কোলকাতার সিনেমা ‘আবহমান’ এ বছর মুক্তি পেয়ে বাংলা ভাষায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। গুনী এ পরিচালকের কাছ থেকে ভালো সিনেমা পাওয়া যাবে, এ বিশ্বাসটি তিনিই তৈরী করেছেন, তার পূর্বনির্মিত সিনেমাগুলোর মাধ্যমে। ‘আবহমান’ ভালো হবে সেটা জানা কথা কিন্তু কতটা? সেটা জানার জন্যই সিনেমাটা দেখতে হবে।
সিনেমাটা মুক্তি পাবার আগে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল সিনেমার কিংবদন্তী সত্যজিৎ রায় আর মাধবী মুখার্জীর কাহিনী নিয়ে নির্মিত হচ্ছে এই সিনেমা। কতটা সত্যি সে গুঞ্জন সেটা বোধহয় সত্যজিতের একদম কাছের মানুষেরাই জানবেন, আমরা দর্শকরা জানি, ‘আবহমান’ নারী পুরুষের সম্পর্কের যে আবহমান রূপ তার কথাই বলেছে। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে শিল্প জগতের নারী পুরুষের সম্পর্ক। এই আলাদা করার কারণ বোধহয়, এই জগতের মানুষেরা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু আলাদা, একটু মারকুটে টাইপের, একটু বিদ্রোহী।
একজন সিনেমা পরিচালক, একমাত্র ছেলের বয়সী নায়িকার সাথে গোপন অবৈধ সম্পর্ক, নিজ স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের ছেদ, বিদ্রোহী ছেলে যে কিনা পরবর্তীতে বাবাভক্ত হয়ে উঠল – এ সব নিয়েই সিনেমাটি। বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক অনিকেত মজুমদারের মৃত্যুতে সারা দেশ শোকাহত, তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছে অনেক মানুষ, এসেছে বিখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীমতি সরকার বা শিখা। অনিকেতের বউ দীপ্তির সাথে তার সাক্ষাত হলো না অনেক্ষন, অথচ এই বৌদিই অনেক বছর পূর্বে বিনোদিনী চরিত্রে শিখাকে কাস্ট করতে সাহায্য করেছিলেন, শিখিয়েছিলেন পরিচালক অনিকেত মজুমদারের পছন্দ অনুযায়ী অভিনয় করতে। কিন্তু শিখার প্রতি অনিকেতের দুর্বলতা তাদের সুন্দর পরিবারে ফাটল ধরায়। আর এর মাধ্যমেই গল্পের নানা বাকেঁ জানা যায় অনেক কিছু।
অভিনবত্ব রয়েছে সিনেমায়। সিনেমা ভেতরে সিনেমা। নাটরাজ গিরিষচন্দ্র ঘোষের সৃষ্টি অভিনেত্রী বিনোদিনী আর ধনী এক জমিদারের প্রেম নিয়ে অনিকেত মজুমদার যে সিনেমা বানাচ্ছেন তাই যেন অনেক বছর পরে ঘটছে তারই জীবনে। একই সাথে শত বছরের বিনোদিনীর কাহিনী, অনিকেতের মৃত্যুর পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী আর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে স্মৃতিচারণ – এই তিন সময় দর্শককে মোহিত করবে, শঙ্কিত করবে, বিভ্রান্ত করবে।
আবহমান সিনেমার চিত্রনাট্য ঋতুপর্ণ ঘোষের। সিনেমা পরিচালকের তুলনায় তাকে চিত্রনাট্যে বেশী নম্বর দেবো আমি, এত অসাধারণ ভাবে গল্পটি তুলে ধরেছেন যে একটু পরপর সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হয়েছি। শুরুতে মনে হয়েছিল অনিকেত মজুমদার আর কেউ নয়, পরিচালক ঋতুপর্ন ঘোষ নিজেই। অথচ একটু পরেই মনে হল অনিকেত নয়, বরং তার ছেলে অপ্রতীমের সাথেই বেশী খাপ খায়। এই দ্বন্দ্বেই সিনেমাটি অসাধারন হয়ে উঠেছে।
রিয়া সেন গুরুত্বপূর্ন নয় এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করলেও এরকম একটি চমতকার কিছু ফ্রেম পাওয়া যাবে ফাও
সব শেষে আসছে সত্যিই কি সত্যজিতকে নিয়ে নির্মিত কিনা সে প্রসঙ্গ। পরিচালক নিজে বলেছেন, সেরকম কিছু নয়, এ কারণেই পরিচালক এবং অভিনেত্রীর বয়সের পার্থক্যটা অনেক, প্রায় ৩৫ বছর। ঋতুপর্ণ ঘোষের ভাষায় সিনেমা নির্মানের উদ্দেশ্যটা ছিল “My main interest was to unfold, for myself as much as for my actors and my audience, the finer nuances of the relationship between the creator and the created, what are the elements that sustain it, and why such relationships finally do not hold in time,” অসাধারণ ফ্রেমে বন্দী করা সিনেমাটি কতটা উদ্দেশ্য পূর্ন করেছে সেটা বোধহয় আপনারা বিচার করবেন, তাই না?
