উইকিপিডিয়ায় বাংলাদেশি এক পরিচালকের পাতা দেখছিলাম। ভদ্রলোক অনেকগুলো ছবি বানিয়েছেন। মানসম্মত এবং মানহীন দু ক্যাটাগরীতেই।এক ক্যাটাগরীতে কম, অন্যটায় বেশি। দেখতে দেখতেই মাথায় ভাবনার উদয় হল – বাংলাদেশে সর্বাধিক সিনেমার পরিচালক কে? কাজী হায়াত? নাকি মনতাজুর রহমান আকবর? বলিউডে কে? সম্পূর্ণ ভারতে? গোটা বিশ্বে? আগ্রহের পরিতৃপ্তি সম্ভব গুগলের সাহায্যে। দেখা যাক, গুগল কি বলছে।
যে সকল সিনেমা বিবেচনা করা হয়নি
সর্বাধিক সংখ্যক চলচ্চিত্রের নির্মাতা কে তা জানার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে নেয়া দরকার। চলচ্চিত্রের ্ইতিহাসের একদম গোড়ার দিকে যখন চলচ্চিত্র বা চলমান ছবি বা মুভিং ইমেজকে চলচ্চিত্র বলা হত সেগুলোকে সাধারণভাবে চলচ্চিত্র হিসেবে গন্য করা হয় না। সে সময় দশ সেকেন্ড, বিশ সেকেন্ড কিংবা এক মিনিট দৈর্ঘ্যের অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল যেখানে কোন গল্প ছিল না, দৃশ্যের কোন ভেরিয়েশন ছিল না। সে সময় ক্যামেরা থাকতো স্থির, ক্যামেরার সামনে মানুষজন নড়াচড়া করত। একটি ট্রেন রেলস্টেশনে ঢুকছে, কিংবা একটি কারখানা থেকে দল বেঁধে শ্রমিকরা বের হচ্ছে এ ধরনের সুপারহিট এবং ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র সে সময় নির্মিত হয়েছিল।
বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্র বলতে সাধারণভাবে যা বোঝায় যেখানে একটি গল্প থাকবে, দৃশ্যের ভেরিয়েশন থাকবে ইত্যাদি সে সব চলচ্চিত্রের হিসাবেই সর্বাধিক চলচ্চিত্র নির্মাতা কে তা নির্ণয় করার চেষ্টা। অন্যথায় ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ বা জর্জ মেলিয়ুদের ছাড়িয়ে যাওয়ার মত চলচ্চিত্রকার পাওয়া দুঃসাধ্য কারণ তারা এ ধরনের শত শত চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলেন, হাজার হওয়াও আশ্চর্যজনক কিছু নয়।
পর্ণগ্রাফিক ফিল্মও বিবেচনা করা হয়নি
সর্বাধিক চলচ্চিত্রের পরিচালককে খুঁজে বের করার সময় পর্ণগ্রাফিক ফিল্মকেও বাদ দেয়া উচিত। কারণ, এ ধরনের চলচ্চিত্রে গল্প বলে কিছু থাকলেও শিল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। অবশ্য সফট পর্ণ ফিল্ম নির্মান করেন এরকম অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা রয়েছেন যারা শৈল্পিক পর্ণ ফিল্ম তৈরীর চেষ্টা করেছেন। সতরু কোবায়শি (Satoru Kobayashi) নামের একজন জাপানী চলচ্চিত্র নির্মাতা রয়েছেন যিনি চারশর অধিক ফিচারলেন্থ বা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন বলে জানা যায়। ভদ্রলোক যে ধরনের ফিল্ম নির্মান করতেন তাকে পিংক ফিল্ম বলে।
পিংক ফিল্মও এক ধরনের সফটপর্ণ চলচ্চিত্র। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, এ সকল চলচ্চিত্রে নগ্নতা এবং যৌনতা সংশ্লিষ্ট বিষয় থাকতো এবং এগুলো সিনেমা হলেও মুক্তি পেত। বলা হয় ১৯৬০ থেকে শুরু করে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি চারশ’র বেশি চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন। ১৯৬২ সালে Flesh Market নামের প্রথম পিংক ফিল্মটি নির্মান করেছিলেন সতরু কোবায়শি।জাপানী চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই সিনেমার মাধ্যমেই সর্বপ্রথম পর্দায় নগ্ন নারীবক্ষ প্রদর্শন করা হয়েছিল। সতরু’র ফিল্ম ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য উইকিপিডিয়ায় ঘুড়ে আসতে পারেন।
সারা বিশ্বে সর্বাধিক সিনেমার পরিচালক কে
