ভাবুন তো, আগামীদিনের ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন কেমন হবে? জানতে হলে লগ অন করুন zml.com -এ। এখানে পাবেন কম্পিউটার, আইপড কিংবা হাতে বহনযোগ্য যন্ত্র উপযোগী কিংবা ডিভিডিতে বার্ণ করা যায় এমন ১৭০০ মুভির এক বিশাল কালেকশন। এ সাইটে আরও পাবেন মুভি সম্পর্কে পূর্ণবিবরণ, এডিটরদের মন্তব্য, কাস্টমার রিভিউ এবং অসংখ্য স্টিল পিকচার। খরচও হাতের নাগালে – তিন ডলার প্রতি মুভি। নিঃসন্দেহে লোভনীয় অফার।
একটি ছোট সমস্যা – zml.com একটি পাইরেট সাইট। Pirate Bay আরেকটি অবৈধ সুইডিশ ওয়েবসাইট। হলিউডের মুভি স্টুডিওগুলো এ ধরনের ছোটখাটো সাইটের মোকাবেলা করেই অভ্যস্ত। কিন্ত zml.com এর মত ওয়েবসাইটের উত্থানে তারা আতঙ্কিত। একজন স্টুডিও এক্সিকিউটিভের মতে, “এই সাইট এতটাই প্রফেশনাল যে, দেখে বৈধ ওয়েবসাইট মনে হয়।”
ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশনের হুমকী
ইন্টারনেট হলিউডের জন্য একটি হুমকি। কারণ, পাইরেটরা ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে স্টুডিও মালিকদের নায্য প্রাপ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত হলিউডের কাছে অনলাইন পাইরেসির কারনে সৃষ্ট ক্ষতি ডিভিডি পাইরেসির তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এ ব্যবধান ক্রমান্বয়েই কমছে। ফক্স এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপের অ্যান্টি পাইরেসি ডিপার্টমেন্টের প্রধাণ রন হুইলার বলছেন, “ডিভিডি পাইরেসির তুলনায় ইন্টারনেট পাইরেসি নিয়ে আমরা বেশী চিন্তিত কারন এটা নিয়ন্ত্রন করা বেশী কঠিন।” কেউ কেউ মনে করছেন, ইন্টারনেট পাইরেসিই আমেরিকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কবর রচনা করবে।
অন্যদিকে, ইন্টারনেট হলিউডের সামনে উপস্থাপন করেছে বিশাল সুযোগ – যদিও এর সদ্ব্যবহারে হলিউডের গতি অনেক ধীর। ভোক্তারা রেডিও, মিউজিক, নিউজপেপার ও টেলিভিশনের ক্ষেত্রে অনলাইন এক্সেস সুবিধা পাচ্ছে। মুভির ক্ষেত্রেও তারা এ সুবিধা চাইতে পারে – এটা খুবই যৌক্তিক। zml.comতাদেরকে মুভি ডাউনলোড করে বাড়িতে বসে যখন খুশি দেখার এ সুবিধাটুকুই দিচ্ছে। জনগন যদি একবার চাহিদানুযায়ী মুভি কিনতে বা ভাড়া নিতে পারে, সেক্ষেত্রে তাদের চাওয়া আরও বাড়বে – এতে কোন সন্দেহ নেই। zml.com এর অস্তিত্ব এভাবেই দেখিয়ে দিচ্ছে – ইন্টারনেট নিয়ে হলিউড কেন দ্বিধাবিভক্ত।
ইন্টারনেটের অস্তিত্ব হলিউডকে ভালোই নাড়া দিচ্ছে। এর প্রমাণ পাওয়া গেল গত ২৪ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত অস্কার অনুষ্ঠানে। মুভি লেখকরা তাদের কাজের অনলাইন ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন ফি’র দাবীতে আন্দোলন করে। এই মূহুর্তে হলিউড ফিল্মে ফিজিক্যাল ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে ব্যস্ত। প্রতি বছর হাজার হাজার দামী এবং ভারী ফিল্মের রিল বিভিন্ন সিনেমায় পাঠানো হয়। গত দু-এক বছর যাবত শূন্য এবং এক অর্থাৎ ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠানো শুরু হয়েছে মাত্র।
