কিল বিল-খ্যাত কুয়েন্টিন টারান্টিনোর অষ্টম চলচ্চিত্র দ্য হেইটফুল এইট মুক্তি পেয়েছিল ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর তারিখে। কুয়েন্টিন টারান্টিনোর ছবি – আলোচনায় থাকার জন্য এই একটি কারণই যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু সেই আলোচনাকে তুঙ্গে তুলে দিয়েছিল যে বিষয়টি তা হল – সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে ৭০ মিলিমিটার (৭০ মিমি) ফিল্ম ফরম্যাটে। মুক্তির এক বছর পরে এসে ডিজিটাল ফরম্যাটে সেই ছবি দেখার পর ৭০ মিমি-র মাজেজা বোঝার কোন উপায়ই নেই বলা যায়। যেহেতু, ১৬ মিমি, ৩৫ মিমি কিংবা আসপেক্ট রেশিও সম্পর্কে যৎসামান্য জ্ঞান ছিল, তাই ৭০ মিমি-র মহাত্ম্য বোঝার জন্য কিছু পড়াশোনা করতে হল। দারাশিকো’র ব্লগের পাঠকদের সাথে সদ্য আহরিত জ্ঞান ভাগ করার চেষ্টা করা যায়।
৭০ মিমি ফিল্ম ফরম্যাট
২০১৫ সালে এসে ৭০ মিমি ফিল্ম ফরম্যাটে ফিল্ম বানানোর উদ্যোগটাই একটা পাগলামী, কারণ এই ফরম্যাটে সিনেমা নির্মান বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর আগে। ৬০ এবং ৭০ দশকের বহু ফিল্ম ৭০ মিমি-তে নির্মিত। কিছু বিখ্যাত চলচ্চিত্রের নাম উল্লেখ করা যায় – বেন হুর (১৯৫৯), দ্য লরেন্স অব এরাবিয়া (১৯৬২), ক্লিওপেট্রা (১৯৬৩) এবং জন ফোর্ডের শায়ান অটম (১৯৬৪)। বলে রাখা ভালো, ৭০ মিমি-তে সিনেমা নির্মান বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়, এরও পরে কেউ কেউ ৭০ মিমি-তে চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন, তা টারান্টিনোর মতই – সিনেমার প্রতি প্যাশন থেকে। যেমন ১৯৯২ সালের ডকিউমেন্টারি ফিল্ম ‘বারাকা’। এর প্রত্যেকটি দৃশ্য বাঁধাই করে রাখার মত চমৎকার।
দ্য হেইটফুল এইট
যেহেতু ৭০ মিমি ফিল্ম ফরম্যাটে চলচ্চিত্র নির্মান বন্ধ, তাই দ্য হেইটফুল এইট চলচ্চিত্র মুক্তির ক্ষেত্রেও টারান্টিনোকে ধৈর্য্য ধরতে হয়েছে। ছবিটি প্রথমে মাত্র একশটি থিয়েটারে মুক্তি দেয়া হয়েছিল যেখানে ৭০ মিমি-সিনেমা প্রদর্শনের ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তীতে অবশ্য ছবিটি সারাবিশ্বে মুক্তি পায়। সেক্ষেত্রে ৭০ মিমি-কে ৩৫মিমি-তে পরিবর্তন করে প্রদর্শিত হয়। টারান্টিনোর মত একজন সিনেপাগলের ক্ষেত্রে সম্ভবত বিষয়টি মেনে নেয়া কষ্টকর হয়েছে, কারণ ৭০ মিমি-তে নির্মিত চলচ্চিত্রের কোয়ালিটি ৩৫ মিমি-তে পাওয়া যায় না। বলে রাখা ভালো, ৩৫ মিমি কিংবা ৭০ মিমি-তে নির্মিত ছবিতে যে রেজুলেশন পাওয়া যায় তা এখনও ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনি।
আসপেক্ট রেশিও
