মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়,
আসুন আমরা একটা খেলা খেলি। খেলাটা খুব সহজ – আমি আপনাকে কিছু করতে বলবো, আপনি সেগুলা করে যাবেন একের পর এক। খুব বেশী সময় লাগবে না এই খেলাটা খেলতে – সর্ব্বোচ্চ দশ মিনিট। খেলাটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আপনি এমন একটা বিষয় জানতে পারবেন যা না খেললে আপনি কোনদিনও জানতে পারবেন না। আগ্রহ বোধ করছেন? আসুন খেলি।
আপনার বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন মাননীয় মন্ত্রী। চোখ বন্ধ করুন। এবার গভীরভাবে দম নিন, ধরে রাখুন, এবার ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। আবার দম নিন, ছেড়ে দিন। ফ্রেশ লাগছে না?
এবার দ্বিতীয় পর্যায়ে যাচ্ছি আমরা। গভীর করে দম নিন। ধরে রাখুন। মনে করুন আপনার বুকের উপর বিশাল এক পাথর চেপে বসে আছে। বিশাল পাথর। এতই ওজনদার সেই পাথর যে আপনার দম ছাড়তে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চিন্তা করতে পারছেন? দমটা ছাড়ুন এবার মাননীয় মন্ত্রী। ছাড়তে কষ্ট হচ্ছে? আবার দম নিতে চেষ্টা করুন তো এবার। কষ্ট হচ্ছে দম নিতে? অন্ধকারটা গভীর মনে হচ্ছে আরও?
এবার ভাবুন আপনি দূর থেকে কিছু লোকের কথা শুনতে পাচ্ছেন। তারা কি বলছে সেটা আপনি বুঝতে পারছেন না, কিন্তু তারা যে চিৎকার করে ডাকছে সেটা আপনি শুনতে পাচ্ছেন। আপনার উচিত তাদের ডাকে সাড়া দেয়া। কিন্তু আপনার বুকের উপর না বিশাল একটা পাথর চাপা পড়ে আছে? আপনার না দম নিতেই কষ্ট হচ্ছে? আপনি সাড়া দেবেন কিভাবে মাননীয় মন্ত্রী?
ধরে নিন, এভাবেই কেটে গেল দুই তিন দিন। দুই তিন দিন কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী। এক জায়গায় বুকের উপর পাথর চাপা নিয়ে আপনি চিত হয়ে শুয়ে আছেন। একদিনে আপনি কয়বার বাথরুমে যান ভাবুন তো। শুয়ে শুয়ে আপনার কাপড়ে বাথরুম করতে হচ্ছে – এমনটা ভাবতে পারছেন?
খটাং- শব্দটা কানে এসেছে আপনার? একটুকরা আলো চোখের উপর পড়েছে? অনেক দূরে যে মানুষগুলো কথা বলছিল তাদের কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছেন? মনে করুন তাদের একজন আপনার সাথে কথা বলছে – আপনার নাম জিজ্ঞেস করছে – আপনাকে জুস খেতে দিচ্ছে একটু একটু করে। কতদিন পরে খেতে পাচ্ছেন বলুন তো? তিনদিন পার হয়ে গেছে কিন্তু এর মাঝে। তিনদিন পরে ক’ ফোটা জুস মাত্র?
খেলাটার আরেকটু বাকী মাত্র মাননীয় মন্ত্রী। চিন্তা করতে থাকুন- এইমাত্র যে লোকটি আপনার সাথে কথা বলছিল সে জানালো, আপনার বুকের উপর থেকে ভারী পাথরটা তারা সরিয়ে নিবে, তবে সে জন্য আপনাকে বিবস্ত্র করতে হবে। আপনার কি লজ্জা লাগছে? এতগুলো মানুষ আপনাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখবে – সেটা কি আপনি কল্পনায়ও কখনো ভেবেছিলেন? কিন্তু পাথরচাপা থেকে উদ্ধার পেতে আপনি কি এতটুকু করতে পারবেন না?
চোখ বন্ধ রাখুন মন্ত্রী মহোদয়। আমি জানি আপনার কষ্ট হচ্ছে। খেলার একদম শেষ দান এখন। আপনার বুকের উপরের পাথরটি সরিয়ে নেয়া হবে এখনই। কিন্তু একি! আগুন জ্বলে উঠল কিভাবে আপনার আশে পাশে? যে লোকগুলো আপনার বুকের পাথরটি সরিয়ে নেয়ার জন্য এতদূর এসেছিল, আপনাকে তিনদিন পরে একটু একটু করে জুস খাইয়েছিল সেই মানুষগুলো আগুন থেকে বাচাঁর জন্য দূরে সরে যাচ্ছে। আপনার চিৎকার তাদের কানে পৌছাচ্ছে না – আগুনের তাপ বাড়ছে- আপনার দম আটকে আসছে- পাথরের চাপ বাড়ছে, বাড়ছে আগুনের তাপ … তেতে উঠেছে সবটুকু – সহ্য করতে পারছেন আগুনের তাপ?
চোখ খুলে ফেললেন? এইটুকুও সহ্য করতে পারলেন না মন্ত্রী মহোদয়? আরেকবার চেষ্টা করুন। একবার খেললেই হবে। একবার পুরোটা খেললেই বুঝে যাবেন – কত কষ্ট নিয়ে একেকজন মানুষ মারা গেছেন। কত কষ্ট, জীবনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া – আমি নিশ্চিত মাননীয় মন্ত্রী, একবার পুরো খেলাটা খেলতে পারলে আপনি বাকী জীবনে আর কোনদিন ঘুমাতে পারবেন না, বাকী জীবনে আপনি আর কোনদিনই বলবেন না – সাভারের ঘটনা ‘তেমন বড় কিছু নয়‘।
একবার পুরোটা খেলে দেখুন না মাননীয় মন্ত্রী!