কিছু কিছু স্টুডিও ইন্টারনেট নিয়ে বেশ আগ্রহী। লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যারামাউন্ট পিকচার্স স্টুডিও এরকম একটি। এর ডিজিটাল এন্টারটেইনমেন্ট প্রেসিডেন্ট টমাস লিসেনস্কি বলছেন, “২০০৮ সালে আমরা পুরোপুরি অনলাইনে যাবো। এর মাধ্যমে মুভি বিজনেসে প্রচুর মুনাফার আশা করা যেতে পারে।” কিন্তু বাস্তবের অবস্থা ভিন্ন। ইন্ডাস্ট্রিগুলো বৈধ ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন বা ডাউনলোড সার্ভিসকে খুব কমই সহায়তা করছে। অন্যদিকে, টেলিভিশন খুব সহজেই ইন্টানেটকে আপন করে নিয়েছে।
বৈধভাবে কী পাওয়া যাচ্ছে
ইন্টারনেটে বৈধভাবে কী পাওয়া যাচ্ছে- তার গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু সে ব্যাপারে ভিন্নতা থাকতে পারে। বর্তমানে লন্ডনের রাস্তায় বাস চলাচল করছে FilmOn.com-এর অ্যাড বহন করে। FilmOn.com-একটি ডাউনলোড সার্ভিস প্রদানকারী ওয়েবসাইট। ”টনকে টন মুভি কালেকশন” বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে আপনি Mulva 2-Kill Teen Ape ছবিটিও খুজে পাবেন না যদিও এ ছবিটি অনেকেরই পছন্দেও টপচার্টে অবস্থান করছে। ইন্টারনেটে এরকম আরও অসংখ্য বৈধ সাইট রয়েছে যারা বিখ্যাত মুভির বিশাল কালেকশন অফার করছে। অথচ সত্যি হল, তাদের কালেকশন যেকোন ভিডিও রেন্টাল শপের সবচেয়ে বাজে তাকের চেয়েও খারাপ। এ সকল বৈধ সাইটগুলোর তুলনায় zml.com হাজার গুণে ভালো।
লস অ্যাঞ্জেলস ভিত্তিক nexttv.com এরকম ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশনের আরেকটি বৈধ সাইট। তারা মূলত ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম, স্টুডেন্ট ফিল্ম এবং নির্বাচিত ফিল্মগুলোকে নিয়ে ব্যবসা করে টাকা কামাচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা ওফার মিজ্রাহি এবং রবার্ট মস্কোভিট হলিউডের ফিল্ম থেকে দূরে থাকছেন কারণ ওগুলোর মূল্য বেশ চড়া। গতবছর মুভিফ্লিক্স ১.২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ডাউনলোড সাইটগুলোর কাছে এ ধরনের মুনাফা করার পরিমাণ খুবই কম। এ প্রসঙ্গে মিজ্রাহি বলেন, “আমরা তেলাপোকার মত টিকে আছি।”
আয় কেমন
অনেকগুলো কোম্পানীর অবস্থা আরও খারাপ যদিও এ সার্ভিস প্রদাণের জন্য তাদের পর্যাপ্ত পরিমান ফান্ড রয়েছে। মুভিলিংক ১৫০ মিলিয়ন ডলার ক্যাপিটাল নিয়ে ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। অথচ গত অগাস্টে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার কমে বিক্রি হয়ে গেল ব্লকবাস্টারের নিকট। ব্লকবাস্টার একটি ভিডিও রেন্টাল চেইন। সিনেমা নাউ (Cinema Now) ১৯৯৯ সাল থেকে অনলাইন মুভিসেবা দিয়ে আসছে কিন্তু এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখেনি। এর চিফ এক্সিকিউটিভ কার্ট মারভিস যারপরনাই বিস্মিত কারণ তাদের ইনভেস্টরদের তালিকায় মাইক্রোসফট এবং সিসকো সিস্টেমস এর মত কোম্পানীও রয়েছে।
