A Time to Kill

মেয়েটার নাম তানিয়া। বয়স দশ। দোকান থেকে সামান্য কেনাকাটা করে বাসায় ফিরছিল সে। একাকী। বিশোর্ধ উচ্ছৃঙ্খল দুটো লোক গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় দেখল মেয়েটাকে। বিয়ারের ক্যান ছুড়ে মারলো মেয়েটাকে। তারপর তার হাত বাধল, পা বাধল, তারপর নির্যাতন করল তাকে। তারপর রক্তাক্ত মেয়েটাকে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিল। কিন্তু তানিয়ার যন্ত্রনার সমাপ্তি হল না। ডালটা ভেঙ্গে পড়ল। তাই গাড়িতে করে নিয়ে গেল লোকগুলো। তারপর ত্রিশফুট নিচের নদীতে ছুড়ে ফেলল। এই পুরো সময়টায় তানিয়া শুধু তার বাবাকে ডাকল – বাবা! বাবা! বাবা! আপনি যদি হন এই তানিয়ার বাবা, তবে কি করবেন সেই লোকদুটোকে?

১৯৯৬ সালে জোয়েল শুমাখার পরিচালিত সিনেমা ‘আ টাইম টু কিল’ মুক্তি পায়। উপরের ঘটনাটি সেই সিনেমার ভূমিকার ভূমিকা। অপরাধী দুজন ধরা পড়ে। জামিনে মুক্তি পেয়ে যাবে জেনে তানিয়ার বাবা কার্ল লি হেইলি (স্যামুয়েল এল জ্যাকসন) একটা বন্দুক জোগাড় করে আদালতের ভেতরেই গুলি করে মারে দুজনকে এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। কার্ল লি’র কি হবে? পাঠক, আপনি যদি বিচারক হন তবে কি সিদ্ধান্ত নিবেন – মুক্তি নাকি দুজনকে খুন করার অপরাধে মৃত্যুদন্ড? আ টাইম টু কিল নামের কোর্টরুম ড্রামায় এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা পুরো সিনেমা জুড়ে।

কাহিনী এতটা সরল নয়। জটিল হয়ে উঠেছে এর সাথে সাদা-কালো রং এর মিশ্রনে। তানিয়া কালো, নিগ্রো, নিগার বা আফ্রিকান আমেরিকান। অন্যদিকে, অপরাধী দুজন সাদা। তানিয়াকে নির্যাতনের পেছনে এই বর্ণবিদ্বেষ প্রবল প্রভাবশালী। তানিয়ার বাবা কার্ল লি হেইলিকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে একজন সাদা – জেক ব্রিগেন্স (ম্যাথিউ ম্যাককনি)। বিচারকরা সাদা, জুরি বোর্ডের সদস্যরা সাদা। উগ্রবাদী সাদাদের দল কুখ্যাত কু ক্লাক্স ক্ল্যান (কেকেকে)** আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, নিম্নবিত্ত কার্ল লি-কে বাচানোর জন্য কালোরা একাত্ম হয়েছে। এতগুলো জটিলতা মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাড়াবে সিনেমা – সেটা বোঝার সুযোগ নেই।

জোয়েল শুমাখার তার ব্যাটম্যান মুভিসহ ফোনবুথ, দ্য নাম্বার টুয়েন্টি থ্রি ইত্যাদির কারনে বেশী পরিচিত। তার অন্যান্য সিনেমার তুলনায় এই সিনেমা একটু কম পরিচিত, কিন্তু বর্ণবাদের সেরা সিনেমাগুলোর তালিকায় এর নাম পাওয়া যাবে। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত জন গ্রিশামের উপন্যাস থেকে এই সিনেমার অ্যাডাপ্টেশন। বর্ণবাদের নোংরা রূপ তুলে আনতে কু ক্লাক্স ক্ল্যান-এর উপস্থিতি এই সিনেমার প্লটকে অনেক বেশী মজবুত করেছে। কার্ল লি-র উকিল জেক ব্রিগেন্সের সহকারী এলেন রোয়ার্কের (সান্দ্রা বুলক) প্রয়োজনীয়তা বোধহয় শুধু সিনেমার সৌন্দর্য বৃদ্ধি। সে হিসেবে সান্দ্রা বুলক মন্দ অভিনয় করেন নি। ম্যাথিউ এবং স্যামুয়েল এল জ্যাকসন আউটস্ট্যান্ডিং অভিনয় করেছেন।

