কিছুদিন ধরেই মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রমণকাহিনী পায়ের তলায় শর্ষে পড়ছি, সেখানেই কোন এক পাতায় ‘মান্ধাতার আমলে’ প্রবাদের প্রয়োগ পেলাম। পুরানো কিছু হলেই আমরা বলি মান্ধাতার আমলের জিনিস। হঠাৎই প্রশ্নটা মাথায় এলো – মান্ধাতাটা আসলে কে? তার শাসনামল কোন সময় ছিল?
একে জিজ্ঞেস করি ওকে জিজ্ঞেস করি – সবাই মান্ধাতার আমলের পারিভাষিক অর্থ বলতে পারেন, কিন্তু মান্ধাতা কে সে সম্পর্কে বলতে পারেন না। শেষে ওয়েবে ঘাটতে গিয়ে নাবীল অনুসূর্যের একটা লেখায় পাওয়া গেল সেই প্রশ্নের উত্তর। মান্ধাতা হলেন একজন রাজা, তার শাসনামল পৌরানিক যুগে। মান্ধাতা হলেন সূর্য বংশের রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। মান্ধাতার জন্মগ্রহণের ঘটনা বেশ অদ্ভুত। মাতৃগর্ভ নয়, পিতৃগর্ভে জন্মেছিলেন মান্ধাতা। ঘটনাটা বরং বলি।
যুবনাশ্বের কোন ছেলেপুলে নেই। অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সবই বিফল। শেষ উপায় – মুনিদের আশ্রমে গিয়ে যোগ সাধনা শুরু করা যেন একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। দীর্ঘ সে সাধনা তৃপ্ত করল মুনিদের। তারা যুবনাশ্বের জন্য এক যজ্ঞ আরম্ভ করলেন। যজ্ঞ শেষ হতে হতে মাঝরাত। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলসি ভর্তি মন্ত্রপূত পানি বেদিতে রেখে গেলেন তারা। এই কলসির পানি যদি খায় যুবনাশ্বের স্ত্রী, তবেই হবে জন্ম পুত্রসন্তানের। কিন্তু বিধিবাম। সে রাতেই তীব্র তেষ্টা পেল যুবনাশ্বের – উপায়ন্তর না দেখে নিজেই খেয়ে ফেললেন সেই কলসী থেকে এক আঁজলা পানি। সকালে মুনিরা ঘুম থেকে উঠে এই ঘটনা শুনে ঘোষনা করলেন – পানি যেহেতু যুবনাশ্বর খেয়েছে, সন্তান তার গর্ভেই জন্মাবে! অবশ্য মুনিরা নারীর গর্ভধারনের কষ্ট থেকে যুবনাশ্বরকে মুক্তি দিলেন। একশ বছর পরে জন্ম নিলেন মান্ধাতা।
বড় হয়ে মান্ধাতা একসময় রাজা হলেন। পৃথিবী বিজয়ে বের হলেন এবং যুদ্ধ করে সারা পৃথিবীই জয় করে ফেললেন মান্ধাতা। সারা পৃথিবী যিনি জয় করেছেন তিনি কি আর স্বর্গজয় বাদ রাখবেন – সুতরাং চললেন তিনি স্বর্গজয়ে। কিন্তু ইন্দ্র জানালেন – পুরো পৃথিবী জয় শেষ হয় নি। মধুর পুত্র লবনাসুর মান্ধাতার অধীনতা মেনে নেয় নি এখনো। সুতরাং মান্ধাতা ফিরলেন লবনাসুরকে হারিয়ে তবেই স্বর্গজয়ের যুদ্ধ করবেন বলে। কিন্তু ফেরা আর হয়ে উঠে নি মান্ধাতার – লবনাসুরের সাথে যুদ্ধেই নিহত হয়ে গেলেন তিনি।
বেচারা মান্ধাতা। সারা পৃথিবী জয় করেছেন – দীর্ঘকাল শাসন করেছেন কিন্তু এত কাল পরে লোকে কেবল জানে তার নাম আর তার শাসনামল, জানে না কে তিনি আর শাসনামলটা কোন সময়ে। সারা পৃথিবী জয়ের চেষ্টা বাদ দিয়ে নামের সাথে যেন কাজ এবং শাসনামলটুকুও টিকে থেকে সেই চেষ্টায় কিছু সময় ব্যয় করলে বরং ভালো হত। অবশ্য মান্ধাতার আর দোষ কি – বাপের পেটে জন্মালে এমনই তো হবে!
ব্যাপক মজা পেলাম পড়ে, তবে ইতিহাস ও জানতে পারলাম।