অন্যান্য স্টুডিওগুলোর অনলাইনের মাধ্যমে বেশী আয় করছে না যদিও সারা বিশ্ব জুড়ে ইন্টারনেট সেবা সংক্রান্ত তাদের ডজন ডজন চুক্তি রয়েছে। ওয়ার্নার ব্রাদার্স তাদের কিছু সংখ্যক বাছাইকৃত ফিল্ম ৩৮ টি ভিন্ন ভিন্ন ডিজিটাল ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিষ্ঠানের নিকট সরবরাহ করেছ – এ তথ্যটি জানা যায়, লন্ডনের রিসার্চ ফার্ম স্ক্রিন ডাইজেস্ট থেকে।
তাদের ধারনানুযায়ী, ২০০৬ সালে আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে অনলাইনে ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে মোট ৫৮ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়েছে। স্ক্রিন ডাইজেস্ট আশা করছে ২০১১ সাল নাগাদ এর পরিমান মোট হোম এন্টারটেইমেন্ট আয়ের তুলনায় শতকরা ৫ ভাগ কম। কাস্টমার ইলেকট্রনিক্স ফার্মগুলো হলিউডের ফিল্ম সরবরাহে আগ্রহী।
ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ
স্ক্রিন ডাইজেস্টের মতে, অনলাইন সার্ভিস মূলত কাস্টমারদের ব্যবহৃত ডিভাইসের উপর নির্ভর করছে। ভোক্তারা অ্যাপলের আইপড কিংবা মাইক্রোসফটের এক্স বক্স ৩৬০-র জন্য উপযোগী ফিল্ম কিনছে। অ্যাপলের আই টিউনস প্রায় ৮০% এবং এক্স বক্স ৭০% এর বেশী ডাউনলোড মুভির সেবা প্রদান করছে।
জানুয়ারীতে লাসভেগাসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যশনাল কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শোতে সবাই আগ্রহভরে অ্যাপলের কাছ থেকে নতুন কিছু আশা করছিল। তাদের ধারনা ছিল অ্যাপল প্রধাণ ছয়টি স্টুডিওর নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত মুভি বিক্রী করার ঘোষনা দেবে। অথচ শুধু ডিজনী অ্যাপলকে নতুন মুভি বিক্রীর অনুমতি দিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে অ্যাপলের চুক্তিগুলো হতাশাব্যাঞ্জক – সব স্টুডিওই তাদের ফিল্ম ভাড়া দেয়ার চুক্তি করেছে, বিক্রী নয়। এই চুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, হলিউড লেখকদের স্ট্রাইকের কারনেই এমনটা হয়েছে। এখন স্টুডিওগুলো অপেক্ষা করছে – অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও একই পথ অবলম্বন করে কিনা দেখার জন্য। এ ধরনের ঝামেলাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে অ্যাপল প্রধান স্টুডিওগুলোর সাথে মুভি ডাউনলোডের চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে এটা হবে ইন্টারনেটের দিকে হলিউডের একটি বিশাল পদক্ষেপ।
৩০.০৩.২০০৮
[এই লেখাটা গত বছর এপ্রিল মাসে যায়যায়দিন পত্রিকায় লিখেছিলাম। এটি মূলত ইকনোমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত আর্টিকেলের একটি সংক্ষিপ্ত অনুবাদ মাত্র।]
মূল আর্টিকেল
লিংকগুলো ক্লিকেবল না। এগুলো ক্লিকেবল হওয়া ভাল। লেখাটা ভাল, তবে আইডিয়া গুলো আপডেট হওয়াটা জরুরী। নদী দিয়ে অনেক পানি বয়ে গেছে। পিটুপি বেসড সাইটগুলো রিসেন্টলি আইনি লড়াইয়ে ভাল ধরা খাইছে। তবে এগুলো থেমে নেই। আরো নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে।