এই সময়ে বাংলাদেশে শবে বরাত (শব-ই-বরাত) মানে হলো শবে বরাত পন্থী আর পরিপন্থীদের মধ্যে জায়েজ-নাজায়েজের বিতর্ক। শবে বরাত বলে কিছু আছে কি-না, রাসূল (স) এর সময়ে পালন করা হতো কি-না,পক্ষের লোকজন যে সকল সূত্র বা হাদীস উপস্থাপন করেন সেগুলো ঠিক কি-না এই নিয়া বিতর্ক যেমন আছে, তেমনি মধ্য শা’বানের রাত্রি হিসেবে ইবাদত বন্দেগী করা গেলেও হালুয়া রুটি জর্দা পায়েস খাওয়া জায়েজ হবে কি-না সেই নিয়াও বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের মধ্য দিয়া পন্থী ও পরিপন্থী গোষ্ঠির লোকজন ব্যাপক সওয়াব কামাই করে নেয়। কিন্তু এই দুই পন্থী ছাড়াও আরেকপন্থী আছে, তারা হলো মধ্যপন্থী।
এই দলে আছে আমার মতো লোকজন – এরা জায়েজ-নাজায়েজ নিয়া চিন্তা করে না বরং শবে বরাতের ছুটি কি বারে পড়ল তাই নিয়া চিন্তা করে, কোথাও হালুয়া-জর্দা-পায়েস লেখা দেখলেই এদের জিহবায় পানি চলে আসে, খাওয়া সঠিক না বেঠিক – সেটা ভাবার সুযোগটাই পায় না। শবে বরাত পালন করা না করা নিয়ে বাকী দুই পন্থী লোকজন যতটা না কষ্টে পায়, তার চেয়ে বেশি কষ্টে যন্ত্রণায় অনিশ্চয়তায় ভুগে এই মতো মধ্যপন্থী জনগণ। একে তো পন্থীদের স্ট্যাটাস-ছবি-ভিডিওতে দেখতে থাকে সেমাই জর্দা আর হালুয়া, অন্যদিকে পরিপন্থীদের প্রচার এস্টাবলিশড হয়ে গেলে ভবিষ্যতের রুটি হালুয়ার কি হবে ভেবে বিড়বিড় করে বলতে থাকে লা হাওলা.. লা হাওলা।
শবে বরাতের কুমীর রুটি
জোহরের সময় হুজুর শবে বরাতের রাত্রের ইবাদত বন্দেগীর ফজিলত নিয়ে আলোচনা করলেও হালুয়া-জর্দা খাওয়া নিয়ে কিছু বলে নাই। প্রথমে একটু দুঃখ লাগলেও পরে বুঝলাম – হুজুর তো খাইতে নিষেধও করে নাই। অফিস থেকে বের হয়েই দেখি বিশালাকৃতির সব রুটি বিক্রি হচ্ছে, বেকারির দোকানে ভীড়। ঠেলেঠুলে দেখলাম – নতুন কিছু আসলো কি-না। এই বেকারির লোকজন সম্ভবত বলেন বিএনপিপন্থী, নাহয় চামচামির অভ্যাস নাই। কারণ তারা কুমির, মাছ, কুলা, পাখি ইত্যাদি ডিজাইনের রুটি বানালেও পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল কিংবা রূপপুরের আদলে কোন রুটি বানায় নাই। পত্রিকায় দেখলাম – আজকে নাকি তর্জনী ব্রাউজার উদ্বোধন করা হইছে, আমি বেকারির মালিক হইলে আজকে তর্জনী রুটি বানায়ে পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠাইতাম।
ফেরার জন্য গাড়িতে উঠে দেখি – সহযাত্রীর হাতে লাল ব্যাগ। সেই ব্যাগের মধ্যে লাল বাটি আর লাল বাটির স্বচ্ছ ঢাকনা দিয়ে লাল লাল জর্দা উঁকি দিচ্ছে। আরেকজনের ঘরে চোখ দেয়া অন্যায়, কিন্তু মন পড়ে থাকলে কি হবে জানা নাই, তাই চোখ সরালেও মনটাকে আর সরানোর চেষ্টা করিনি। কি দরকার শুধু শুধু মনটাকে কষ্ট দেয়ার। মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা তো সমান, তাই না?
ঘরে তৈরি মোরব্বা রুটি
ঘরে ঢুকেই মনটা জুড়িয়ে গেল। বিবি প্রাচীনপন্থী, বোধহয় শবে বরাত পন্থী-পরিপন্থীদের ক্যাচালে এখনও ঢুকেনি, তাই খেটেখুটে সুজির হালুয়া বানিয়েছে। বললাম – ঘটনা কি? বলল, কুমীর রুটি কিনতে চেয়েছিল, দাম শুনে মনে হয়েছে – কুমীরটাই কামড়ে দিয়েছে। মনের দুঃখে তাই হালুয়া বানিয়ে ফেলেছে। বললাম, কুমীর থেকে ছাড়া পাইছো? বলল, কুমীরটা ছাড়ছিল না, তাই বাধ্য হয়ে মোরব্বা রুটির খামি তৈরী করে ওভেনে ঢুকিয়ে দিয়েছি। ওভেনের গরমে কিনা জানিনা, কুমীরটা আর দেখা যাচ্ছে না।
ফ্রেশ হয়ে দেখি মোরব্বা রুটি তৈরি। গরম গরম রুটিতে কামড় দিলাম, রুটির শরীর ভেদ করে দাঁতগুলো যখন মোরব্বার পিঠে বসে পড়ল, জিহবাটা তখন মোরব্বার স্বাদ নেয়ার জন্য লকলক করছে। কুমীরের মত টান দিয়ে মোরব্বাসহ রুটিটা ছিড়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি – বিশাল একটা হলদে লাড্ডু আকাশে ঝুলে রয়েছে।
এত চমৎকার লাড্ডু আকৃতির চাঁদ দেখে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম – আজকে রাতে ইবাদত বন্দেগী করতেই হবে। না চাইতেই আকাশের ঐ লাড্ডুর কারিগর মোরব্বা রুটি আর হালুয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, চাইলে না জানি কত কি দিবেন!