শক্তিশালী সংলাপ, হৃদয়গ্রাহী কাহিনীর এই সিনেমা শেষ পর্যন্ত একটা উত্তর দিয়েছে। অপরাধীরা শাস্তি পাক। অপরাধী চিহ্নিত হোক তার অপরাধ দিয়ে – তার বর্ণ দিয়ে নয়।

**Ku Klux Klan (KKK) নামে এক ধরনের সম্প্রদায় গত শতকের আমেরিকায় গড়ে উঠে। প্রচন্ডরকম গোঁড়া খ্রীষ্টানদের একটা অংশ কালো চেহারার নিগ্রোদেরকে ‘এভিল’ হিসেবে গন্য করে, এবং তাদের উচ্ছেদের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। কালোদেরকে সহায়তাকারী সাদা চামড়ার লোকরাও তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হত। তাদের ‘গড’ ছিল সাদা।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

7 Comments on “A Time to Kill”

  1. টাইম টু কিল এ কষ্ট লাগছে, আসলে এই ব্যাপার গুলো প্রত্যক্ষ করলে সহ্য করতে পারিনা। 
     
    আজকেই কোর্ট-রুম ড্রামা ধরণের ওরসন ওয়েলস এর দ্য ট্রায়াল দেখলাম, সত্যি বলতে সিটিজেন কেনের মতন মাথার উপরে দিয়ে যাইতে নিছিল। 
     
    বর্ণ-বিদ্বেষ আর কু ক্ল্যাক্স ক্ল্যানের উপস্থিতি নিয়ে মিসিসিপি বার্নিং মুভিটা দেখছিলাম। জিন হাকম্যান ও উইলিয়াম ড্যাফো এর … সহ্য করতে কষ্ট হইছে খুবই।

    1. ধন্যবাদ আদ্রে।
      মন্তব্য করার জন্য। কমেন্টিং পদ্ধতি আবার পাল্টে দিলাম। কমেন্টিং এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না, শুধু ইমেইল আইডি দিলেই চলবে 🙂

  2. ‘কমেন্ট’ করার জন্য এ ব্যবস্থায় ফিরে আসায় ধন্যবাদ! বিশেষ প্রয়োজন দেখা না দিলে এ সব ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কী প্রয়োজন? (আমি যেমন নেট-প্রযুক্তিতে এখন পর্যন্ত ‘মূর্খ’। আমাদের দিকটা একটু তো বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই না?)

    1. হা হা হা। ধন্যবাদ হাসান শাফেঈ 🙂
      আসলে নতুন কমেন্টিং পদ্ধতি আরও সহজতর করার উদ্দেশ্য আনা হয়েছিল। ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লাস, লিংকড ইন ইত্যাদি আইডি দিয়ে লগিন করা যেত, কমেন্ট টুইটার এবং ফেসবুকে শেয়ার করা যেতে, ট্যাগ করা যেতে ইত্যাদি ইত্যাদি।
      তবে, সবার আগে ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়া দরকার – তাই পুরানো পদ্ধতিতে ফেরত 🙂

      1. আমার নামের বানান (হাসান শাফিঈ) বাংলায় গুণে গুণে ১০ বার লিখুন। এটা আপনার শাস্তি!!!

        1. কি অদ্ভুত ব্যাপার বলুন তো। প্রত্যেকবার লিখার সময় ভাবি এইটাই ঠিক, এইবার আর বলতে পারবেন না, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না 🙁

          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ
          হাসান শাফিঈ

          কপি পেস্ট নয়- গুনে গুনে লিখেছি 🙂

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *