বইয়ের নাম – গবেষণায় হাতেখড়ি: গবেষণায় আমরা কেউই কম যাই না, সমাজে যখন কোন ঘটনা ঘটে যায়, তখন আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘গবেষণা’ শুরু করে দেই। তবে, এই গবেষণা যে আত্মম্ভরি ছাড়া আর কোন ফল বয়ে আনে না, তার বুঝ আমাদের হয় না। তবে, এ দেশের কিছু মেধাবী ছেলে-মেয়ে সত্যিই গবেষণা করতে চায়। তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে আগ্রহী। কিন্তু প্রয়োজনীয় রিসোর্সের অভাবে শুরুটা তাদের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ‘গবেষণায় হাতেখড়ি’ বইটি মূলত তাদের উদ্দেশ্য করেই লেখা।
লেখক রাগিব হাসানের পরিচয়
এ বইয়ের লেখক বাংলাদেশি বিজ্ঞান গবেষক রাগিব হাসান। আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগে যখন প্রথম বাংলা ব্লগিং-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম, তখন থেকেই রাগিব হাসানের নাম শুনে আসছি। সম্ভবত তখন তিনি গুগলে চাকরি/ইন্টার্নশিপ করেন। এখন অবশ্য আর গুগলে নেই, বার্মিংহামের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামাতে কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
কম্পিউটার সিকিউরিটি, ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদি তার গবেষণার বিষয়। শিক্ষক ডট কম নামের অনলাইনে বাংলায় বিভিন্ন কোর্স করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তিনি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন। তার দেড়শ’র বেশি রিসার্চ আর্টিকেল থেকে তিন হাজারের বেশিবার সাইট করা হয়েছে। রাগিব হাসান যে ‘গবেষণায় হাতেখড়ি’ বইটি রচনার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশি উপযুক্ত লোক, তা তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি থেকেই বোঝা যাবে।
![রাগিব হাসানের গবেষণায় হাতেখড়ি বইয়ের প্রচ্ছদ](https://darashiko.com/wp-content/uploads/2020/10/Gobeshonay-hatey-khori-book-by-ragib_hasan_review.jpg)
গবেষণায় হাতেখড়ি বইয়ের বিস্তারিত
মোট ত্রিশটি অধ্যায়ে লেখক গবেষণার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারণা দিয়েছেন। গবেষণা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া শেষে গবেষণার বিষয় নির্বাচন, পরিকল্পনা, রিসার্চ পেপার পাঠ, প্রকাশ, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি সম্পর্কে নানা রকম পরামর্শ দিয়েছেন রাগিব হাসান। এই পরামর্শগুলো তিনি তার নিজের ছাত্রদের দেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে, গৎবাঁধা তত্ত্বকথার পরিবর্তে সলিড টিপস-এ ভর্তি এই বই।
আমরা গবেষণার ফলাফল দেখতে পাই সাধারণত কোন জার্নালে প্রকাশিত লেখা থেকে অথবা বিভিন্ন সভা সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধ/আলোচনা থেকে। কখনও এইসব ফলাফল সংবাদপত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থিত হয়। গবেষণার কাজটি কত বিস্তৃত এবং কত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এই গবেষণাপত্র তৈরি হয় সে বিষয়ে সবার ধারণা থাকে না। রাগিব হাসান তার বইতে সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরতে চেয়েছেন।
যেমন শুরুর দিকের অধ্যায়গুলোতে তিনি গবেষণার প্রাথমিক ধারণা প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশে গবেষণার প্রেক্ষিত, গবেষণা কিভাবে করতে হবে এবং গবেষণা শুরুর আগে যে বিষয়গুলো শিখে নেয়া উচিত সে ধারণা দিয়েছেন। গবেষণা করতে গেলে এ বিষয়ে অন্যান্য গবেষকরা কি বলেছেন সে ধারণা নেয়ার জন্য গবেষণা আর্টিকেল পড়তে হয়। এই আর্টিকেল পড়া খুব একটা সহজ কাজ নয় এবং অনেক সময় লেগে যায়। রিসার্চ আর্টিকেল কিভাবে পড়তে হবে সে বিষয়ে একটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আবার গবেষণার আইডিয়া কীভাবে পাওয়া যাবে, সেই আইডিয়াকে কীভাবে কাজে লাগানো উচিত, কী ধরনের জার্নালে লেখা প্রকাশ করা উচিত, লেখা প্রকাশের পর কী করা উচিত, গবেষণার খরচ কীভাবে জোগানো যাবে, সময়কে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে— এই পরামর্শগুলোও পাওয়া যাবে বইতে।
পাশাপাশি গবেষণার জন্য কী কী বিষয় সম্পর্কে শুরুতেই শিখে নেওয়া প্রয়োজন, তার নাম-ঠিকানাও বাতলে দিয়েছেন লেখক। মোদ্দা কথা, বাংলাদেশের স্নাতক পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে এমন ব্যক্তি যিনি দেশে কিংবা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী কিংবা সত্যিকারের গবেষণায় নিয়োজিত হতে চান— তার জন্য ‘গবেষণায় হাতেখড়ি’ হলো বাল্যশিক্ষা।
যারা গবেষণা সম্পর্কে ধারণা রাখেন কিন্তু কিভাবে পিএইচডি করবেন, প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করবেন বা সফল গবেষক হতে কিভাবে এগিয়ে যাবেন – সে বিষয়ে তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান বিতরণ করেছেন রাগিব হাসান। তার বইয়ের শেষের তিনটি অধ্যায়ের শিরোনাম হলো – খুদে গবেষকদের জন্য গবেষণা, হাতেকলমে গবেষণা, নবীন গবেষকদের বাড়ির কাজ। অধ্যায়গুলোর নাম দেখেই বোঝা যায় – শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান না দিয়ে হাতেকলমে শেখানোর চেষ্টা করেছেন লেখক।
মতামত
রাগিব হাসান মূলত ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে তার এই বইটি লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। ফেইসবুকে প্রকাশের জন্য লেখার দৈর্ঘ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়, না হয় পাঠক পাওয়া মুশকিল হয়। ফেইসবুকের পোস্টগুলোকেই বই আকারে নিয়ে আসার কারণে এই বইয়ের অধ্যায়গুলো ছোট, ফলে সব সময় তৃপ্তি মেটাতে পারেনি। তবে, আরও দীর্ঘ রচনা হলে পাঠকের সময় নষ্ট বেশি হতো, সাধারণ ধারণা পেয়ে গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার জন্য বইয়ের আকৃতি যথেষ্ট।
কভিড১৯ মহামারির কারণে সরকার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আদর্শ তাদের অনেকগুলো বইয়ের পিডিএফ কপি একটি গুগল গ্রুপে শেয়ার করেছিল। ‘গবেষণায় হাতেখড়ি’ বইটি সেই তালিকায় ছিল। বইটি প্রথম প্রকাশ হয় ২০১৫ সালে। এ বছরের জানুয়ারিতে ৩য় সংস্করণ প্রকাশ হয়। প্রকাশক কর্তৃক উদ্ধৃত তথ্য অনুযায়ী, বইটির সাড়ে ১২ হাজার কপি ছাপানো হয়েছে। সোয়া একশ’ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য আড়াইশ টাকা।
(Gobeshonay Hatekhori pdf, গবেষণায় হাতেখড়ি পিডিএফ ডাউনলোড, গবেষণায় হাতেখড়ি pdf, গবেষণায় হাতেখড়ি pdf download)