এটা আমার শততম পোস্ট! শততম পোস্ট উপলক্ষে তাই তিনটি সিনেমা রিভিউ!
সামহোয়্যারইনব্লগে লিখছি দশ মাস পাঁচ দিন। দশ মাস দশ দিন থেকে পাঁচ দিন কম – তাতে সমস্যা নেই, সিজারের এই যুগে বোধহয় খুব কম মা-ই দশ মাস দশ দিন সন্তানকে পেটে পুষে রাখেন, বেশির ভাগই সাড়ে আট মাসের পর নিয়ে আসেন সন্তানকে এই পৃথিবীতে। সে নিয়মের সবচেয়ে বড় ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমি সামোয়ারে ফাস্ট পাতায় এক্সেস পাই মাত্র তিন দিনে। এই দশ মাস পাঁচ দিনে পোস্ট লিখলাম মাত্র ১০০ টা, মন্তব্য করেছি ৭৮৯ টি (আমি বোধহয় বেশ কৃপণ, এক্ষেত্রে), পেয়েছি ১২৫৬ টি আর ব্লগ দেখা হয়েছে মোট ১৮৫০৪ বার। আমি সন্তুষ্ট। আমার জগত একান্তই আমার।
সিনেমা রিভিউ
Ronin (১৯৯৮)
“সামুরাই যোদ্ধাদের একটি গ্রুপ ছিল যাদের লিডার অন্য এক লিডারের বিশ্বাসঘাতকতায় মারা যায় এবং যোদ্ধারা হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন এবং বিশৃঙ্খল। তারা ডাকাতিসহ নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এ সকল লোক যাদের কোন নেতা ছিল না তাদের বলা হত রোনিন!”
জন ফ্রাঙ্কেনহেইমার এর পরিচালনায় রোনিন মুভির একদম শুরুতে এই টাইটেল পরিচিতির মাধ্যমেই আভাস পাওয়া গেল যে মুভিটি ভালো হবে। ঘটনাস্থল প্যারিসে। আছেন রবার্ট ডি নিরো। একটি ক্যাফেতে জড়ো হয় কিছু মানুষ – জনা চারেক দুর্ধর্ষ বন্দুকবাজ, একজন টেকনোলজি এক্সপার্ট – এরাই রোনিন। আর আছে ডিয়েড্রা, চোখা মুখের অধিকারি মেয়েটি যে কিনা এই পাচজনকে দিয়ে একটি কাজ করিয়ে নিতে চায়। বিনিময়ে পাওয়া যাবে ডলার।
কাজটি কঠিন, একটি বক্স উদ্ধার করতে হবে একটি সশস্ত্র গ্রুপের কাছ থেকে। কাজ শেষে পাওয়া যাবে টাকা। কিন্তু সমস্যা হল বাক্সের সাথে কতলোক থাকবে, তারা কি ধরনের সে বিষয়ে কিছু জানা নেই। সুতরাং কাজ শুরু হয়ে গেল। এর মাঝে অস্ত্র কিনতে গিয়ে সংঘর্ষ এবং পুলিশের তাড়া। বাক্স উদ্ধার হয়ে গেল স্যামের বুদ্ধিতে (নিরো) কিন্তু ফাকি দিয়ে নকল বাক্স নিয়ে পালাল গ্রেগর, টেকনোলজি এক্সপার্ট। এদিকে জানা যাচ্ছে না বাক্সে কি আছে, জানা নেই স্যাম এর ব্যাকগ্রাউন্ড কি। তবে সাথে আছে ভিনসেন্ট (জ্যা রেনো, দি দ্যা ভিঞ্চি কোড) । দুজন আর ডিয়েড্রা মিলে খুজে বেড়ায় গ্রেগরকে, একসময় ডিয়েড্রাও বেইমানী করে।
টানটান উত্তেজনার মুভি। দুটো কার চেজ আছে, গোলাগুলি আছে বেশ কবার। থিম মিউজিক টা অসাধারন। বিনা দ্বিধায় উপভোগ্য একটি মুভি! সিনেমা রিভিউ
Body of lies (২০০৮)
রাসেল ক্রো আর লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও এই দুই অসাধারন প্রতিভাবান অভিনেতাকে যিনি একত্রিত করে ‘মিথ্যার বেসাতি’ সাজিয়েছেন তিনি আরেক প্রতিভাবান পরিচালক রিডলি স্কট যিনি কিনা এর আগে এলিয়েন, গ্লাডিয়েডর, ব্লাক হক ডাউন এবং আমেরিকান গ্যাঙস্টারস এর মত অসাধারন ফিল্ম বানিয়েছেন। তবে এই মুভিটি ভিন্ন, এই প্রথম রিহলি স্কট টেররিজম, বিশেষ করে মুসলিম টেররিস্টদের নিয়ে মুভি বানিয়েছেন।
