একজন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী

সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী
ঘুড্ডি নামের রোমান্টিক সিনেমার পরিচালক তিনি। বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক এবং এসএ টিভির বর্তমান সিইও – তিনি সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। (ছবি: বাংলানিউজ)

বাংলাদেশের সেরা রোমান্টিক চলচ্চিত্রগুলোর তালিকা তৈরী করুন – ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি‘কে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারবেন না। ‘ঘুড্ডি’ চলচ্চিত্র যদি চিনতে না পারেন তবে ঘুড্ডি সিনেমার একটি গানকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই – লাকী আখন্দের সুরে, হ্যাপী আখন্দের কন্ঠে মুখ মিলিয়ে উদোম গায়ে শশ্রুমন্ডিত এক যুবক তার প্রেমিকাকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে নেচে নেচে গায় –

আবার এলো যে সন্ধ্যা, শুধু দু’জনে
চলো না ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে।।

এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গুণী অভিনেতা গোলাম মোস্তফা-কন্যা সুবর্ণা মোস্তফা যাত্রা শুরু করে। কালজয়ী রোমান্টিক চলচ্চিত্রে সুবর্ণাকে যিনি নিয়ে আসেন, তিনি সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী – সুবর্ণার মত ‘ঘুড্ডি’ও তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের সংলাপ রচনা করার জন্য জাকী পরবর্তীতে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ক্যাটাগরীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন।

একজন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী

‘ঘুড্ডি’ পরিচালকের প্রথম চলচ্চিত্র হলেও তিনি অনভিজ্ঞ ছিলেন না। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথম সরকারী বৃত্তি নিয়ে ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়তে যান দুজন – এদের একজন হলেন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। অন্যজন বাদল রহমান, যিনি পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ নির্মান করেন।

সৈয়দ জাকী সম্পর্কে আরও কিছু জানা যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর পর কতিপয় যুবক, যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, দেশের জন্য কিছু করার আগ্রহে উদ্দীপ্ত হয়ে ছিলেন। দেশের জন্য কিছু করার প্রচন্ড আগ্রহে তারা একটি থিয়েটার গ্রুপ তৈরী করেন। প্রায় একচল্লিশ বছর আগে স্থাপিত সেই থিয়েটারের নাম ‘ঢাকা থিয়েটার’, মুক্তিযোদ্ধা সেই যুবকদের মধ্যে ছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শফিকুর রহমান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, সেলিম আল দীন এবং আরও কিছুর মধ্যে একজন সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী।

সালাউদ্দিন জাকী ‘ঘুড্ডি’ ছাড়াও আরও দুটো চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন – ১৯৯০ সালে আলমগীর ও রোজিনাকে নিয়ে ‘লাল বেনারসী’ এবং ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অঞ্জু ঘোষকে নিয়ে ‘আয়না বিবির পালা’। ফিল্মোগ্রাফিতে এই তিনটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র – দেয়াল, তামাশা, গল্পদাদুর গল্পকথা, অংকুর ইত্যাদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার ছাত্র জাকী ‘ঘুড্ডি’ নির্মানের পর ১৯৮১ সালে এফডিসি-তে অপারেটিভ ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর – দেশ ছেড়ে প্রায় দশ বছর কানাডায় প্রবাস জীবন যাপন করেন। বর্তমানে সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী বেসরকারী টিভি চ্যানেল এসএ টিভির সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী একজন গুণী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। চলচ্চিত্র নির্মানের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ থাকার পরেও তিনি কেন মাত্র তিনটি চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন, কেন ১৯৯১ সালের পর থেকে গত ২৩ বছরে আর একটিও চলচ্চিত্র নির্মান করেন নি – অভিমানী স্বরে এই প্রশ্ন করা গেলেও এই প্রশ্ন করবো না। গুণী এই নির্মাতা গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে ব্যাংককের হাসপাতালে ‘লাইফ সাপোর্টে’ আছেন। একজন সালাহউদ্দিন জাকী-র জন্য শুভকামনা!

আপডেট: এই লিখাটি ২০১৪ সালে লেখা হয়েছিল। জনাব জাকী ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ২০২২ সালে তিনি আরেকটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, নাম যা হারিয়ে যায়।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *