শৈশবের শীতকালটা প্রায় ছুটিতেই কাটতো। বাচ্চাকালে আমরা এখনকার মত জানুয়ারীর এক তারিখেই বই পেতাম না। ডিসেম্বরে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে নতুন বই পাওয়ার পরে পুরোদমে ক্লাস শুরু হতে হতে ফেব্রুয়ারী মাস চলে আসতো – ফলে অফিসিয়ালি এক মাস উইন্টার ভ্যাকেশন থাকলেও সব মিলিয়ে দুই মাস পাওয়া যেত। শীতের এই সময়টা বছরের অন্যান্য সময় থেকে আলাদা ছিল।
শীতের সকালে সূর্য উঠতো দেরী করে, ঠিক যেমন আমরা বিছানা ছাড়তাম দেরী করে। ঘুম ভাঙ্গার পরেও লেপের নিচে লুকিয়ে থাকা আর কুয়াশার নিচে সূর্যের লুকিয়ে থাকার মধ্যে তফাৎ কই? কুয়াশার নিচ থেকে সূর্য বের না হলে অবশ্য আমাদের মাঠে যাওয়া হত না। কারণ রোদ উঠলেই মাঠের ভেজা ঘাস শুকোবে, তারপর সেখানে খেলা হবে ক্রিকেট। বেলা আরও বাড়লে এবং কোন কারণে ক্রিকেট না খেলা হলে ব্যাডমিন্টনের কোর্টে দাড়িয়াবান্ধা! দাঁড়ি কাটতে হলে মাটিতে শুয়ে পড়ার অনুমতি ছিল – কিন্তু ভেজা ঘাসে শোয়ার অনুমতি ছিল না বাসা থেকে। রোদ উঠলে একজন একজন করে বন্ধুদের ঘুম ভাঙতো, এক এক করে মাঠে অনলাইন হত। একজন অনলাইন হয়ে আরেকজনকে নক করতো, দুজনে মিলে আরেকজনকে – সবার ঘুম ভেঙে মাঠে আসতে আধাঘন্টা। তারপর খেলা। মাঝে মাঝে বড়রা ক্রিকেট খেলতে নামতো। সে সময় ক্রিকেট পিচ তৈরী হত মাঠের আড়াআড়ি – তাদের ছক্কার দৌড় বেশী! ওই দিনগুলো স্পেশাল ছিল – সকাল থেকেই কেমন উৎসব উৎসব আমেজ থাকতো।
এখনো শীতকালে সকাল হয়, ফেসবুকের মাঠে এক এক করে ভার্চুয়াল বন্ধুরা অনলাইন হয়, ক্রিমিনাল কেস খেলার জন্য বন্ধুদের আহবান জানায়।
শীতকাল পাল্টায়নি, মানুষ পাল্টে গেছে!