গত কয়েকদিনে দেশের সবচে বেশী যে ইস্যুতে কথা হয়েছে তা সম্ভবত – গরম এবং তাপমাত্রা। ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তুলনা হিসেবে সৌদী আরবের তাপমাত্রা এসেছে – বাংলাদেশের তাপমাত্রা কোন কোনদিন রিয়াদের তাপমাত্রাকেও ছাড়িয়েছে। অসহনীয় এই গরমের সাথে আছে তীব্র লোডশেডিং। মাঝরাতে লোডশেডিং হচ্ছে – ফলে গরমের কারণে ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটছে। এই সমস্যার সমাধানে ডে-লাইট সেভিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এখন সূর্য উঠে সবদিকে আলো হয়ে যায় সাড়ে পাঁচটার দিকে। অফিসকেন্দ্রিক ব্যস্ততা শুরু হয় আটটার পর থেকে – ততক্ষনে সূর্য তেতে উঠে। ব্যাংক সহ অন্যান্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠান যেগুলো সাড়ে ন’টা থেকে দশটার দিকে শুরু হয়, তাদেরকে পথ চলতে হয় তীব্র রোদ-গরমকে মাথায় নিয়ে। অথচ, সূর্য উঠার পর থেকে প্রায় তিনঘন্টা সময় অপচয় হয় ঘুমের মাঝে। অন্যদিকে, রাতে সাধারণভাবে শুতে যেতে বারোটা – ফলে বিদ্যুতের উপর চাপ কম পড়ছে না মোটেও। ইউরোপীয় দেশগুলোর বেশীরভাগই সূর্যের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং বিদ্যুতের সাশ্রয়ের জন্য ডে লাইট সেভিং ব্যবহার করে। শেখ হাসিনার সরকার প্রথম টার্মের প্রথম বছরেই এই ডে লাইট সেভিং চালু করেছিল এবং বেশ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল। যতটুকু জানি, এর আগে এরশাদ সরকারের সময়ও হুবহু এরকম না হলেও কাছাকাছি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল। তখন সাড়ে সাতটা থেকে সরকারী অফিস চালু করার নিয়ম করেছিলেন তিনি। এই সিদ্ধান্তে এরশাদ কি পরিমান সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন আমার জানা নেই, কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার সমালোচনা সহ্য করতে পারে নি, ফলে দ্বিতীয় বছরে আর এই পদ্ধতি অনুসরন করে নি।
ডে লাইট সেভিং পদ্ধতির বিকল্প হতে পারে সকল ধরনের অফিস, স্কুল এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এক ঘন্টা সময় বা নির্দিষ্ট সময় পরিমান এগিয়ে দেয়া। অবশ্য এই সিদ্ধান্তও সরকারের পক্ষ থেকে আসা উচিত – সেক্ষেত্রে সকলে মেনে চলার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা তৈরী হয়। সকল মানুষের কাজকর্ম যেহেতু এদেরকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই এক ঘন্টা আগে থেকে দিন শুরু হবে। তবে বিদ্যুত ব্যবহার সাশ্রয়ে এই পদ্ধতি কতটুকু কার্যকর হবে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।
বাংলাদেশের তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে – তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ডে লাইট সেভিং পদ্ধতি ব্যবহার পছন্দসাপেক্ষ নয়, একমাত্র উপায় হবে। আগে শুরু করলে লাভ বৈ ক্ষতি হবে না।