মুভিতে ক্যাপ্রিও একজন সিআইএ এজেন্ট, নাম ফেরিস, কাজ করে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে। আর ক্রো হলেন তার বস, নাম হফম্যান, স্যাটেলাইট ক্যামেরার মাধ্যমে সর্বক্ষন নজরে রাখছে ফেরিস কে। ইরাক, তুরস্ক, সিরিয়া, জর্ডান – দেশগুলোতে ঘুরে বেড়ায় ফেরিস, তার অসাধারন সব যোগ্যতা, আরবীতে কথা বলতে পারে, জিহাদ নিয়ে কোরানের আয়াত পাঠ করতে পারে অবলীলায়। জর্ডানের ইনটেলিজেন্স এর সহযোগিতা নিয়ে ধরতে চেষ্টা করে আল সালিম কে। এক পর্য়ায়ে সখ্যতা গড়ে উঠে আম্মানের মেয়ে আইশার সাথে। কিন্তু সব মুভিতে যা হয়, আইশাকে বাচাতে গিয়ে ধরা পড়ে ফেরিস, জবাই দেয়ার জন্য শোয়ানো হয় টেবিলে, চালু করা হয় ক্যামেরা, আর তলোয়ার নিয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোর বানী দেয়ার জন্য তৈরী হয় মুজাহেদীনরা।
পুরা মুভি জুড়ে পরিচালক একটি ব্যাপারকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন – সবই মিথ্যা। সিআইএ সহ অন্যান্য ইনটেলিজেন্স আর ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ – সবই মিথ্যাকে আশ্রয় করে, নিজেদের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য।
ভালো লাগতে পারে। আলাদা একটি পোস্টে বিস্তারিত সিনেমা রিভিউ লিখেছি।
Atonement (২০০৭)
ব্রিটিশ ফিল্ম । অভিনয় করেছেন প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস এর সেই সুন্দরী কায়রা নাইটলি। অসাধারন সব ল্যান্ডস্কেপ আর যুদ্ধোত্তর ধংসস্তুপের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে মুভিটিতে।
একই নামের উপন্যাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এই মুভিতে চারটি অংশ। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব থেকে শুরু করে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। তেরো বছরের বালিকা যে একজন উঠতি বালিকা, ব্রাইওনি ট্যালিস, তার বড় বোন সিসিলিয়ার সাথে রবির সম্পর্কের ভিন্ন ব্যাখ্যা দাড় করায়। রবি তাদের ভৃত্যের ছেলে যে কিনা সিসিলিয়ার সাথেই ক্যামব্রিজে পড়েছে এবং এখন মেডিকেলে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনটি ঘটনাকে, তিনটিই যৌনতা সম্পর্কিত, ভুল ব্যাখ্যা করার ফলে ফেসে যায় রবি, ধর্ষনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়, সাজা হয়। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, আর তাই যুদ্ধে যোগ দিতে হয় রবিকে।
এদিকে পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে রবির জন্য অপেক্ষায় থাকে সিসিলি। সময় কেটে যায়। বড় হয় ব্রাইওনি, সে এখন একজন নার্স। এবং একদিন জানতে পারে, রবি নয়, বরং তার ভাইএর বন্ধু পল মার্শাল।
পরের পর্ব ১৯৯৯ সালের। ব্রাইওনি এখন বৃদ্ধা, তার শেষ উপন্যাস এটনমেন্ট, যা একই সাথে তার প্রথম উপন্যাসও বটে, এবং বাস্তব উপন্যাস যার শেষটা বাস্তবের মতো নয়।
খুব ভালো লেগেছে মুভিটা দেখে। ভালোবাসার যে আবেগ তা সহজেই ছুয়ে যায়। মাস্ট সি মুভি!
শততম পোস্টের শুভেচ্ছা সবাইকে। সিনেমা রিভিউ সিনেমা রিভিউ সিনেমা রিভিউ।
ronin chara baki duita dekhechi. atonement amaro pochonder movie. dhonnyabad.