পরিচালক আবু শাহেদ ইমন প্রসঙ্গে

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর থিম সম্পর্কে আমার নিজস্ব একটা বক্তব্য আছে এবং সেটা আমি তার পরিচালিত ছবিগুলোর ব্লগে লিখেছি। কিন্তু এই নির্মাতা সম্পর্কে আমার আরও কিছু বক্তব্য আছে যা তার নির্মিত ছবি সম্পর্কে আমার ব্লগের বক্তব্যের বিপরীত। ‘বাংলাদেশী’ চলচ্চিত্র নির্মানের জন্য বর্তমানে হাতেগোনা যে অল্প ক’জন নির্মাতা আছে তাদের মধ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অন্যতম এবং এ কারণে তাকে আমি খুবই পছন্দ করি। একটু ব্যাখ্যা করে বললে, বাংলাদেশী বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মানে বলিউড তথা ভারতকে অনুকরণ করার যে প্রচেষ্টা সেই আশি-নব্বই দশক থেকে চলে আসছে তা বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোকে ঠিক বাংলাদেশী সিনেমা হিসেবে রূপ দেয় না, বরং বাংলা ভাষায় নির্মিত নিম্নমানের ভারতীয় সিনেমা হিসেবে চিহ্নিত করে।অল্প কিছু পরিচালক এই ধারা থেকে বের হয়ে এসে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা-স্টাইল ইত্যাদি তৈরীর চেষ্টা করেছেন এবং সম্ভবত তারেক মাসুদ এদের মধ্যে অগ্রপথিক এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অন্যতম। এই দুই নির্মাতাই ইরানী সিনেমা দ্বারা ভালোভাবে প্রভাবিত এবং তাদের নির্মানের পেছনে তারা ইরানী চলচ্চিত্রের মত নিজস্ব ভাষা-স্টাইল তৈরীর স্বপ্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেই বিশ্বাস করি।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কথা শুরুতেই বলার কারণ অবশ্য ভিন্ন। বিভিন্ন সময়ে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন এমন নির্মাতা যারা সাধারণত ভাই বেরাদার নামে পরিচিত তারাও ফারুকীর এই চিন্তার সাথে একাত্মতা পোষন করেন সম্ভবত। চলচ্চিত্র নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন এই ভাই-বেরাদার গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত কিনা আমি নিশ্চিত নই, কিন্তু মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে তার যে যোগাযোগ আছে সেটা টের পাই। ইমপ্রেসের বুটিক সিনেমা প্রকল্পের ছয় নির্মাতার একজন ছিলেন আবু শাহেদ ইমন, সেই প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক বা কোঅর্ডিনেটর এরকম কোন একটা ভূমিকায় ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আবার, পিঁপড়াবিদ্যা ছবির প্রিমিয়ারে বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে ফারুকীর সাথেই ছিলেন ইমন – মূলত এ সকল ঘটনা আমার এ চিন্তার পেছনের কারণ হিসেবে বলা যায়।

বাংলা মুভি ডেটাবেজ (বিএমডিবি)-র কাজ করতে গিয়ে আজ আবু শাহেদ ইমন সম্পর্কে ভালোভাবে জানার সুযোগ হল। তার পরিচালনায় নির্মিত জালালের গল্প ছবিটি ইতোমধ্যে কয়েকটা ফেস্টিভ্যাল ঘুরে এসেছে, চিত্রনাট্যের জন্য এশিয়ান ফান্ড পেয়েছিল, ফলে মুক্তির আগেই এই ছবি বেশ আলোচিত। বিএমডিবি-তে ইমনের প্রোফাইল তৈরী করতে গিয়ে তার গুণ এবং মেধা সম্পর্কে জানার সুযোগ হল। সেই সাথে তার একটি সাক্ষাতকারও পড়া হয়ে গেল।২০১২ সালে যখন ইমন কোরিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব আর্টসের শেষ বর্ষের ছাত্র তখন তিনি দ্য কন্টেইনার নামে চৌদ্দ মিনিটের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলেন যা পুরস্কারও জিতেছিল। সাক্ষাতকারটি সেই ছবি সম্পর্কেই।

কোরিয়ায় অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী বসবাসের জন্য কন্স্ট্রাকশন প্রজেক্টের আশেপাশে কন্টেইনারে বাস করেন। এতে করে তাদের বাসা ভাড়ার খরচটা বেঁচে যায়। ইমনের সাথে এমন একজনের পরিচয় হয়েছিল যিনি কন্টেইনারে থাকেন। কন্টেইনারে বসবাসের এই ঘটনা ইমনকে তার ফিল্মের গল্প তৈরীতে উদ্বুদ্ধ করে। গল্পে এক বাংলাদেশীকে পাওয়া যায় যে বাস করে কন্টেইনারে এবং অন্যের ফেলে দেয়া জিনিসপত্র দিয়ে তার সংসার সাজায়। কিন্তু এই মানুষটি অবৈধ অভিবাসী। ফলে সে একজন পলাতকও।

ছোট্ট কিন্তু হৃদয়স্পর্শী এই গল্পে কোন সংলাপ নেই। ইমন জানিয়েছিলেন প্রথমে তিনি সংলাপ রাখলেও পরে শ্যুটিং এর সময় বাদ দিয়েছেন। তিনি যে খুবই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেটা বোঝা যাবে ছবিটা দেখার সময়। জালালের গল্প ছবি সম্পর্কে কিছুই জানার সুযোগ এখনো তিনি দেন নি। তবে দ্য কন্টেইনার ছবি দেখার পর তার কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়ার জন্য বিশ্বাস রাখা যায়। জালালের গল্পের জন্য শুভকামনা। দ্য কন্টেইনার দেখতে পাওয়া যাবে এখানে।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *