দ্য শাইনিং সিনেমায় নেই কোন বিকৃত বীভত্স চেহারার আনাগোনা,নেই কোন মানুষ কাটাকুটি বা নরখাদকের দৃশ্য কিংবা না আছে ভয়ানক আর্তচিত্কার বা হঠাত্ হঠাত্ পিলে চমকানো সাউন্ড ইফেক্ট,ঘুটঘুটে অন্ধকারে আকস্মিক ফ্যাকাসে লাশের আচমকা আক্রমনের দৃশ্যও নেই, তবুও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাইকোলজিকাল হরর সিনেমাগুলোর একটি এটি। কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার Martin scorsese এই ছবিটিকে অভিহিত করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ১১টি ভৌতিক ছবির একটি হিসেবে। অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধার মতে এটি শ্রেষ্ঠ ১০০টি সিনেমার মধ্যে একটি।
এত নাম ডাক যে ছবির তার নাম দ্য শাইনিং ১৯৮০ সালের দিক কার ছবি।এই ছবি নিয়ে বলবার মত স্পর্ধা আমার নেই শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত ভালো লাগাটা শেয়ার করতেই এই লেখা।
কি আছে এই ছবিতে? আছে অনেক কিছু,অনেক অনেক কিছু। শক্তিশালী চিত্রনাট্য,অসাধারন অভিনয়,ইতিহাস সৃষ্টিকারী সিনেমাটোগ্রাফি আর সর্বশেষ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ Stanley kubrick এর অতুলনীয় অসাধারণ নির্মানশৈলীঁ।
ছবিটি যখন শুরু হয় তখন থেকেই চিত্রগ্রহন এর মুন্সিয়ানা চোখে পড়ে। টপ এ্যাঙ্গেল থেকে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বুক চিরে গাড়ি চালিয়ে যাবার যে শট নেওয়া হয়েছে তা অতুলনীয়। বৈপ্লবিক স্টেডিক্যাম এর সফল এবং আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার এই ছবি থেকে শুরু। স্টেডিক্যাম এর যাদুকরি ব্যবহারে পর্দায় ভয়ে গা ছম ছম করে উঠে। এই ছবির কিছু ইতিহাস সৃষ্টিকারী সিকোয়েন্স এই স্টেডিক্যাম এই করা যেমন ছবিতে ছোট ছেলেটি (ড্যানি) যখন হোটেলের বিশাল লম্বা লম্বা করিডোর গুলোতে তার থ্রি হুইলার (খেলনার সাইকেল বিশেষ) করে দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছিল তখন পিছন থেকে তোলা tracking শটগুলো সিনেমাটোগ্রাফি জগতে ইতিহাস হয়ে থাকবে। বিশেষ করে এরকম পিছন দিক থেকে করা এই ট্র্যাক শটগুলোর কারণে ছবিটি দেখতে দেখতে ভয়ে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়।
jack nicholson, shelley duvall আর সেই ছোট্ট ছেলেটি danny তিনজনের অভিনয় অনবদ্য, বিশেষ করে jack nicholson এর দাপুটে অভিনয় তাকে সর্বকালের সেরা খলনায়ক করে রাখবে তিনি একাই ছবিটি টেনে নিয়ে গেছেন বহুদূর।
বরফঘেরা সৌন্দর্য্যে ঝা চকচকে সুবিশাল বিলাশবহুল একটি হোটেলের চাকচিক্যের মধ্যেই যে আতঙ্ক আর দম বন্ধ করা ভয়ের সৃষ্টি হয় তা এই ছবি না দেখলে বোঝা যাবেনা, ছবিটি বিকৃত চেহারার ভূতের কৃত্রিম ভীতির সৃষ্টি করেনা বরং অকৃত্রিম সৌন্দর্য্যের মধ্যে চরম ভয়াবহতা আর শ্বাসরুদ্ধ করা নিঃসঙ্গতা আর শূণ্যতা সৃষ্টি করে। এই শূণ্যতা এবং ভয়াবহতা দর্শককে তাড়া করে অনেকক্ষণ ব্যাপী সিনেমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও।
Stanley kubrick এর এই কিংবদন্তী সৃষ্টির স্বাদ সর্বভূক সিনেমাপ্রেমী মাত্রই আস্বাদন করা উচিত্,তবে ছবিটি অবশ্যই একটানা দেখবেন, একা দেখলে এবং রাতে দেখলে তো তুলনাহীন।
nice..nice..super nice