শওকতের কাবাব ঘর

shawkat kabab ghar mirpurমিরপুরে ভালো খাবারের দোকান কি কি আছে সেটা জানার চেষ্টা করছি গত কয়েকদিন ধরে। আমি ভোজন রসিক নই মোটেও এবং আমার জিহবার মেমরী গোল্ডফিশের চেয়ে একটু বেশী। এক সপ্তাহ পরেই সে ভুলে যায় খাবারের টেস্ট কিরকম ছিল, ফলে একই আইটেম সপ্তাহখানেক বা তার বেশী পরে খাওয়া হলে কোনটা বেশী ভালো, সেটা বলা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তারপরেও নতুন যে কোন কিছু হালাল খাবার টেস্ট করার ব্যাপারে আমার বিস্তর আগ্রহ। এই আগ্রহ থেকে গতকাল মিরপুর দশের শওকত কাবাব ঘরের কথা জানা গেল। জানার আধাঘন্টার মধ্যে গুগল ম্যাপ ঘেটেঘুটে খুঁজে বের করে আমি কাবাব ঘরে হাজির হয়ে গেলাম, রাত তখন নয়টা।


মিরপুর বেনারসী পল্লীতে নান্নার বিরিয়ানীর একটু আগে দিয়ে বামদিকে একটা গলি – সেই গলির প্রায় শেষ মাথায় শওকত কাবাব ঘর। অন্যদিক থেকে – মিরপুর সাড়ে দশে ঢাকা ব্যাংকের যে ব্রাঞ্চ তার পাশের রাস্তা দিয়ে শেষ মাথায়। লম্বাটে হোটেল – ভেতরে পরোটা ভাজা হচ্ছে, বাহিরে কাবাব। পরিবেশনকারীরা সবাই ‘শওকত কাবাব ঘর’ লেখা সাদা জামা পড়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও শওকত কাবা ঘরের অবস্থা খুব ভালো না, পরিচ্ছন্ন তো নয়ই। হাত ধোয়ার বেসিনে পানি নেই। পাশে বিশাল দুটো ড্রাম ভর্তি পানি, সেখান থেকে লাল মগে করে পানি নিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।

পরোটার সাথে খাওয়ার জন্য আরও বাইশ পদের তালিকা ছাপানো অক্ষরে দেয়ালে টাঙ্গানো, কিন্তু আমার জন্য আছে কেবল দুই পদ – দেশী মুর্গির চাপ আর খিররি কাবাব। আমরা এখন মুর্গি খাওয়া জাতি – গ্রিল খাওয়া এমনভাবে শিখেছি যে দেশীয় মালিকানার মুর্গি ইন্ডাস্ট্রির সিংহভাগ চলে গেছে ভারত আর চায়নার হাতে। গরু ইন্ডাস্ট্রির প্রায় পুরোটাই তো ভারতীয়। ভাগ্যিস – পরোটাটা এখনো আমাদের আছে। তো, অর্ডার দিলাম এক দেশী মুর্গির চাপের, আর চাপাচাপি করে একটা খিররি কাবাবের।

মুর্গির কাবার বেশ! চমৎকার ভাজা, হাড়গুলো কুড়মুড়ে। মাংসগুলোও নরম, পরোটার টানে খুলে আসছিল। বাজারের অন্য মুর্গির কাবাবের মত নয়। অবশ্য পার্থক্য হওয়ারই কথা – এই মুর্গি আলকাতরার মত কুচকুচে কালো তেলে ডুবিয়ে ভাজা হয়েছে। গ্রীলের মুর্গি তো তেলে গা ভেজানোর সুযোগই পায় না, শিকের মধ্যে ঢুকে ঘুরতে ঘুরতে আগুনের তাপে নিজের তেলে নিজেই সিদ্ধ হয়। শওকত কাবাবের এই জিনিস সেই দিক থেকে ভালো স্বাদের।

খিররি কাবাব প্রথমবার খাচ্ছি। খিররি কি জিনিস সেটা শওকত কাবাব ঘরে আসার আগে জানাও ছিল না। খিররি হল গরুর ওলান। স্পঞ্জের মত। মাংস বলা ঠিক হবে কিনা বুঝছি না, তবে কালো কুচকুচে তেলে ডুবিয়ে ভাজার কারণে এই জিনিসও খেতে মন্দ লাগে না। অবশ্য ওয়েটার বলে গেল – এই জিনিস সবাই খেতে পারে না। কেন পারে না সেটা খেতে খেতে ভেবেছি। সম্ভবত গরুর ওলান বলে। ওলান মানে হল গাভীর দুধ। কিন্তু কসাইয়ের দোকানে তো গাভী জবাই হয় না, হয় ষাড় গরু। তারমানে কি ষাড়গরুর ওলান? মানে বলস্? ইয়াক!! এর দাম নব্বুই টাকা?? ওপস!!!

শওকত কাবাব ঘরের মুর্গির চাপ আর গরুর ওলান (অথবা বলস্) খাওয়া শেষ করে বাসায় ফিরেছি ভালোভাবেই। তবে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে গ্যাস ফর্ম করে পেট ফুলে ফেঁপে টাইট – তারপর নাক-মুখ দিয়ে বমি করে একাকার। বমির সাথে যে মাংসগুলো বের হয়ে এসেছে – ঘেটে দেখেছি – খিররি কাবাব (মানে বলস্)। আমার ঘেন্না না লাগলেও পেট সামলাতে পারে নি – মুর্গিটুকু রেখে ওলানটুকু বের করে দিয়েছে।

গুড বাই শওকত ভাই। তোমার ব্যবসার শুরুর দিন থেকে ব্যবহার করা ওই তেল না পাল্টাইলে আমি আর কোনদিন যাচ্ছি না তোমার ঘরে।

ছবি: ইন্টারনেট

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *