টিনটিনকে চিনেন তো? সেই যে গোলগাল মুখের লালচুলো অনুসন্ধিৎসু তরুন যে নানা রকম রোমাঞ্চকর দু:সাহসিক সব অ্যাডভেঞ্চারে ছুটে বেড়ায় আমেরিকা-কঙ্গো-তিব্বত, এমনকি সুদূর চন্দ্র পর্যন্ত; অপরাধীদের পেছনে ধাওয়া করে বেড়ায় পাহাড় পর্বত থেকে শুরু করে গভীর সাগরের তলদেশে নির্দ্বিধায় আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরে সকল সমস্যার সমাধান করে এক নিমিষেই – সেই টিনটিনের কথাই বলছি। যুগ যুগ ধরে গোটা পৃথিবীর নানা দেশের অগুনতি পাঠকের অসীম ভালোবাসায় সিক্ত টিনটিন আবার হাজির হচ্ছে তার ভক্তদের সামনে – নতুন রূপে, আরও জীবন্ত হয়ে, রূপালী পর্দায়, আর তাকে এ রূপে নিয়ে আসছেন জুরাসিক পার্ক খ্যাত স্টিভেন স্পিলবার্গ, সাথে আছে কিংকং খ্যাত পরিচালক পিটার জ্যাকসন।টিনটিনের জন্ম বেলজিয়ামে, স্রষ্টা জর্জ রেমি, হার্জ নামেই বেশী পরিচিত। ১৯২৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চার, ফ্রেঞ্চ ভাষায়। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত একে একে বেরিয়েছে ২৪ টি পর্ব। জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে গেছে দেশ পেরিয়ে বিদেশের গন্ডিতে। অনুবাদ হয়েছে ৮০ টিরও বেশী ভাষায়, বিক্রি হয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন কপি, নির্মিত হয়েছে সিনেমা, থিয়েটার। বাংলা ভাষায় টিনটিন অনুবাদ করে পাঠকদের কাছে পৌছে দেয়ার কাজটা অবশ্য কোলকাতার আনন্দ পাবলিশার্সের। ভাষান্তর হতে গিয়ে কিছু পরিবর্তন অবশ্যই হয়েছে। যেমন টিনটিনের সবসময়ের বিশ্বস্ত সঙ্গী কুকুর ‘স্নোয়ি’ বাংলায় হয়ে গেছে ‘কুট্টুস’। অবশ্য এতে আনন্দের ঘাটতি হয়নি বিন্দুমাত্র, বরং সহজবোধ্য হওয়ায় বেড়েছে কয়েকগুন, আর নিজেকে বন্ধু এবং সহযোগী হিসেবে টিনটিন, কুট্টুস, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, মানিকজোড় জনসন অ্যান্ড রনসন, প্রফেসর ক্যালকুলাস সহ অন্যান্যদের সাথে পাঠক ঘুরে বেরিয়েছে সর্বত্র।
দ্য ক্র্যাব উইদ দ্য গোল্ডেন ক্লজ (কাকড়া রহস্য), দ্য সিক্রেট অব দ্য ইউনিকর্ণ (বোম্বেটে জাহাজ) এবং রেড রেকহ্যামস ট্রেজার (লাল বোম্বেটের গুপ্তধন) – এই তিনটি গল্প মিলিয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব টিনটিন: দ্য সিক্রেট অব দ্য ইউনিকর্ণ ‘ যেখানে টিনটিনের সাথে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের পরিচয় এবং তার পূর্বপুরুষের গুপ্তধন উদ্ধারের অভিযান স্থান পেয়েছে। টিনটিন এবং তার অভিযান নিয়ে এটাই প্রথম সিনেমা নয়। সেই ১৯৪৭ সালে প্রথম সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল, মজার ব্যাপার হলো সেই সিনেমাটিও টিনটিন সিরিজের বই ‘কাকড়া রহস্য’র উপর নির্ভর করে নির্মিত স্টপ মোশন পাপেট ফিল্ম। নির্মিত হয়েছে জীবন্ত মানুষ দ্বারা অভিনিত সিনেমাও, টিভি সিরিজ এর কথাও বাদ দেয়া যায় না। এতবছর পরে টিনটিনের এই সিনেমায় নতুন কি থাকছে যা আবার দর্শককে টেনে আনবে থিয়েটারে?
