আমি (মনে মনে) ছবির এই আম্মা’র কপালে একটি চুমু খেয়েছি। আম্মার নাম খাদিজা বেগম (৪৫), বাড়ি যশোর। গত কয়েকদিন ধরে তিনি পত্রিকার পাতায় ঘুরে ফিরে আসছেন। কারণ, তিনি একটি বড় দা (হাসুয়া) দিয়ে কুপিয়ে মফিজুর রহমান মফি নামের এক কুত্তার বাচ্চাকে খুন করে ফেলেছেন। খুন করা ছাড়া তার আর কোন উপায় ছিল না। তার ক্লাস এইটে পড়া মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছিল মফি; থানায় জিডি, এলাকার মেম্বার, রাজনৈতিক নেতার কাছে সাহায্য চেয়েও আম্মা কোন সাহায্য পান নি।
‘মফি আমার বোনের ননদের মেয়েকে প্রথম বিয়ে করে। ঐ ঘরে তার চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ে কলেজে পড়ে। তারপরও সে কোটচাঁদপুরে গিয়ে আমার বোনের মেয়ে রুনাকে উত্ত্যক্ত করত। সেখান থেকে রুনার বাবা-মা রুনাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। আমার বাড়িতে এসেও মফি তাকে বিরক্ত করত। একটা সময় রুনা বাধ্য হয়ে মফিকে বিয়ে করে। এরপর মফি আমার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। সে সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে নিয়ে মাঝেমধ্যেই বাড়িতে এসে শাসাত এবং বিয়ের জন্য চাপ দিত। এ অবস্থায় মাসখানেক আগে মেয়েকে আমার মেজ ছেলের ( রাজমিস্ত্রী) কাছে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই। ঘটনার দিন মাগরিবের নামাজের পর কোরআন শরীফ পড়ছিলাম। এ সময় মফি ঘরে ঢুকে আমার মেয়ে কোথায় তা জানতে চায় এবং এখনই মেয়েকে তার হাতে তুলে দিতে বলে। এ সময় কৌশল করে রান্নাঘর থেকে বেটে রাখা মরিচ এনে মফির চোখে লাগিয়ে দেই। এরপর হাসুয়া (বড় দা) দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করি।’ – সাংবাদিকদের সাথে আম্মা বলেছেন এই কথা।
আম্মার শেষ কথাটা দামী – ‘ইজ্জতের মালিক আল্লাহ। আল্লাই রক্ষা করবে। খুন করে আমি কোনো ভুল করিনি। আমার কষ্টটা আমার মত মায়েরাই একমাত্র বুঝতে পারবেন।’
আপডেট:
গত ২৩ মার্চ তারিখে লেখা পোস্ট এটি। আজ ১৩ এপ্রিল তারিখে আপডেট নিউজ পাওয়া গেল বাংলামেইল-এ। পড়ার সুবিধার্থে কপি-পেস্ট করছি।
একমাস কারাভোগের পর অবশেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন যশোরের আলোচিত মা খাদিজা বেগম। রোববার যশোরের জেলা ও দায়রা জজ ড. গোলাম মোর্তজা মজুমদার জামিন মঞ্জুর করলে সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি পান খাদিজা।
গত ১২ মার্চ রাতে মেয়ের সম্ভ্রমরক্ষায় উত্যক্তকারীকে খুনের ঘটনায় তিনি আটক হয়েছিলেন। আদালতে খাদিজার পক্ষে মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্টের হয়ে শুনানিতে অংশ নেন বিশিষ্ট আইনজীবী কাজী আব্দুস শহীদ লাল এবং সংস্থাটির আইন কর্মকর্তা মোস্তফা হুমায়ুন কবীর।
রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল কাদের জামিনের বিরোধিতা করলে আসামি পক্ষের আইনজীবী মোস্তফা হুমায়ুন কবীর আদালতকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু আসামির জামিনে বাধা দেয়া নয়। মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’ এক পর্যায়ে আদালত ১০ হাজার টাকা জামিনে অ্যাড. কাজী আব্দুস শহীদ লাল ও অ্যাড. মোস্তফা হুমায়ুন কবীরের জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে বেলা ১১ টার দিকে খাদিজার মুক্তির দাবিতে শহরতলীর ভেকুটিয়ার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেন।
গ্রামবাসীর দাবি, শুধু খাদিজা নয়, মেয়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে গোটা গ্রামবাসীই পিটিয়ে মেরেছে মফিজুরকে। তাই আটক করতে হলে সবাইকেই আটক করা হোক।