বিয়ের দেড় বছরের মাথায় নাসিরের বউ যখন একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিল তখন রাজুর ছেলের বয়স দুই সপ্তাহ। রাজু আর নাসির একই অফিসে চাকরী করে – নাসির পিওন আর রাজু ড্রাইভার। সন্তানের বাবা হওয়ার মাধ্যমে নাসির আর রাজুর মধ্যকার অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় রাজু হঠাৎ এক ধাপ এগিয়ে গেল নাসিরের কল্যাণে। বিজয় উল্লাসে মত্ত রাজু নাসিরকে কৃত্রিম সহানুভূতি জানালো এভাবে – ‘নাসির, প্রথম বাচ্চা ছেলে না মেয়ে তার উপর নির্ভর করে পরের বাচ্চা ছেলে হবে না মেয়ে হবে। তোমার তো প্রথমটা মেয়ে হয়েছে, এখন তোমার শুধু মেয়ে হবে – দুইটা, তিনটা, চারটা মেয়ে, তারপর ছেলে হবে। আমার তো প্রথম বাচ্চাটা ছেলে – এখন আমার শুধু ছেলে হবে, দুইটা, তিনটা, চারটা ছেলে। তারপর যদি মেয়ে হয় আরকি। তুমি দুশ্চিন্তা কইরো না, আল্লাহ ভরসা’
এই কথায় নাসিরের মুখে কালবৈশাখির মেঘ জমা হয়। অফিসের স্যাররা যখন হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে – কি নাসির- ছেলে না মেয়ে?, নাসির তখন ঘন অন্ধকার মুখ মাটিতে লাগিয়ে গোমড়া মুখে বলে – মেয়ে স্যার! অফিসের স্যাররাও ধমক দেয় – মেয়ের বাপ হওয়া কত ভাগ্যের, জানো? জানো ইসলামে মেয়ের বাপ সম্পর্কে কি বলছে? দুয়েকটা হাদীসও শুনিয়ে দেয় তারা, কিন্তু নাসিরের মুখ থেকে অনাগত দুইটা, তিনটা, চারটা মেয়ের দুশ্চিন্তার অন্ধকার দূর হয় না।
আড়াই বছর বাদে নাসির আবার বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে অফিসে হাজির হয়- এবার তার মুখে শরতের ঝকঝকে রোদ। প্রশ্ন করার আগেই সে হাসিমুখে জানিয়ে দেয়- ছেলে হয়েছে স্যার!
পুত্র সন্তানের পিতৃত্বে রাজুর সমকক্ষ হওয়ায় নাকি কন্যা সন্তানের বিপদ থেকে মুক্তির আনন্দে এই জ্বলজ্বলে হাস্যোজ্বল মুখ – সে কেবল নাসিরই জানে।