ডুব নিষিদ্ধ/স্থগিত বিতর্কঃ প্রকৃত ঘটনা কি?

ডুব - নো বেড অব রোজেস সিনেমায় লেখক জাভেদ হাসান
ডুব – নো বেড অব রোজেস সিনেমায় লেখক জাভেদ হাসান চরিত্রে ইরফান খান

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মুক্তিপ্রতিক্ষিত সিনেমা ডুব – নো বেড অব রোজেস নিয়ে বিতর্কের শুরু হয়েছিল কলকাতার আনন্দবাজারে সংবাদ প্রকাশের পর। হুমায়ূন আহমেদের জীবনী অবলম্বনে ডুব নির্মিত হয়েছে এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রথমে গুঞ্জন এবং হুমায়ূন-পত্নী মেহের আফরোজ শাওনের তীব্র প্রতিবাদ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে উঠেছিল সেসময়।

মাঝে কিছুদিন ঠান্ডা থাকার পর গতকাল থেকে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এই ইস্যু। ডুব মুক্তির ব্যাপারে যৌথ-প্রযোজনার প্রিভিউ কমিটি অনাপত্তি পত্র ইস্যুর একদিন পরেই তথ্য মন্ত্রনালয়ের আদেশে অনাপত্তিপত্র বাতিল করেছে  – এই নিয়ে বেজায় শোরগোল চলছে। কিন্তু এ সকল ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে কিছু ঘাপলাও রয়েছে।

ভ্যারাইটি-তে ডুব

অনাপত্তিপত্র বাতিলের সংবাদটি সর্বপ্রথম প্রকাশ করেছে ভ্যারাইটি ডট কম। বাংলাদেশের যৌথ-প্রযোজনা প্রিভিউ কমিটি অনাপত্তিপত্র বাতিল করেছে এই সংবাদ বাংলাদেশের কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নি। ভ্যারাইটি পত্রিকায় প্রকাশের পরও দেশের কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নি, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভ্যারাইটির লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার পরে দেশের পত্রিকাগুলো সংবাদ প্রকাশ করেছে। অবশ্য এ ঘটনা প্রথম নয়। ফারুকীর পরবর্তী চলচ্চিত্র হলি বেকারী সম্পর্কে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করেছিল ভ্যারাইটি এবং এ নিয়ে কথাও উঠেছিল। হুমায়ুন আহমেদের জীবনী অবলম্বনে ডুব নির্মিত – এমন সংবাদও প্রথম দেশের কোন পত্রিকা ছাপায় নি, ছাপিয়েছে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। কেন এমনটি হচ্ছে?

বিদেশী পত্রিকায় কিভাবে

বাংলাদেশ ও বিশ্বের সিনেমা নিয়ে সচলায়তন এবং ফেসবুক পেইজে ‘সিনেমা দেরীতে’ নামে লিখেন, এমন একজন ব্লগার দাবী করেছেন (পোস্টটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে) ভ্যারাইটি পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশের পেছনে ফারুকী নিজেই জড়িত। তিনি এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্যও হাজির করেছেন। সবচে গুরুত্বপূর্ণ হল – ডুব নিষিদ্ধ হয় নি কিন্তু ভ্যারাইটি ‘ব্যান’ শব্দটি ব্যবহার করেছে।

সিনেমা দেরীতে সম্ভবত ভুল করেন নি, কারণ বাংলা ট্রিবিউন জানাচ্ছে – আনন্দবাজারে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য স্বয়ং ফারুকীই জানিয়েছিলেন। রিপোর্টার ইন্দ্রনীল রায়ের উদ্বৃতি দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন লিখেছে,

ফারুকীর ছবিটির গল্প হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবন থেকেই নেওয়া, এ বিষয়ে দ্বিধার কোনও অবকাশ নেই। কারণ, আনন্দবাজারে যে প্রতিবেদনটি আমি করেছি, সেটার খবর পরিচালক ফারুকী নিজেই আমাকে জানিয়েছেন। তিনি না জানালে বাংলাদেশের খবর আমি পাবো কোথা থেকে?

প্রচারণার অংশ?

সংবাদগুলো কেন প্রথমে বিদেশী কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে তা নিয়ে একটি কারণ ধারনা করা যায়। প্রচারণা। ডুব একটি যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র। বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর আরও দেশে একইসাথে ১৪ এপ্রিল তারিখে মুক্তি দেয়া হবে – এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে ছবির অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার ফেসবুক পেইজ থেকে ঘোষনা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে ফারুকীর সিনেমার একটি বাজার রয়েছে – ডুব সিনেমার কাহিনী বা অন্যান্য ঘটনাপ্রবাহের সাথে এর বাজারের সম্পর্ক ইতিবাচক, ঘটনা ঘটুক বা না ঘটুক – ফারুকীর সিনেমা চলবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সেরকম নয়। ইরফান খানের কিছু দর্শক থাকলেও ভারতে সিনেমা ব্যবসা করার অন্যতম প্রধান শর্ত হল – ভালো প্রচারনা। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সেখানে যতটা পরিচিত তার চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের বেশি পরিচিতি আছে। বলা হচ্ছে – ডুব এর বাজেট এগারো কোটি টাকা। ফলে এই সিনেমার প্রচারনার জন্য দেশি পত্রিকার তুলনায় বিদেশী পত্রিকার সহায়তা নেয়া খুবই প্রাসঙ্গিক।

শাওন-ও কি এর অংশ?

তবে কি মেহের আফরোজ শাওন -ও এই প্রচারণা কার্যক্রমের অংশ। হতে পারে, নাও পারে এবং না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারনা হল – ডুব সিনেমার সাথে হুমায়ূন আহমেদের কোন সংযোগ নেই। একজন লেখকের সাথে কন্যার বয়সী কোন তরুনীর প্রেম নিয়ে সিনেমার গল্প হতেই পারে, তা যে হুমায়ূন আহমেদের জীবনের গল্প হতে হবে তার বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাদেশ এবং কলকাতায় হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় বিবাহ সংক্রান্ত ঘটনাবলী এতটাই পরিচিত যে যে কোন লেখকের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনায় হুমায়ূন আহমেদের ঘটনা মনে পড়া স্বাভাবিক।

ডুব সিনেমা নির্মান হয়ে গেছে। নির্মাতাগোষ্ঠীর বাহিরে এই সিনেমা দেখেছেন যৌথ প্রযোজনা প্রিভিউ কমিটি। এখন পর্যন্ত তাদের কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলেন নি। একমাত্র তারাই এখন বলতে পারেন – ডুব প্রকৃতপক্ষে হুমায়ূন আহমেদের জীবন অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা কিনা। সিনেমা মুক্তির আগে এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যাবে না এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়। সুতরাং সিনেমার মুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *