকলসন

নিকলসনের চরিত্রটি একজন নিষ্ঠুর বন্দুকবাজের, তবে গল্পের প্রধান চরিত্র সে নয়। প্রধান চরিত্র সাবেক বাউন্টি হান্টার উইলেট গ্যাশেট চরিত্রে ওয়ারেন ওটস। ঠিক ওয়েস্টার্ন গল্পের সাথে মিলবে না এই সিনেমার গল্প। তবে রোটেন টম্যাটোসের ভাষায় ১০০% ফ্রেশ। ছবিটি বড় আকারে থিয়েটারে মুক্তি পায় নি কখনো, সরাসরি টিভিতে প্রদর্শিত হয়েছে। অবশ্য কিছু সীমিত জায়গায় প্রদর্শিত হয়েছিল যা সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়।

রাইড ইন দ্য হোয়ার্লউইন্ড

রাইড ইন দ্য হোয়ার্লউইন্ড হল জ্যাক নিকলসন অভিনীত তৃতীয় এবং রচিত প্রথম এবং একমাত্র চলচ্চিত্র। ছবির শুরুতেই একটি স্টেজকোচ ডাকাতি সংগঠিত হয়। কিছু পরে সেই পথ ধরে তিনজন নিরীহ কাউবয় এগিয়ে যায়। দিনশেষে তারা আশ্রয় নেয় একটি কেবিনে। ঘটনাচক্রে সেই কেবিনের বাসিন্দারাই স্টেজকোচের ডাকাত। ভোরবেলায় পসি ঘিরে ফেলে কেবিন এবং তার বাসিন্দাদের। ফলে নিরীহ কাউবয় তিনজনও পসিদলের লক্ষ্যে পরিণত হয়।

রাইড ইন দ্য হোয়ার্লউইন্ড: ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে স্টেজকোচ ড্রাইভারকে – যাত্রাপথে তিন কাউবয় দেখছে তার লাশ

মাত্র ৯৪ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ছবিটির তিন কাউবয়ের একজন জ্যাক নিকলসন। গল্পের পরিসর বেশ ছোট কিন্তু শেষ পর্যন্ত আগ্রহ ধরে রাখার মত। জ্যাক নিকলসনকে অবশ্য আলাদা করে চেনার মত কোন অভিনয় ছবিতে নেই। রোটেন টম্যাটোস এই ছবিকে ১০০% ফ্রেশ বলে রেটিং দিয়েছে।

মজার তথ্য জানিয়ে রাখি, রাইড ইন দ্য হোয়ার্লউইন্ড এবং দ্য শ্যুটিং একই বছরে, ১৯৬৬ সালে, মুক্তি পায়। দুটো ছবির পরিচালকই মন্টি হেলম্যান। মন্টি একজন কাল্ট পরিচালক হিসেবে পরিচিত। জ্যাক নিকলসনের সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। দুটো ছবিরই প্রোডিউসার ছিলেন এই দুজন। মজার ব্যাপার হল, একই লোকেশনে প্রায় একই শিল্পী এবং কলাকুশলী নিয়ে পরপর দুটো চলচ্চিত্রের শ্যুটিং সম্পন্ন হয়। দুটো ছবির মাঝে মাত্র এক সপ্তাহ বিরতি ছিল। এই বিরতিতে শিল্পীরা লোকেশনেই অবস্থান করে। কেবল কিছু কলাকুশলী কারিগরি জিনিসপত্র আনা-নেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল।

নিকলসনের আরও দুটো ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্র রয়েছে। এর একটি দ্য মিসৌরি ব্রেকস ১৯৭৬ সালে এবং গোয়িং সাউথ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায়। মিসৌরি ব্রেকস একটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র। এই ছবিতে নিকলসন ছাড়াও আরেক গ্রেট অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো অভিনয় করেছেন। গোয়িং সাউথ চলচ্চিত্রটিও প্রথম তিন চলচ্চিত্রের তুলনায় কিছুটা গুরুত্ব পায়। কারণ এতদিনে নিকলসন তার পরিচিতি অর্জন করে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। দুঃখজনকভাবে এই দুইটি চলচ্চিত্র এখনো উপভোগ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি বলে বিস্তারিত আলোচনা থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই দুটো চলচ্চিত্র উপভোগ করার পর আপডেট করার ইচ্ছা থাকল।

 

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *