আমি চশমা পড়ি না। যারা চশমা ব্যবহার করেন চশমা ছাড়া তাদের কেমন লাগে তা জানার ব্যাপারে আমার বিস্তর আগ্রহ ছিল। ২০০৫ এর আগে আমি বহু মানুষকে জিজ্ঞেস করেছি – চশমা ছাড়া কিরকম দেখতে পান? দু’ধরনের উত্তর পেয়েছি। কেউ কাছের জিনিস দেখতে পান না, কিন্তু দূরের জিনিস দেখতে পান, বাকীরা উল্টো। পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে খুবই বিস্ময়কর। একই ব্যক্তি কিভাবে কাছের জিনিস দেখতে পান না অথচ দূরের জিনিস দেখতে পান? ২০০৫ সালে রাব্বুল আলামীন আমাকে এই অবস্থা থেকে মুক্তি দেন। আমার ‘চোখ উঠে’।
চোখ উঠা রোগে সুস্থ্য হতে ওষুধ খেলে সাতদিন আর না খেলে একসপ্তাহ লাগে – আমার তিন সপ্তাহ পরেও চোখ ঠিক হল না। এবার চোখের ডাক্তারের কাছে গেলাম – অ্যাটেন্ডেন্ট ভদ্রমহিলা আমার চোখে চশমা পড়িয়ে এক চোখ ঢেকে দিয়ে দূরে রাখা চার্ট পড়তে দিলেন – আমি পৃথিবী সমান বিস্ময় নিয়ে আবিস্কার করলাম – চার/পাঁচ সারি বিভিন্ন আকৃতির বর্ণমালার দেড় সারি পর্যন্ত আমি দেখতে পারি, বাকীটা ঝাপসা! চোখে আলসার হয়ে গিয়েছিল – আরও তিন সপ্তাহ মলম ও ট্যাবলেট সেবন শেষে আমি বোর্ডের সব অক্ষর স্পষ্টভাবে দেখতে শুরু করেছিলাম। লাল চোখ ঘষতে গিয়ে আমার চোখের ফোকাসিং রিংটা উলট পালট হয়ে কিছু অংশ আউট-অব-ফোকাসে চলে গিয়েছিল, ডাক্তারের সহায়তায় আবার ফোকাস ঠিক করা গেল।
ফোকাস করার এই ব্যাপারটা ২০০৭ এ পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যায় – ক্যামেরার প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতে গিয়ে। ফ্রেমের নির্দিষ্ট অংশের প্রতি দর্শকের মনযোগ আকর্ষনের জন্য ‘ফোকাস’ খুব ভালো একটি উপায়। ফ্রেমের পুরোটা ব্লার থেকে যাবে, কিন্তু পরিচালকের পরিকল্পনানুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অংশ স্পষ্ট থাকবে – দর্শকও সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে – পরিচালকের উদ্দেশ্য সফল হবে। ক্যামেরার এই ‘ফোকাস’ এর ব্যবহার জীবনের ক্ষেত্রেও বহুল ব্যবহৃত।
জীবনের লক্ষ্য কি হবে, কি করতে চাই, কি হতে চাই – ইত্যাদি মিলিয়ে জীবনের ফোকাস। ঠিক এইম ইন লাইফ নয়, কারণ রচনায় এইম ইন লাইফের নানাবিধ উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হলেও বাস্তবে বেশীরভাগ, প্রায় সবারই, এইম ইন লাইফ হল – এটিএম মেশিন হওয়া, খোঁচা দিলেই যেন টাকা পড়ে। ফোকাস ব্যাপারটা আরেকটু ভিন্ন কিছু। এটিএম মেশিন হতে হলে কি করতে হবে, এটিএম মেশিন হওয়ার পরে কি করা হবে, কেন করা হবে ইত্যাদি মিলিয়ে জীবনের ফোকাস, এটিএম মেশিন ওই ফোকাস নিখুঁত করার একটি উপায় হতে পারে।
একটি প্রেম করা, কিংবা একটি সরকারী চাকরী পাওয়া জীবনের ফোকাস হতে পারে না। তেমনি একটি প্রেম করা, একটি সরকারী চাকরি পাওয়া, একটি বাড়ি করা, একটি কোম্পানির ডিরেক্টর হওয়া – ইত্যাদিও ফোকাস হতে পারে না। এর সাথে বরং অ্যামেচার ফিল্মমেকারদের ডিএসএলআর ক্যামেরায় ইচ্ছেমত ফোকাস-ব্লার করার সাথে মিলে যায়। একটু ভেবে নেয়া উচিত – সেট ইয়োর ফোকাস, দেন রান ইয়োর ফিল্ম।
ফোকাস ঠিক করার পরও নানা কারণে ফোকাস রিং নড়েচড়ে যেতে পারে, সেট করা ফোকাস ব্লারড হয়ে যেতে পারে। জীবনের সেই সময়টা খুব কঠিন, অসহ্য। কিভাবে সামলে উঠে রি-ফোকাস করতে হবে জানি না এখনো, ফলে ডি-ফোকাসড হয়ে হাতড়ে ঘুরছি আপাতত। ফোকাসড হতে পারলে জানিয়ে দেবো।