ফিল্ম বা ডিজিটাল যে ফরম্যাটেই নির্মান করা হোক না কেন – আসপেক্ট রেশিও (Aspect Ratio) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফ্রেমের দৈর্ঘ্যের তুলনায় প্রস্থ কতটুকু – এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম আসপেক্ট রেশিও রয়েছে। বর্তমান সময়ে ১.৮৫:১ – এই রেশিওতে বেশি নির্মান করা হয়। আমরা সিনেমাস্কোপ বলতে যা শুনি তা মূলত এই আসপেক্ট রেশিও-রই একটি রূপ। সিনেমাস্কোপে রেশিও হয় ২.৩৫:১। আর ৭০ মিমি-তে এসে এই আসপেক্ট রেশিও হয় ২.৭৬:১। এতে লাভ হয় – অনেক বড় ফ্রেম নিয়ে কাজ করা যায়। ল্যান্ডস্কেপ এর চিত্রায়নেও এই রেশিও অনেক বড় সহায়তা করে।
নির্মান
দ্য হেইটফুল এইট চলচ্চিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশই একরুমের একটি ঘরে চিত্রায়িত হয়েছে। একটি রুমে আটজন লোক লোক উপস্থিত। এদের মধ্যে একমাত্র নারীটি একজন ওয়ান্টেড – ডেড অর এলাইভ আসামী, যার মূল্য দশ হাজার ডলার। বাহিরে তুষার ঝড়। বিভিন্ন ঘটনার কারণে টারান্টিনোর বিখ্যাত ‘প্রেশার কুকার’ টেনশন তৈরী হচ্ছে এই কামরায়। এই টেনশন তৈরীতে কারিগরি দিক থেকে সাহায্য করেছে ৭০ মিমি ফিল্ম ফরম্যাট। ্আসপেক্ট রেশিও আর ডিটেল – দুটোই কামরার টেনশনকে দর্শকের মাঝে পৌছে দিতে সহায়তা করেছে। ৭০ মিমি নিয়ে অল্প কথায় ছবিসহ বোঝার জন্য একটি পোস্ট রেকমেন্ড করলাম।
৭০ মিমি বৈশিষ্ট্যের বাহিরে হেইটফুল এইট ছবির গল্পে টারান্টিনোর বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। বরাবরের মতই খুব ধীরে ধীরে সিনেমার গল্প ক্রমশ জটিলতার দিকে মোড় নেয়। সেই সাথে রয়েছে গভীর অর্থ এবং রসে পূর্ণ সংলাপ। যে গানগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোও ছবির কাহিনীর সাথে মিল রেখে প্লেস করা হয়েছে। সর্বোপরি, বাড়াবাড়ি ভায়োলেন্স।
সব মিলিয়ে
সব মিলিয়ে দ্য হেইটফুল এইট অবশ্যই একটি দুর্দান্ত এবং উপভোগ্য সিনেমা। তবে টারান্টিনোর অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর বিবেচনায় কোন অবস্থানে থাকবে সেটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হবে। আমার তালিকায় ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস এক নাম্বারে, অর্থ্যাৎ হেইটফুল এইট একে ছাড়িয়ে যেতে পারে নি। তা সত্ত্বেও – দ্য হেইটফুল এইট একটি অসাধারণ সিনেমা।
কুয়েন্টিন টারান্টিনো অনেকবারই বলেছেন তিনি সব মিলিয়ে দশটি সিনেমা বানাবেন। অর্থ্যাৎ, আর মাত্র দুইটি অসাধারণ সিনেমা পাওয়া যাবে কুয়েন্টিন টারান্টিনোর কাছ থেকে।
আপনার রিভিউ পড়া মানেই মুভি ডাউনলোড করা, যাক টরেন্ট এ খুজে দেখি ব্লু রে পাই কিনা!
ধন্যবাদ তৌফিক হাসান 🙂