সোনার খনি বাংলাদেশ

রবিঠাকুরের সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে, বাংলাদেশ হয়ে গেছে সোনার খনি। এখানে ওখানে সোনা পাওয়া যাচ্ছে, তবে আদ্যিকালের বালুমাটিমিশ্রিত সোনা নয়, একেবারে প্রসেসড সোনার বিস্কুট। যার একেকটি বারের দাম কয়েক লাখ টাকা।
কোথায় পাওয়া যাচ্ছে না সোনা? গাড়িতে। টয়লেটে। জুতায়। স্যুটকেসে। মুম্বাইয়ে তো এক ভদ্রমহিলার পড়নে থাকা ছয়টি অন্তর্বাসের মধ্যেও পাওয়া গেল। এদেশে এখনো ওই খবর পাওয়া যায় নি, তবে সার্চ করলে পাওয়া যে যাবে না তার নিশ্চয়তাও দেয়া যাচ্ছে না। বিমানবন্দরে বেল্টে, বারান্দায় যত্রটত্র সোনা পাওয়া যাচ্ছে।

সোনা দিয়া বান্ধায়াছি বিমান বন্দর – ও মনরে ..

এত এত সোনা যাচ্ছে যে কোথায় সে নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে। সোনার বাম্পার ফলন হলেও, জায়গামত সোনার ঘাটতিও দেখা যাচ্ছে। বিদেশীদের মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টে যেমন কম পাওয়া গেল। ক্রেস্টে সোনা থাকার কথা ছিল ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম, সেখানে পাওয়া গেছে ২ দশমিক ৩৬৩ গ্রাম। বাকীটা? বোধহয় ওগুলোই গাড়িতে-টয়লেটে পড়ে আছে। (সৈয়দ আবুল মকসুদের এই লেখাটা পড়ে দেখা যেতে পারে)
যে সোনা ফলেছে রাস্তা-ঘাটে তা যাচ্ছে কোথায়? উত্তরটা সহজ। এই সোনা বাংলাদেশে আসছে না, যাচ্ছে ভারতে। বাংলাদেশ হল সোনার চালানের রুট। এদিক ওদিক থেকে দুয়েক বস্তা মাটিতে পড়ে যাচ্ছে আর তাই নিয়েই মাতামাতি।

ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে পাওয়া গেল –

ভারতের বিশাল স্বর্ণের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে সোনা চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য বানানো হয়েছে। যে পরিমান স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে তার সিকিভাগও চাহিদা নেই বাংলাদেশে। আর যেগুলো ধরা পড়ছে তা আইওয়াশ ছাড়া কিছুই না। কারন এরছেয়ে কয়েকগুণ সোনা নিয়মিত বিমানবন্দর দিয়ে বিনা শুল্কে প্রবেশ করাচ্ছে অসাধু কিছু কর্মকর্তা। ভারতের বিমানবন্দর সম্পুর্ণ ডিজিটাল হওয়ায় সেখানে চোরাচালান সম্ভব না হওয়ায় বাংলাদেশকে ট্রানজিট পয়েন্ট বানানো হয়েছে।

 

সোনা চোরাচালানের সমস্যাটা কি? কালেরকন্ঠের সম্পাদকীয়তে উত্তর পাওয়া যাবে – 

এই চোরাচালানের সঙ্গে ভারতের ৩০টি এবং বাংলাদেশের ৪০টি গ্রুপ জড়িত। সাধারণত সোনা চোরাচালানের অর্থ পরিশোধ করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। আবার দেশে চোরাচালান হয়ে আসা অস্ত্রের দাম মেটানো হয় চোরাচালানের সোনা দিয়ে। ফলে এর সঙ্গে অস্ত্র চোরাচালানেরও একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছে। এই চোরাচালানি গ্রুপগুলো যে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নয়, তা কে বলবে। আবার রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী যেসব ব্যক্তি এই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, তাদের পক্ষে অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য যেকোনো ধরনের অপরাধকর্মে যুক্ত হওয়া অবাস্তব কিছু নয়। ফলে দেশ দ্রুত হত্যা, গুমসহ নানা ধরনের অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ ও শৃঙ্খলার জন্যও অচিরেই তা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই এমন একটি জঘন্য অপরাধকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা না গেলে তা একসময় দেশের স্থিতিশীলতা, এমনকি সার্বভৌমত্বের ওপরও আঘাত হানতে পারে।

 
সোনার বাম্পার ফলনে চাষীর তেমন কোন সমস্যা হয় না, যা হওয়ার আলূ-চাষীর হয়। সোনার এই ফলনে আলুচাষীরা সোনা-চাষে অগ্রসর হয় কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি, আপনিও যোগ দিতে পারেন।
ছবি কৃতজ্ঞতা: বাংলানিউজ২৪ডটকম

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *