এল রয়্যাল একটি হোটেলের নাম। আমেরিকার নেভাদা এবং ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য যেখানে বিভক্ত হয়েছে ঠিক সেখানেই হোটেলটি অবস্থিত। হোটেলের অর্ধেক পড়েছে নেভাদায়, বাকী অর্ধেক ক্যালিফোর্নিয়ায়। এক রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ, তাই হোটেলের বারের অবস্থান অন্য রাজ্যে। অদ্ভুত এই হোটেলে কোন একদিন একে একে হাজির হয় চারজন অতিথি। তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে ব্যক্তিগত ঘটনা। ব্যাড টাইমস এট এল রয়্যাল সিনেমার ভাঁজে ভাঁজে সেই ঘটনার খোঁজ পাওয়া যায়।
এই চারজন অতিথির অন্ততঃ একজনের উদ্দেশ্য শুরুতেই বোঝা যায়। দশ বছর আগে এই হোটেলেরই এক রুমে একজন খুন হয়ে গিয়েছিল। খুন হওয়ার আগে রুমের মেঝেতে কিছু একটা লুকিয়ে রেখেছিল সে। সিনেমার একদম শুরুর দৃশ্যে আমরা সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ্য করি। চার অতিথির কোন একজন সেই গুপ্ত জিনিসের খোঁজে এসেছে তেমনটি ধারণা করে নিতে আমাদের কষ্ট হয় না।
তবে ব্যাড টাইমস এট এল রয়্যাল সিনেমার গল্প যে ঠিক কোনদিকে যাবে তা নিয়ে দর্শক হিসেবে সংশয়ে পড়ে যেতে হয় যখন একজন চরিত্র তার কক্ষের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা আড়িপাতার যন্ত্র খুঁজে বের করেন। যে দক্ষতার সাথে তিনি যন্ত্রগুলো খুঁজে বের করেন তা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি কোন সাধারণ ব্যক্তি নন।
ব্যাড টাইমস এট এল রয়্যাল সিনেমার গল্প যেভাবে এগোয়, তাতে আগ্রহ কমে না, বরং এনগেজমেন্ট বাড়ে। ধীরে ধীরে টেনশন তৈরী হতে থাকে। গল্পটাও আনফোল্ড হয় ধাপে ধাপে। কোয়ান্টিন টারান্টিনোর গল্প বলার স্টাইল এটিই। দ্য হেইটফুল এইট, জ্যাঙ্গো আনচেইন্ড কিংবা ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ড এর স্টোরিটেলিং এর সাথে মিলিয়ে নিন, নিজেই বুঝতে পারবেন।
শুধু গল্প বলার স্টাইল নয়। ভিজুয়ালেও টারান্টিনোর প্রভাব স্পষ্ট। বিভিন্ন চ্যাপ্টারে ঘটনাগুলো বলা হয়েছে। আর আছে দীর্ঘ মনলোগ স্টাইলের সংলাপ। আপনি যদি টারান্টিনোর সিনেমা দেখে অভ্যস্ত না হন, তবে গল্পের মোড়গুলো, এবং সমাপ্তি, আপনাকে উত্তেজিত করে তুলবে। সাথে ছবির মিউজিক, বিশেষ করে লারামি যখন একাকী ঘুরে ঘুরে হোটেলের গোপন বিষয়গুলো আবিষ্কার করছিল, সেই সময়ে ডারলিনের গান এক অসাধারণ আবেশ তৈরী করে, দর্শককে মোহাবিষ্ট করে রাখে।
অথচ ব্যাড টাইমস এট এল রয়্যাল সিনেমার পরিচালক কুয়েন্টিন টারান্টিনো নন। তার নাম ড্রু গদার্দ। তার পরিচালিত সিনেমা সাকুল্যে দুটো হলেও স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত। তার স্ক্রিপ্টেড টিভি সিরিজগুলোর মধ্যে ‘লস্ট’ বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে একটু একটু পরিচিত ঠেকতে পারে, তবে তার স্ক্রিপ্টেড সিনেমা দ্য কেবিন ইন দ্য উডস, ওয়ার্ল্ড ওয়ার জি এবং দ্য মার্টিয়ান এর নাম অবশ্যই পরিচিত ঠেকবে। বিশেষ করে, দ্য মার্টিয়ান এর জন্য ড্রু অস্কারের নমিনেশন পেয়েছিল।
চলচ্চিত্র সমালোচকরা ব্যাড টাইমস এট এল রয়্যাল সিনেমায় অবশ্য কেবলমাত্র টারান্টিনো নন, স্ট্যানলি কুব্রিকের সিনেমার সাথেও মিল পেয়েছেন (আমি পাইনি)। ড্রু’র এই সিনেমা কি কুয়েন্টিন টারান্টিনোর প্রতি কোন ট্রিবিউট – এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নি।
উত্তর যাই হোক, ড্রু’র এই সিনেমা আর্থিকভাবে সফল না হলেও ক্রিটিকদের দৃষ্টিতে কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। সেরা থ্রিলার সিনেমা হিসেবে স্যাটার্ন এ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে ২০১৯ সালে (আর এভাবেই সিনেমাটি আমার ওয়াচলিস্টে ঢুকে পড়ে)। নমিনেশন পেয়েছিল আরও অনেকগুলো ক্যাটাগরিতে যার মধ্যে সেরা অভিনেতা, সহ অভিনেতা, সহ অভিনেত্রী ছিল। শুধু গল্প বা নির্মাণ নয়, অভিনেতা অভিনেত্রীদের পারফরম্যান্সও যে সন্তুষ্ট করার মত তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
কুয়েন্টিন টারান্টিনো নাকি সব মিলিয়ে দশটি ছবি নির্মাণ করবেন। ইতোমধ্যে তার নবম ছবিটিও মুক্তি পেয়ে গেছে (টারান্টিনো কিল বিল চলচ্চিত্রের দুটি পর্বকে একটি সিনেমা হিসেবে গণ্য করেন) । যদি তিনি আর কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ নাও করেন টারান্টিনোপ্রেমীরা হয়তো ড্রু গদার্দ এর মধ্যে টারান্টিনোকে খুঁজে পেয়ে তৃপ্ত হবেন।
অন্ততঃ ব্যাড টাইমস এট এল রয়্যাল সিনেমা দেখে অতৃপ্ত হবেন না – এ কথা বলতে পারি।