ভালো লাগল,আশা করি এ ছবিটা দেখব।পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ বলে
না দেখলে ভীষন লস হয়ে যাবে।আমি একটু মুভি পাগল।
পড়ে তো দেখার আগ্রহ জন্মালো।
সত্যজিৎ সব সময়ই আমার দুর্বলতা।।।
অবশ্যই দেখবেন স্যার 🙂
এবং বারবার আসতেই থাকবেন 😉
আবার সম্ভবত ঐ একই সাক্ষাতকারে ঋতুপর্ণ বলেছিলেন, ” সে তো গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রহমান, রাজ কপূর-নার্গিস, তা হলে বেছে বেছে এই দু’জন বাঙালি ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলাকে টেনে আনা হচ্ছে কেন! এবং বার্গম্যান যেখানে ওপেনলি নায়িকাদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলছেন… আসল কথা হল এই ধরনের সম্পর্ক ‘আবহমান’ ধরে চলে আসছে। আর তাই নিয়েই ছবি। যা চিরকালীন সত্যি!”
উনি যেমন স্বীকার করেননি, তেমনি অস্বীকারও করেননি ব্যাপারটা, বলা চলে ইচ্ছে করেই ঝুলিয়ে রেখেছেন ক্ল্যাইমেক্সটা যাতে না কেটে হয়তো সেজন্য। কে জানে!
বহুকাল আগে এই সিনেমাটা নিয়ে নিজের একটা অতি সংক্ষিপ্ত সারমর্মের অংশবিশেষ তুলে দিচ্ছইঃ
“আবহমান- বয়সী পরিচালকের অসম প্রেম কিংবা পারিবারিক সম্পর্কের এক অন্যরকম ছবি। পরিচালক অনিকেতের ভূমিকায় দারুণ মিশে গিয়েছেন দীপঙ্কর দে। বারবার নানা প্রশ্ন, দাম্পত্য জটিলতার মধ্যে পড়েও কেন যেন কখনো শিখার সাথে তার সম্পর্কের কথা অনিকেত পরিষ্কার করে বলেননি। বরং জীবনের শেষ ভাগে এসে ছেলের (অপ্রতিম) কাছে নিজের দায়বদ্ধতা স্বীকার করে গিয়েছেন। তরুণ অভিনেত্রীর শিখার চরিত্রে মমতা শঙ্করের অভিনয়ও নজর কাঁড়া ছিল। বোদ্ধা নই, অনেকটা নিজের তৃপ্তির জন্যই দেখেছি, তাই তেমন কোন আঙ্গিক বিশ্লেষণ আমাকে দিয়ে সম্ভব হবে না। সত্য বলতে গেলে এখনো শিখছি।”
মারহাবা মারহাবা। আপনি বোদ্ধা নন (আপনিই বললেন 😉 ) কিন্তু ভালো লেখক বটে 🙂
ধন্যবাদ স্যার … সংক্ষেপে এমন কিছু যদি সবকটিতেই লিখে দিতেন – তবে বেশ হত 🙂
ভালো থাকুন 🙂
দেখতে হবে…
‘আবহমান’ দেখার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না এই ছবির সাথে সত্যজিৎ রায়ের কোন রকম সংশ্লিস্টতা আছে। এমন কি, এটা যে চলচ্চিত্র নিয়ে নির্মিত আমি তাও জানতাম না। কিন্তু ছবি দেখতে দেখতে এক সময় অনুভূত হতে লাগল এই ছবি সত্যজিৎ রায়ের জীবনের বিশেষ একটি দিক নিয়ে নির্মিত। যাঁরা সত্যজিৎ রায়ের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানেন তাঁরা মোটা দাগে এই মিল গুলো অবশ্যই লক্ষ্য করবেন।
১. মেয়ের বয়সী চিত্র নায়িকার প্রতি পরিচালকের দুর্বলতা।
২. ছেলের সঙ্গে চিত্র পরিচালকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
৩. উপরোক্ত সম্পর্কের জের ধরে স্ত্রীর সঙ্গে চিত্র পরিচালকের সম্পর্কের অবনতি।
সামগ্রিকভাবে ঋতুপর্ণের আর দশটা ছবির মতো মানবিক সম্পর্ককেই এই ছবিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। হয়তো সত্যজিতের জীবন এর গল্প বুনোনে সহায়তা করেছে।
বিদেহী ঋতুপর্ণের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তার রচিত চিত্রনাট্য বাংলা ছবির সম্পদ হয়ে রইল।
Satyajit ray er sathe madhobi Mukherjee er prem!!! Nattokar Girish Chandra Ghosh er jaygay “sen”
!!!! Lekhok ke proshno kori … Ko chilim gaja kheye lekha hoyeche???
ঘোষের জায়গায় সেন লিখার ভুলটুকু মেনে নিচ্ছি। ধন্যবাদ। শুধরে নিচ্ছি।
কিন্তু পুরো লেখায় যে লিংকগুলো দিয়েছি সেগুলোয় চোখ বুলিয়েছিলেন? আপনাদের এলাকার পত্রিকার খবরই তো দিয়েছি।
আর হ্যা, এই অনলাইনের যুগেও এভাবে নাম-ইমেইল লুকিয়ে মন্তব্য করতে হয়? খুব বাহাদুরী কোন মন্তব্য তো করেন নি।