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব টিনটিন: দ্য সিক্রেট অব দ্য ইউনিকর্ণ সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে থ্রিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে যা সিনেমাটিকে করে তুলবে আরও জীবন্ত, বাস্তবময়ী। ইটি – দ্য এক্সট্রা টেরিস্টোরিয়াল এবং জুরাসিক পার্ক খ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ প্রথমে একে লাইভ অ্যাকশন সিনেমা (জীবন্ত মানুষ অভিনীত সিনেমা, যেমন স্পাইডারম্যান) হিসেবে নির্মান করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও লর্ড অব দ্য রিংস এবং কিংকং সিনেমার বিখ্যাত পরিচালক পিটার জ্যাকসন, যিনি এই সিনেমার একজন প্রযোজকও বটে, পরামর্শ দেন টিনটিনের সঠিক মর্যাদা রাখার জন্য অ্যানিমেটেড সিনেমাই প্রয়োজন এবং এজন্য মোশন ক্যাপচার পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। মোশন ক্যাপচার পদ্ধতিতে বাস্তবের অভিনেতারাই অভিনয় করেন কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে তা রেকর্ড হয় টু-ডি অথবা থ্রি-ডি অ্যানিমেশনে। টম হ্যাংকস অভিনিত ‘দ্য পোলার এক্সপ্রেস’ এরকম পদ্ধতিতে নির্মিত সিনেমা। জ্যাকসনের যুক্তিতে স্পিলবার্গ সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করেন নি যদিও এটা স্পিলবার্গের নির্মিত প্রথম অ্যানিমেটেড সিনেমা।
সিনেমায় টিনটিন চরিত্রে জেমি বেল এবং ক্যাপ্টেন হ্যাডক চরিত্রে অ্যান্ডি সের্কিস অভিনয় করেছেন। জেমি বেল খুব বিখ্যাত অভিনেতা না হলেও অ্যান্ডি সের্কিস লর্ড অব দ্য রিংস সিনেমায় ‘গুল্লাম’ চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। বলা বাহুল্য, গুল্লাম চরিত্রটিও মোশন ক্যাপচার পদ্ধতিতে নির্মিত। এছাড়া পাইরেটস সর্দারুু রেড রেকহ্যাম চরিত্রে অভিনয় করেছেন হালের জেমস বন্ড ডেনিয়েল ক্রেগ। পিটার জ্যাকসন গত মাসে তার ফেসবুকে লেখা একটি নোটে স্টিভেন স্পিলবার্গের কাজের বেশ প্রশংসা করেছেন। তাদের এ বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ন কারণ শোনা যাচ্ছে টিনটিনের এই সিনেমার পরে আরেকটি সিক্যুযেল নির্মিত হবে যার প্রস্তুতি চলছে বেশ জোরেশোরে এবং সব ঠিক থাকলে পিটার-স্পিলবার্গ দুজনে মিলে তৃতীয় টিনটিনের সিনেমাটি পরিচালনা করবেন।
এত সাড়া আর আলোচনা জাগিয়ে যে সিনেমাটি আসছে তা মুক্তি পাবে এ বছরের শেষ দিকে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। অ্যানিমেশন জগতে টিনটিনকে নিয়ে স্পিলবার্গের পদার্পন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে এ আশা খুব অবাস্তব নয়। তাই দেরী কেন, যদি টিনটিনের সাথে দু:সাহসী সব অভিযানে সঙ্গী হতে চান তবে প্রস্ততি নিন এখনই।
এই লেখাটা কিছুটা সম্পাদিত হয়ে দৈনিক সমকালের বিনোদন সাপ্তাহিক নন্দনে প্রকাশিত হয়েছিল
good
Thanks BakiB 🙂
হুম, দেখা যাক কেমন হয়, এনিমেটেড ফিল্মের প্রতি আমার আবার অ্যালার্জি আছে, কার্টুন কার্টুন মনে হয়। তাই সবসময় এনিমেটেড এড়িয়ে চলি, কিন্তু কয়েকদিন আগে দ্যা পোলার এক্সপ্রেস দেখে ভালোই লাগলো, এটাও দেখতে হবে সেজন্য 🙂 তাছাড়া স্পিলবার্গের কাজ 😀
এনিমেটেড আমিও এড়িয়ে চলি সাধারণত, যখন পিওর এন্টারটেইনমেন্ট দরকার হয় – তখন একটা এনিম দেখে ফেলি। তবে টিনটিনের কথা আলাদা, বাচ্চাকালে পড়েছি, কিছুদিন আগে সিনেমাগুলো দেখলাম এবং এবার নতুন প্রযুক্তির ব্যাবহারের জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করছি ভালোই হবে 🙂
ধন্যবাদ সারিম খান আপনাকে, আবারও আসবেন 🙂
Splendid !!!!! Awesome Review!!!!
I am a big fan of Tin Tin and also Mr. Spielberg. I saw all Spielberg movies.
I am eagerly waiting for its release..Good Luck Tin Tin
Thanks Marvin. We all are waiting for Tin Tin, Lets see if it can meet our demand 🙂
দেখে ভালোই লাগলো………….. কার্টুন হলেও এনিমেশন আর আঁকার মান অত্যন্ত উচুমানের…………
অ্যা? কোনটা কার্টুন বাই? স্পিলবার্গের টিনটিন তো কার্টুন না, সেইটা আমি লিখছি। আপনি কি না পইড়াই মন্তব্য দিলেন? :O