ভোঁদর দিয়ে মাছ ধরা


মাছ ধরার ছোট্ট নৌকাটায় সব মিলয়ে জেলের সংখ্যা চারজন। নৌকার উপর বাঁশের তৈরী একটি খাঁচা। খাঁচার ভেতরের চার পাঁচটে ভোঁদর। নদীর তীরের দিকে জঙ্গলমত এলাকা, নৌকাটা সেদিকেই ভিড়ল। তারপর বড় বাঁশের সাথে লাগানো বড় জালটি নদীতে বিছিয়ে দেয়া হল। জালের অন্যপ্রান্ত নৌকাতে। 

ভোদরগুলোকে ছেড়ে দেয়া হল এবার। ঝাপ দিয়ে পানিতে পড়ল কুচকুচে কালো শরীরের বিভিন্ন আকৃতির পাঁচটে ভোঁদর। তাদের পেটে পাটের রশি বাঁধা। সেই রশির অন্য প্রান্ত দুটো লম্বা বাশের আগায় বাঁধা, বাঁশ দুটো দুজন জেলের হাতে, তারা নৌকার দু’প্রান্তে দাড়িয়ে। প্রশিক্ষিত ভোঁদরগুলো ডুব দিয়ে নদীর মাছগুলোকে তাড়িয়ে জালের দিকে নিয়ে আসতে লাগল। কিছু সময় পরে জাল বাঁধা বাঁশ টেনে নৌকায় জালটি তুলতেই দেখা গেল ভেতরে নানা ধরনের মাছ, চিংড়ি, কাকঁড়া। 

ভোঁদর দিয়ে মাছ ধরার এই পদ্ধতি পুরোনো কিন্তু অপ্রচলিত পদ্ধতি। একসময় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে মাছ ধরা হলেও – প্রায় সব দেশ থেকেই হারিয়ে গিয়েছে ভোঁদর দিয়ে মাছ ধরার এই অভিনব পদ্ধতিটি। বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলে বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় এই পদ্ধতিতে এখনো মাছ ধরা হয়। তবে, দিনকে দিন এদের সংখ্যা কমছে। 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ গত প্রায় ২৫ বছর ধরে ভোঁদরের সাহায্যে মাছ ধরা বিষয়ে গবেষনা করছেন। বর্তমানে মাত্র শ-দেড়েক পরিবার ভোঁদরের সাহায্যে মাছ ধরছে বলে জানিয়েছেন তিনি। নদীতে মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন কমে যাওয়া এর অন্যতম প্রধান কারণ। পাশাপাশি – বংশপরম্পরায় জেলে পেশার প্রতি উৎসাহিত না হওয়াটাও কারণ হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করছে। 
ভোঁদরের সাহায্যে মাছ ধরার এই ছবিগুলো তুলেছেন এএফপির ফটোগ্রাফার মনিরুজ্জামান। গত কয়েকদিনের বিভিন্ন ইন্ট্যারন্যাশনাল ডেইলিতে নড়াইল থেকে গত ১১ মার্চ ২০১৪ তারিখে তোলা ছবিগুলো সহ ভোঁদরের সাহায্যে মাছ ধরার বিলুপ্তপ্রায় পদ্ধতি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে – এই স্ট্যাটাসটি সেই রিপোর্টেরই সারসংক্ষেপ।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *