লার্নিং হাউ টু লার্ন

পেশাদারী ছাত্রজীবন শেষ করেছি অর্ধযুগের বেশি হয়ে গেল। তবে, শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি এখনও হয়নি। তাই আমার বিজ্ঞ পরামর্শদাতা, অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ও বাল্যবন্ধু নেজাম উদ্দিন যখন বলল, সে অনলাইনে লার্নিং হাউ টু লার্ন শিরোনামে একটি কোর্সে এনরোল করেছে এবং এই কোর্স ‘হাইলি রেকমেন্ডেড ফর টিচার্স এন্ড স্টুডেন্টস’, তখন ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র’ হিসেবে ‘হাউ টু লার্ন’ লার্ন করা আমার অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচনা করলাম।

অনলাইন কোর্স

কেবলমাত্র ওয়ার্ল্ড ‘ওয়াইল্ড’ ওয়েবে যাদের অবাধ বিচরণ তারা ব্যতীত প্রায় সকলেই জানেন, বর্তমানে অনেকগুলো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোর্স করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোকে বলা হয় Massive Online Open Courses বা MOOC। এমন বিষয় পাওয়া কঠিন যে বিষয়ে ফ্রি কোর্স করার সুযোগ নেই। কোর্স কারিকুলাম নির্দিষ্ট করে লেকচারগুলোর ভিডিওসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ ওয়েবসাইটেই দেয়া আছে, পছন্দ অনুযায়ী যে কোন কোর্সে এনরোল করলেই হলো।

কোর্সগুলো সাধারণত বিভিন্ন মডিউলে বিভক্ত, রয়েছে টপিক অনুযায়ী ‘টেস্ট’, যেখানে ‘মিনিমাম পার্সেন্টেজ’ নাম্বার না পেলে পাশ করা যায় না। আছে সার্টিফিকেটের ব্যবস্থাও। কাগুজে সনদের জন্য ডলারে পেমেন্ট করতে হয় (দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা), নাহয় পিডিএফ সফট কপি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক লেকচার শ্রবণ করা সার্টিফিকেটের জন্য আবশ্যক, ফাঁকি দেয়া না দেয়া একান্তই শিক্ষার্থীর ইচ্ছাধীন। এক কথায়, এই কোর্সগুলোতে সব কিছুই আছে, নেই কেবল ‘শিট’ নির্ভর পড়াশোনা, প্রশ্নফাঁস, নকল এবং জিপিএ ফাইভ! এরকম কিছু ওয়েবসাইট হলো কোর্সেরা, এডএক্স, ফিউচারলার্ন এবং ইউডাসিটি

লার্নিং হাউ টু লার্ন এর লেখক ও কোর্স পরিচালকবৃন্দ
লার্নিং হাউ টু লার্ন এর লেখক ও কোর্স পরিচালকবৃন্দ

লার্নিং হাউ টু লার্ন কোর্স

লার্নিং হাউ টু লার্ন কোর্সটি ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির অধীন, করা যাচ্ছে কোর্সেরা-তে। কোর্সের পরিচালক প্রফেসর ড. বারবারা ওকলে, তার সাথে আছেন প্রফেসর ড. টেরেন্স সেনস্কি। বারবারা বর্তমানে মিশিগানের ওকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রকৌশলবিদ্যার অধ্যাপক। তার প্রায় অর্ধডজন বই প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যেমাইন্ডশিপ এবং আ মাইন্ড অব নাম্বারস সারা বিশ্বে বেশ বিখ্যাত। লার্নিং হাউ টু লার্ন কোর্সটি মূলত এই বইগুলোরই একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। অন্যদিকে টেরেন্স বা টেরী সেনস্কি একজন নিউরোবায়োলজিস্ট এবং বারবারার দুই একটি বইয়ের সহলেখক। বর্তমানে তিনি মিশিগানের সাল্ক ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল স্টাডিজে কম্পিউটেশনাল নিউরোবায়োলজি ল্যাবরেটরীর পরিচালক হিসেবে কর্মরত।

লার্নিং হাউ টু লার্ন বই

লার্নিং হাউ টু লার্ন শিরোনামে বারবারা ওকলের একটি বইও আছে। এই বইটি মূলত স্কুল শিক্ষার্থীদেরকে উদ্দেশ্য করে লেখা। পাঠক যেন সহজে মস্তিষ্ক এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সহজে বুঝতে পারে সে জন্য বারবারা এবং টেরী ছাড়াও এই বইয়ের আরেকজন লেখক আছেন, নাম অ্যালিস্টার ম্যাককনভিলে বা সংক্ষেপে অ্যাল। তিনি একজন স্কুল শিক্ষক, ইংল্যান্ডের একটি স্কুলে ধর্ম এবং দর্শন শিক্ষা দেন তিনি। ভাষা নিয়ে তার বিশেষ দক্ষতা থাকলেও বিজ্ঞান বিষয়ে বেশ ঘাটতি ছিল।