হলিউডের নির্মাতা উইলয়াম বিউদিন (William Beaudine) হলেন একজন সত্যিকারের প্রলিফিক (Prolific) চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন মোট ১৮২টি। তিনি ১৯২০এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত সময় চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বিভিন্ন জনরার এবং লো-বাজেট ফিল্ম। তিনি সায়েন্স ফিকশন বানিয়েছেন, ওয়েস্টার্ণ সিনেমা বানিয়েছেন, ড্রামা, রোমান্টিক, হরর, কমেডি ঘরানার সিনেমাও বানিয়েছেন। ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ ছিলেন তার ওস্তাদ। উইলিয়ামের সিনেমার তালিকা দেখতে পারেন আইএমডিবি-তে অথবা উইকিপিডিয়ায়।
উইলিয়াম বিউদিনের কাছাকাছি আরও কিছু পরিচালক আছে। যেমন রিচার্ড থর্প। তার পরিচালিত সিনেমার সংখ্যা ১৭৯। তিনি বি / সি গ্রেডের সিনেমাই বানিয়েছেন। জেসাস ফ্রাংকো নামের একজন স্প্যানিশ সিনেমা নির্মাতা ছিলেন যিনি ১৮০ বা তার বেশি চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলেন।
ভারতের সর্বাধিক সিনেমার পরিচালক যিনি
ভারতের সবচে বেশি সিনেমার পরিচালক হলেন জে শশিকুমার। তিনি মালয়লাম সিনেমা নির্মান করতেন। তার নামের সাথে ‘হিটমেকার’ শব্দটি যুক্ত করা হত কারণ তিনি বাণিজ্যিকভাবে সফল অনেক সিনেমা নির্মান করেছিলেন। শশিকুমারের নির্মিত সিনেমার সংখ্যা ১৪১। তার আরও একটি রেকর্ড আছে। একই নায়কের সাথে সর্বাধিক সিনেমায় জুটি বেঁধে সিনেমা নির্মান করা। নায়কের নাম প্রেম নাজির, সিনেমার সংখ্যা ৮৪। একই বছরে একজন পরিচালকের সর্বাধিক মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার রেকর্ডটিও তার দখলে। ১৯৭৭ সালে তার পরিচালনায় ১৫টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। সূত্র উইকিপিডিয়া।
বাংলাদেশে কে?
বাংলাদেশে সর্বাধিক সিনেমার পরিচালক কে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নি। কাজী হায়াৎ বছরখানেক আগে তার ৫০তম চলচ্চিত্র ছিন্নমূল নির্মান করেছেন। মনতাজুর রহমান আকবর নির্মান করেছেন তার চেয়েও বেশি সিনেমা। তার নির্মিত সিনেমার সংখ্যা ৫৭। তবে সম্ভবত সর্বাধিক সিনেমার নির্মাতা হলেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। কালের কন্ঠ জানাচ্ছে তার নির্মিত সিনেমার সংখ্যা ৭৩টি। এছাড়া তিনি চিত্রনাট্য লিখেছেন সাড়ে তিনশ’র বেশি। কক্সবাজারের কলাতলী সি-বিচের কাছে একটি টিলার মত জায়গায় তিনি এত বেশি শ্যুটিং করেছেন যে এফডিসি’র লোকজন সেই টিলাকে বলে ঝন্টু পাহাড়।
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু এখনো বেঁচে আছেন। সুতরাং তিনি হয়তো আরও চলচ্চিত্র নির্মান করবেন এবং এমন রেকর্ড গড়বেন যা সহজে ছোঁয়া সম্ভব হবে না। প্রাসঙ্গিকভাবে, বাংলাদেশে সর্বাধিক চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার নাম আনা যেতে পারে। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এই রেকর্ডের মালিক হবেন। ইমপ্রেসের পত্রিকা আনন্দ আলো‘র সূত্রমতে, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা শতাধিক। সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমার মধ্যে যারা বাজেটের অভাবে নির্মান সম্পন্ন করতে পারেন না তাদের জন্য ইমপ্রেস টেলিফিল্ম অন্যতম সহায়। এছাড়া, সিনেমাহলে মুক্তি দেয়ার মত নয় এমন সিনেমা নির্মান করে চ্যানেল আইতে মুক্তি দেয়া সিনেমার সংখ্যায়ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এগিয়ে থাকবেন।
সিনেমার সংখ্যা কত দিনশেষে কেউই মনে রাখে না। বরং ভালো সিনেমার নাম এবং পরিচালকের নাম সকলেই মনে রাখে। জনাব ঝন্টুর রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়ার আগ্রহ নিয়ে কেউ এগিয়ে আসবেন না সে আশাই করি।
(স্বল্প সময়ের গুগলিং এর ফলাফল এই ব্লগ। যে কোন সংশোধনী সাদরে গৃহীত হবে। ধন্যবাদ।)