আপনারা যারা ফেসবুকে লিখালিখি করেন কিন্তু নিজেদের এবং আপনারা যারা ফেসবুকে উনাদের লিখার পাঠক – তাদের উভয়েরই উচিত সাবস্ট্যাক (substack ডট কম) ব্যবহার করা।
সাবস্ট্যাক হলো লিখালিখির প্লাটফর্ম। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পরপরই এই প্লাটফর্মটি পেশাদার এবং অপেশাদার লেখকদের প্রিয় ওয়েবসাইটে পরিণত হয়। পাশাপাশি পাঠকেরাও একই জায়গায় পছন্দের লেখকদের লেখা ঝামেলামুক্ত উপায়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে গ্রহণ করে। বাংলাদেশে লেখকদের কাছে সাবস্ট্যাক অবশ্য অতটা পরিচিতি পায়নি। আমি অল্প কিছু বাংলা সাবস্ট্যাক একাউন্ট পেয়েছি। এদের মধ্যে নিয়মিতভাবে যারা সাবস্ট্যাকে লিখা প্রকাশ করেন তাদের মধ্যে ব্রাত্য রাইসু, মুরাদুল ইসলাম, জিয়া হাসানকে পেয়েছি।
সাবস্ট্যাকে সুবিধা কী? রেজিস্ট্রেশন করলে সাবস্ট্যাকের ডোমেইনে আপনার নিজের পছন্দের সাবডোমেইন ওয়েবসাইট তৈরি করা যাবে এবং প্রকাশিত লিখাগুলো ওয়েবসাইটের মতো করেই সাজিয়ে রাখা যাবে। লিখালিখির প্লাটফর্ম হওয়ার কারণে এখানে আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী ফরম্যাটিং করতে পারবেন, ছবি ভিডিও ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্য কোন ফি নেই, স্পেস এর সীমাবদ্ধতাও নেই। যা লিখবেন তা সাজিয়ে রাখা হলে আগ্রহী পাঠকরা পুরাতন লিখাগুলোও খুঁজে নিতে পারবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপনিও হাইপারলিংক করতে পারবেন। যারা লিখালিখির পাশাপাশি পডকাস্ট করতে আগ্রহী তাদের জন্যও সাবস্ট্যাক এ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, ইচ্ছে করলে সেগুলোও ব্যবহার করতে পারবেন।
লিখালিখির এরকম প্লাটফর্ম আগে থেকেই ছিল, যেমন ওয়ার্ডপ্রেস, ব্লগার ইত্যাদি। অনেকে সেটা ব্যবহারও করেন। সাবস্ট্যাক-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো নিউজলেটার। অর্থ্যাৎ, আপনি কোন লিখা প্রকাশ করলে সেটা ইমেইলের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইবারের কাছে পৌঁছে যাবে। এর ফলে আপনার কোন পাঠক যদি লিখা প্রকাশের সময় অনলাইনে নাও থাকতে পারেন, পরবর্তীতে কোন একসময় লিখাটি পড়ে নেয়ার সুযোগ পাবেন। সাবস্ট্যাকের ইমেইল কখনও স্প্যাম ফোল্ডারে যায় না – এমনটি দাবী করবো না, তবে এমন ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম ঘটে। এছাড়াও, সাবস্ট্যাক এ একাউন্ট থাকলে সেখানে নোটিফিকেশন পৌঁছায়, ফলে ইমেইল ছাড়াও আপনার প্রকাশিত লিখার খবর আপনার পাঠকের কাছে যাওয়ার সুযোগ থাকছে।
পাঠকের জন্যও সাবস্ট্যাক অনেক বেশি উপকারী। যাদের লিখা বা পডকাস্ট ভালো লাগে এবং কখনও মিস করতে চান না এমন লেখকদের সাবস্ক্রাইব করে রাখলে লিখা প্রকাশের খবর পৌঁছে যাবে ইমেইলে, মোবাইলে অ্যাপ ইনস্টল করা থাকলে নোটিফিকেশন যাবে। যারা নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখেন তারা দিনে একবার ফ্রি সময়ে সাবস্ট্যাক-এ ঢুঁ দিলে নতুন লিখাগুলোর খোঁজ পেয়ে যাবেন। সাবস্ট্যাক এ একাউন্ট থাকলে কমেন্ট করার সুযোগ পাওয়া যাবে এবং রিপ্লাই বা অন্যান্য নোটিফিকেশনও পাওয়া যাবে।
লেখক বা পাঠক – উভয়ই প্রশ্ন করতে পারেন – ফেসবুক থাকার পরেও সাবস্ট্যাক এর প্রয়োজন কোথায়? উপরের অংশ পড়ে থাকলে বুঝবেন সাবস্ট্যাক এ লেখকের জন্য পাঠক হারানো এবং পাঠকের জন্য লেখা মিস করার সুযোগ থাকেনা বললেই চলে। আর্কাইভিং ফিচার থাকার কারণে পুরাতন লিখাগুলো সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া, লেখাকে পরিশীলিতভাবে উপস্থাপনের জন্য লেখককে বাড়তি অনেক সুবিধা প্রদান করে সাবস্ট্যাক। এর মধ্যে অন্যতম একটি বড় সুবিধা হলো – প্রয়োজনমাফিক অন্য কোন সাইটের সূত্র হাইপারলিংক করা।
ফেসবুকে লিখালিখির নানাবিধ সমস্যার একটি হলো – অন্য যে কোন সাইটের লিংক যুক্ত করলেই পোস্টের রিচ কমে যায়। লেখকরা বিষয়টি খেয়াল করে থাকবেন। যারা ফেসবুক পেইজ পরিচালনা করেন তারা আরও সমস্যায় আছেন। বুস্ট করা ছাড়া ফেসবুক পেইজ থেকে রিচ হয় সামান্যই। এছাড়া, ফেসবুকে ডিসট্র্যাকশন অনেক অনেক বেশি, সাবস্ট্যাক বিজ্ঞাপনমুক্ত। সবচেয়ে বড় কথা হলো ফেসবুক নিজেই কর্তা, কে কি দেখবে, সেটা ফেসবুকই ঠিক করে।
স্পষ্ট করে বলি – ফেসবুকে লিখালিখি বাদ দেয়ার জন্য উৎসাহিত করছি না কিন্তু। ফেসবুক আমজনতার জায়গা। অন্যান্যদের দেয়া ছবি, ভিডিও দেখার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দুইএকটি লিখা পড়তে আগ্রহীদের সংখ্যাই এখানে বেশি। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা পাঠক হিসেবে একটু সিরিয়াস, লেখকরাও এমন পাঠককে কদর করেন। এজন্য ফেসবুকের তুলনায় সাবস্ট্যাক অনেক বেশি উপকারী। একই লিখাকে সাবস্ট্যাক এবং ফেসবুকে প্রকাশের জন্য সামান্য বাড়তি কষ্ট লেখককে করতে হবে বটে, কিন্তু নিবেদিত পাঠকের জন্য এ কষ্টটুকু সহ্য করা যায়, নাকি?
বলে রাখি, লেখকদের জন্য বাড়তি সুবিধা হলো – সাবস্ট্যাক-এ পেইড কন্টেন্ট যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সাবস্ক্রাইব করা পাঠকরাই সে সকল লিখা পাঠের সুযোগ পান, লেখকও কিছু বাড়তি উপার্জন করতে পারেন। ব্রাত্য রাইসু, মুরাদুল ইসলাম সহ কেউ কেউ তাদের সাবস্ট্যাক এ ফ্রি কন্টেন্ট এর পাশাপাশি পেইড কন্টেন্টও রাখেন। তবে, আপনারা যারা ফেসবুকে বিনামূল্যে লিখালিখি করেন, তাদেরকে সাবস্ট্যাকেও মূল্য গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করবো।
সুতরাং, যারা লিখেন, তারা সাবস্ট্যাক-এ লিখা প্রকাশ শুরু করুন। যারা পাঠক, তারা আপনাদের প্রিয় লেখকদেরকে সাবস্ট্যাকে লেখা প্রকাশের জন্য উৎসাহিত করুন, নিজেরাও সাবস্ট্যাকে পড়ার অভ্যাস করুন। ঠকবেন না।