অ্যাল বারবারা ওকলের আ মাইন্ড ফর নাম্বারস পড়ে মানুষের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে এবং কি কি টেকনিক অনুসরণ করলে যে কোন বিষয় ভালোভাবে শেখা যায় তা শিখেন এবং নিজের জীবনে কাজে লাগিয়ে হাই স্কুলের রসায়ন বা কেমিস্ট্রি বিষয়ে পড়াশোনা করে দক্ষতা অর্জন করেন। বলা যায়, বারবারার বইয়ের বাস্তব উদাহরণ হলেন অ্যাল। বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়গুলো কিভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে সহজভাবে উপস্থাপন করা যায় সে বিষয়ে তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান নিয়ে বারবারা এবং টেরীর সঙ্গী হয়েছেন তিনি।

বইয়ের বিভিন্ন বিষয়কে উপস্থাপনের জন্য বারবারা, টেরী এবং অ্যাল এর ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মগজের কঠিন বিষয় যেন বাচ্চা শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে সেজন্য বাচ্চাদের উপযোগী বিভিন্ন মেটাফোর ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো বইটিতেই যে টিপসগুলো দেয়া হয়েছে তার ব্যবহারও নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কারণে প্রত্যেক অধ্যায়ের আগে ও পরে পাঠকের উদ্দেশ্যে বিভিন্নরকম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মজার ব্যাপার হল, এই নির্দেশনাগুলোকে উপেক্ষা করে গেলে অন্যান্য যে কোন বইয়ের মতই পাঠ শেষ হবার কিছুদিন পরে পরামর্শগুলো ভুলে যেতে হবে। আর, নির্দেশনাগুলো মেনে নিয়ে যা করতে বলেছে সেভাবে করা সম্ভব হলে এই বইয়ের পরামর্শগুলো যেমন মনে রাখা সম্ভব হবে, তেমনি একই পদ্ধতি জীবনে অন্য যে কোন কিছু শেখার জন্য ব্যবহার করেও উপকৃত হওয়া যাবে।

জানি, উল্লেখ না করলেও পাঠকদের বুঝতে কষ্ট হবে না, তারপরও বলি, লার্নিং হাউ টু লার্ন বইয়ে উপস্থাপিত পরামর্শগুলোর সবগুলোই বিজ্ঞানসম্মত এবং সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল অনুসরণ করেই দেয়া। পাশাপাশি, এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির ঘটনাবলীকে এবং তাদের কাছ থেকে কিছু পরামর্শ উদ্ধৃত করা হয়েছে।

সফলতার উদাহরণ

এদের অন্যতম হলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নিউরোসায়েন্স বিজ্ঞানী সান্টিয়াগো রামোন-ই কাহল এবং নেলসন ডেলিস। নেলসন আমাদের মতই একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন, দোকান পাঁচ/ছয়টি জিনিস কিনতে গেলেও কিছু না কিছু বাদ পড়ে যেতো। সেই নেলসনই পরবর্তীতে চারবার ইউএস মেমরী চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জিতেন এবং রিমেম্বার ইট শিরোনামে বইও লিখেন। কোন একটি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রাউন্ডে প্রতিযোগীদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল অল সময়ের মধ্যে দুই সেট তাস (১০৪টি) মুখস্ত করা। নেলসনই সেটা সঠিকভাবে করতে সক্ষম হয়েছিলেন!

লার্ন হাউ টু লার্ন বই পড়া এবং কোর্স – দুটোই আমি করেছি৷ বন্ধু নেজামের মত তাই আমিও বলবো, ‘হাইলি রেকমেন্ডেড’ – ফর এনি কাইন্ড অব লার্নার্স! সময় থাকলে দুটোই করতে পারেন অথবা বয়স ও মাধ্যম অনুযায়ী যেটা পছন্দ হয়। লার্নিং হাউ টু লার্ন কোর্স লিংক এখানে। আর বইয়ের পিডিএফ ও ই-পাব সংস্করন পাবেন এখানে। ধন্যবাদ।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

2 Comments on “লার্নিং হাউ টু লার্ন”

    1. পাঠিয়ে দিয়েছি বস। আর পোস্ট আপডেট করে পোস্টেই ডাউনলোড লিংক জুড়ে দিলাম, কারও প্রয়োজন হলে নিতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *