বিখ্যাত গোয়েন্দা একেনবাবু

গোয়েন্দা একেনবাবু
বিখ্যাত গোয়েন্দা একেনবানু এখন টিভিপর্দায়

বিখ্যাত গোয়েন্দা একেনবাবুর সাথে আমার পরিচয় ইউটিউবে। অবশ্য একেনবাবুকে বিখ্যাত বলা উচিত হবে কিনা নিশ্চিত নই, কারণ বিখ্যাত হলে তার সাথে পরিচয় অন্য কোথাও হতো, নিদেনপক্ষে ইউটিউবের বড় ভাই গুগলের মাধ্যমে তো অবশ্যই। এমন না যে, জগতের সকল (অন্ততপক্ষে বঙ্গভাষী) বিখ্যাত গোয়েন্দার সাথে আমার পরিচয় আছে। ভিডিও বের না হলে এই সেলিব্রেটি গোয়েন্দার সাথে সাক্ষাৎ হতো কিনা সন্দেহ, সে হিসেবে মাঝে মধ্যে সেলিব্রেটিদের ভিডিও বের হওয়া কল্যাণকর, অন্ততপক্ষে এর মাধ্যমে পরিচিত ব্যপকতা পায়।

যাহোক, কোলকাতা ভিত্তিক অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট ‘হৈ-চৈ‘ গোয়েন্দা একেনবাবুকে নিয়ে ওয়েব সিরিজ বানিয়েছে। দুটো সিজন শেষ হয়ে তৃতীয় সিজন শুরু হয়েছে। একেনবাবুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে পোটেনশিয়াল কাস্টমারদেরকে ‘হৈ-চৈ’-তে টেনে নেয়ার উদ্দেশ্যে দু-একটা পর্ব ইউটিউবে প্রচার করে প্রমোশন চালাচ্ছে বলেই একেনবাবুর সাথে পরিচয়। অত্যন্ত হাসিখুশী, দিলখোলা ভদ্রলোক এই একেনবাবু। আচরণে শিশুতোষ ভাব প্রবল। মাথায় বিশাল টাক। নাকের নীচের ইয়া মোটা গোঁফ দেখে মনে হতে পারে মাথার চুল সেখানেই জমা হয়েছে।

সিরিজের প্রথম সিজনের নাম একেনবাবু। মোট এপিসোড দশটি। ভারতের ব্যাঙ্গালোরে গোয়েন্দা একেনবাবু তার বন্ধুর রেফারেন্সে বাপ্পাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের বাড়িতে এসে উঠেছেন। বাপ্পার বন্ধু প্রমথ’র বাড়িতে সেদিনই আত্মহত্যা করলেন প্রমথ’র রুমমেট অবিনাশের মামা। কিন্তু একেনবাবু একে আত্মহত্যার পরিবর্তে মার্ডার বলে ধারণা করলেন৷ সিরিজের দশ পর্ব জুড়ে এই রহস্যের সমাধান করেছেন একেনবাবু, সাথে ছিল বাপি এবং প্রমথ। মূলত এই সিজনের মাধ্যমে একেনবাবুর সাথে বাপি এবং প্রমথর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

একেনবাবু ‘সরকারের কেরানি, ছ্যাচড়া কাজ’ করেন। আচরণে বেশ সরল, ভুলভাল প্রবচন ব্যবহার করেন। বিবাহিত। স্ত্রী কোলকাতায় থাকেন। কোন সহকারী নেই। চেহারায়-স্বাস্থ্যে গোয়েন্দার পরিচয় পাওয়া মুশকিল। সিরিজে একেনবাবুর যে চিত্রায়ন, তাতে বলে না দিলে অবশ্য একেনবাবুকে একালের জটায়ু বলেই ধরে নিতাম।

এই যে একেনবাবুর পরিচয় দিচ্ছি, তিনি কিন্তু ভিডিওর একেন্দ্র সেন ওরফে একেন। বইয়ের গোয়েন্দা একেনবাবু দেখতে ঠিক এরকম নন – পাঠকের এমন মন্তব্য পাওয়ার পর এবং সিরিজের প্রথম সিজন দেখার পর আসল একেনবাবুর সাক্ষাৎ পেতে খুব আগ্রহ হলো। দুটো গল্প পড়ার পর আসল একেনবাবু সম্পর্কে এখন আমারও কিছু ধারণা হয়েছে।

গোয়েন্দা একেনবাবুর স্রষ্টা সুজন দাশগুপ্ত৷ ছোটদের জন্য ধাঁধা এবং গোয়েন্দা গল্প লিখেছেন আনন্দমেলা পত্রিকায়। গোয়েন্দা একেনবাবুর আত্মপ্রকাশও সেখানে। প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়েছিল সেই ১৯৯০ সালে, নাম ম্যানহাটনে মুনস্টোন। পরবর্তীতে অবশ্য গোয়েন্দাগল্পগুলো ছোটদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকেনি। ফেলুদার গল্প যেমন আমরা তোপসের জবানীতে পাই, একেনবাবুর গল্প তেমনি বাপির জবানীতে পাওয়া যায়। একেনবাবুকে নিয়ে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে, যেমন ম্যানহাটনে ম্যানহান্ট, ম্যানহাটনে মুনস্টোন, ম্যানহাটনে ম্যাডম্যান, আসল খুনির সন্ধানে, শান্তিনিকেতনে অশান্তি, ঢাকা রহস্য উন্মোচিত, ধাঁধাপুরীর গোলক ধাঁধা ইত্যাদি। ম্যানহাটনে মুনস্টোন অবলম্বনেই একেনবাবু সিরিজের প্রথম সিজন নির্মিত হয়েছে।

ওয়েব সিরিজ হিসেবে একেনবাবু বেশ উপাদেয়। একেনবাবুর চরিত্রে এক অনির্বান চক্রবর্তীই পুরো সিজন টেনে নিয়ে যান। বাকীরা খুচরো। গোয়েন্দা গল্প হিসেবে অবশ্য একেনবাবু সিরিজ খুব আহামরি কিছু নয়। প্রেডিক্টেবল উপস্থাপনা। হয়তো বেশি জটিল গল্প জনগণ পছন্দ করবেন না ভেবেই সরল উপস্থাপন। তাছাড়া, ম্যানহাটনের গল্পকে ভারতে এবং ত্রিশ বছর আগের গল্পকে বর্তমান সময়ে নিয়ে আসতে গিয়ে বেশ ফাঁকফোকর তৈরি হয়েছে গল্পে। অভিনয়ে দুর্বলতা আছে অনেকেরই। ছোটপর্দার জন্য নির্মান করা হয়েছে বলে সিনেমার ডিটেইলস পাওয়া যাবে না। তা সত্ত্বেও হাস্যরসের মিশেলে হত্যারহস্যের সমাধান উপভোগ করার মতোই।

যেহেতু প্রথম সিজন আর তৃতীয় সিজনের মূল গল্প পড়ে নিয়েছি, সেহেতু জানি, যারা গল্প পছন্দ করেন তাদের জন্য বই-ই বেটার অপশন। অন্ততঃ ম্যানহাটনে মুনস্টোন ভিডিওর তুলনায় অনেক পরিণত এবং বইয়ের একেনবাবুকে ভাঁড় মনে হবার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে। আর নিছক বিনোদনের জন্য ওয়েব সিরিজ মন্দ হবে না।

সবশেষে জানিয়ে দেই, একেনবাবু বর্তমানে ঢাকায় ‘ঢাকা রহস্য উন্মোচনে’ ব্যস্ত রয়েছেন। সিরিজের এই সিজনে একটি পর্ব প্রচারিত হলো কেবল। কোলকাতার অভিনেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশি অভিনেতাদেরকেও পাওয়া যাবে সেখানে।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *