আমাদের ফ্ল্যাটে রান্না বান্না করে আমাদের খাওয়ান যে বুয়া তাকে আমরা খালা ডাকি। বয়স্ক মহিলা। রান্না কেমন করেন সেটা নিয়ে মতভেদ আছে, তবে প্রায় আড়াই বছর ধরে আমাদেরকে রান্না করে খাওয়াচ্ছেন তিনি।
আমি অফিসে আসার সময় বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসি। তাই সকালবেলা এসে তিনি ভাত-তরকারী রান্না করে দেন। খাবার নিয়ে আসা শুরু করেছি বেশীদিন হয় নি, কিন্তু শুরু করার পরপরই আবিষ্কার করলাম – খালা দারুন রান্না করেন! দুপুরে অফিসে বসে খাওয়ার জন্য তিনি যে স্টাইলে রান্না করেন তা গত আড়াই বছরে বাসার সবার জন্য রেগুলার রান্নায় একটিদিনের জন্যও পাই নি। বিশেষ করে, আলু দিয়ে মুর্গির তরকারী রান্না এত চমৎকার হয় যে – ওই রান্না খাওয়ার জন্য অফিসে আসতেও আমার আপত্তি নেই।
গতকালকের ঘটনা। সকালে তৈরী হচ্ছি, খালা জানিয়ে গেলেন – খাবার তৈরী, না নিয়ে যেন অফিস চলে না যাই। একটু অবাক হওয়ার ঘটনা। কারণ গত পরশুদিন নানা কারণে বাসায় বাজার হয় নি, রান্নাবান্নাও হয় নি। সুতরাং, গতকাল সকালে খাবার নিয়ে আসতে পারবো না এমনটিই স্বাভাবিক, আমিও মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। খাবার তৈরী জেনে খালাকে ধরলাম – কোত্থেকে আসলো খাবার? জবাব শুনে আমি অবাক। অফিসে খাবো বলে খালা নিজের বাসা থেকে এক পিস ইলিশ মাছ এবং আনুষঙ্গিক তরকারী নিয়ে এসেছেন, সকালে সেগুলো রান্না করে লাঞ্চবক্স সাজিয়ে দিয়েছেন। লাঞ্চটাইমে মজা করে ইলিশ মাছ এবং ডাল-আলুর চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খেলাম।
খালার এই যে খাতির, সেটা স্পেশালী আমার জন্যই। আরও কিছু উদাহরণ দেই। গেল সপ্তাহেই সকালে গোসল শেষ করে রুমে ঢুকে দেখি টেবিলের উপর একটি কলা রাখা। কে দিয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয় – খেয়ে নিলাম। এর আগে পেয়েছি সে তালিকায় আছে আম, আমড়া, কলা, আনার, আনারস, মিষ্টি ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য আরও কিছু সুবিধা তো পাওয়া যাচ্ছেই – সেগুলো আর না বলি (ফ্রেন্ডলিস্টে বাসার অন্যান্য সদস্যরা আছেন)।
আমার প্রতি খালার এই স্পেশাল খাতিরের কারণ কি সেটা আমি জানি, সেটা আরেকদিন বলা যাবে। ততদিন অপেক্ষা করতে না চাইলে খালার ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে আসতে পারেন।