গত ফেব্রুয়ারী মাসের ঘটনা। সিলেটের এক বন্ধু তার মা’র চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এল। নাইটকোচে ঢাকায় এসে ডাক্তার দেখিয়ে ওইদিনই ফিরে যাবে – এমন পরিকল্পনা। নিরাপদে ঢাকায় ফকিরাপুল পৌঁছেছেন – ফজরের সময় এমন সংবাদ পেয়ে আবার ঘুমিয়েছি। মিনিট পনেরো বাদেই আবার ফোন – ছিনতাই হয়ে গেছে সব! আম্মার হাতে ব্যাগ ছিল, সেই ব্যাগ ধরে টান দিয়ে নিয়ে গিয়েছে একটা প্রাইভেট কার থেকে। হ্যাচকা টানে তাল সামলাতে না পেরে অসুস্থ্য আম্মা পড়ে গেছেন রিকশা থেকে, শাড়ি ছিড়ে গেছে, চামড়া ছিলে গিয়েছে, ব্যাথা পেয়েছেন কয়েক জায়গায়। সবচে বড় দুর্ঘটনা হল – চৌদ্দ হাজার টাকা ছিল ওই ব্যাগে – এখন রিকশা ভাড়া দেয়া ছাড়া আর কোন টাকাই নেই তাদের কাছে!
ওই ঘটনার মাসখানেক বাদে আরেক বন্ধু, সে ঢাকাবাসী, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ায়। সদরঘাট থেকে রিকশায় করে সে আর তার স্ত্রী ফকিরাপুল এলাকা দিয়ে বাসায় ফিরছিল। তারাও প্রাইভেটকার আক্রমনের শিকার হলেন। রিকশার পথ রোধ করে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বন্ধুর হাত থেকে ল্যাপটপের কাঁধব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেল সেই কার। বন্ধু বেশ মজা করে লিখেছে – কারণ ওই ব্যাগের ভেতর ল্যাপটপ নয়, স্বামী-স্ত্রীর কিছু কাপড়চোপড়, হাড়ি পাতিলসহ সংসারের কিছু টুকিটাকি জিনিসপত্র। কপাল ভালো, তাই বড় কোন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় নি।
আজকের বাংলামেইল২৪ এ ফকিরাপুল এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে ছুড়িকাঘাতে আহত হয়েছেন এমন দুই ব্যবসায়ীর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বলা বাহুল্য, এই ঘটনাও ভোরবেলায় ঘটেছে। ছিনতাইয়ের জন্য ভোরবেলা একটি আদর্শ সময় – রাস্তা বেশ ফাঁকা থাকে, মানুষজনও থাকে না, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজনেরও দেখা পাওয়া দুষ্কর। এই সকল ছিনতাইকারী পরিশ্রমী – সারারাত জেগে থেকে ভোরবেলায় ছিনতাই করে তারপর ঘুমাতে যায় নির্ঘাৎ। কিন্তু আমজনতার কি হবে? এরা তো ছিনতাইকারীদের মত অল্প সময়ে ও পরিশ্রমে বেশী আয় করে না। ফকিরাপুল এবং আশেপাশের এলাকায় যে ছিনতাই কার্যক্রম চলে – তা হাতে গোনা দুই তিনটি চক্রের কাজ বলেই মনে হয়, এবং, আমি নিশ্চিত ওই এলাকার পুলিশও এদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখে। কিন্তু কেন বন্ধ হয় না সে তারাই ভালো বলতে পারবে। আমি বুঝি – শুধু অর্থের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, শারীরিক ক্ষতি থেকে শুরু করে জীবনের ঝুঁকিতেও পড়তে হচ্ছে সাধারণ জনগনের। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সচেতনতার সময় পার হয়ে যায় নি।
প্রতিমাসেই দুই একবার ওই এলাকায় আমাকে ভোরবেলায় যাতায়াত করতে হয়। আমি সচেতন থাকার চেষ্টা করি, আপনিও থাকার চেষ্টা করুন, আপনার পরিচিতজনকে সতর্ক হতে উদ্বুদ্ধ করুন।