রকিবুল ইসলাম ভাই সিনেমাখোর গ্রুপে একটা পোস্ট দিয়েছেন – যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কেন উন্নত হচ্ছে না সেটা আলোচনার মাধ্যমে বের করা। উনি কিছু প্রশ্ন করেছেন সবার উদ্দেশ্যে, সবাই সে প্রশ্নের উত্তরও দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এই পোস্টটি মূলত আমার আগে করা অন্যদের মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে প্রশ্নের জবাব খোজার চেষ্টা করা। বেশ বড় মন্তব্য লিখেছিলাম, সংরক্ষন করে রাখার প্রয়োজন বোধ থেকে লিখছি।
রকিবুল ইসলাম ভাই প্রশ্ন রেখেছেন –
মাঝেমধ্যেই আমাদের মধ্যে বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা শুরু হলে প্রসঙ্গতই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা-নির্ভর চলচ্চিত্র, নির্মাতা, কারিগরী দিকের কথাও চলে আসে। বিগত ৫-৬ বছরে কলকাতার সিনেমা বেশ অভাবনীয় উন্নতি করেছে। তা কাহিনীর দিক দিয়েই বলেন, অভিনয় প্রসঙ্গেই বলেন, কিংবা সাউন্ডট্র্যাক/ক্যামেরার প্রসঙ্গেই বলুন না কেন। অনস্বীকার্য যে প্রতিভাবান কিছু পরিচালক তারা পেয়েছেন; সাথে দারুণ কিছু কলাকুশলী কিন্তু সেই দিক থেকে এপার বাংলায় এফডিসি কিংবা ইমপ্রেস টেলিফিল্ম নির্ভর আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের পরিবর্তন কিছুটা হলেও শ্লথ।
আমার প্রশ্নগুলো হলোঃ
১) কোয়ালিটির বিচারে একটা সময় আমরা কলকাতার সমান বা(হয়তো কিছু কিছু সময়ে এগিয়ে থাকলেও) বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবধানটা এত বেশি কেন? আমাদের অভাবটা কোথায়- ভালো পরিচালক? অভিনয় শিল্পী? চিত্রনাট্যকার? কারিগরী দক্ষতা? বিনিয়োগ?২) নানা ক্ষেত্রেই কলকাতায় আর্ট ফিল্মের বেশ ছড়াছড়ি চোখে পড়েছি। আবার ক্ষেত্র বিশেষে সাহসী প্লটে-সাহসী দৃশ্যের (যা পাশ্চাত্যে অহরহ হলেও উপমহাদেশিয় সিনেমায় কিছুটা রক্ষণশীলতা থাকার কারণে হয়তো অতটা দেখা যায়নি অতীতে)- অবতারণাও দেখে যাচ্ছে। আমাদের দেশে এমনটা এখনও আসেনি।
সাধারণ ভাবেই, আমাদের দর্শক শ্রেণির মেজরিটি কি এখনই প্রস্তুত গতানুগতিক প্লট বা চিত্রায়নের বাইরের সিনেমা নিতে?৩) বিনিয়োগ কম হবার কারণ কী? দর্শকদের হলমুখী করার উপায় কী? হলিউডের সিনেমাও পাইরেটেড হয়, তারপরও ঠিকই পয়সা উসুল করে। তাহলে কি দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী সিনেমা আসছে না? নাকী একই ধরনের প্লটের কারণে দর্শক কিছুটা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে?
আমি যা বলবো সেইটাই শেষ কথা না – তারপরও কথা থাকতে পারে, তবে একটু স্পেসিফিকভাবে প্রবলেমগুলা আইডেন্টিফাই করা দরকার। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কেন উন্নত হচ্ছে না – তার উত্তরের কিছুটা হলেও পাওয়া যাবে।
উপরে যারা যারা বলেছেন – তাদের কথার সারাংশে প্রবলেম অল্প কয়েকটা।
১. সিনেমা হলের মান-পরিবেশ ভালো না
২. ভালো প্রোডিউসার-ডিরেক্টরের অভাব। এদের সাথে ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রীর সমস্যাও যোগ করা যায়।
৩. কারিগরি ইকুইপমেন্টস এর অভাব
সমস্যা আসলে নির্দিষ্ট একটা না যে ওটার সমাধান করলেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রত্যেকটা সমস্যাই একে অন্যের সাথে মিলেমিশে আছে, ফলে একত্রে সবগুলার সমাধান প্রয়োজন।
প্রোডিউসাররা কোটি টাকার মত ইনভেস্ট করে প্রতি ছবিতে। সিনেমার ব্যবসা এমনই, যদি ধরা খায় তাহলে সেটা মিলিয়ন টাকায় গোনা লাগে। যদি ভালোভাবে ধরা খায়, তাহলে কোটি টাকাই পানিতে যেতে পারে। ফলে প্রোডিউসার ব্যবসা করার সময় চিন্তা করে এমনভাবে বিনিয়োগ করতে যেন টাকা লস গেলেও যেন বেশীরভাগ টাকা উঠে আসে। বেশীরভাগ টাকা উঠে আসার জন্য নতুন পরিচালককে দিয়ে সিনেমা বানানোর রিস্ক বেশ বড়, একই ভাবে নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিয়েও। ফলে ঘুরে ফিরে সেই পরিচালকরাই ছবি বানায় যাদেরকে আমরা একটু উচু শ্রেণীর দর্শকরা বস্তাপচা হিসেবে গণ্য করি।
এই পরিচালকদের সমস্যা আছে – এদের কেউ-ই কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়ে সিনেমা বানাতে আসে নাই (অল্প হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া, যাদের সিনেমা ব্যবসা করতে পারে না)। এটা আসলে বড় সমস্যা না, বড় সমস্যা হল – এরা বিশ্বাসও করে না প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ভালো পরিচালক-অভিনেতা তৈরী করতে পারে।
এই প্রযোজক-পরিচালকরা আবার একটা বিষয়ে খুব একাট্টা। যারা বাংলা সিনেমা নিয়ে নাক উচু মনোভাব পোষন করে তাদেরকে তারা ঠেকায়া রাখতে চায় – নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ভুগে হয়তো। ফলে, যেসকল পরিচালকের নাম আগের মন্তব্যগুলোয় পাওয়া গেছে – তারা এফডিসির লোক হতে পারে না। এই সিন্ডিকেট অবশ্যই একটা বাজে ব্যাপার – কিন্তু এখানে কিছু করার সুযোগও কম। কারণ যাদেরকে ঠেকায়ে রাখার জন্য এই সিন্ডিকেট – তারা তিন বছরে একটা ছবি বানায় – চাইলেও ইন্ডাস্ট্রিতে এরা দখল নিতে পারবে না।
কারিগরি সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলার নাই – কারিগরি দিকটা সরকারের দেখার কথা। সরকার সেটা দেখে নাই। কোন সরকারই দেখে নাই। এখন ডিজিটাল ফিল্ম নিয়া মাতামাতি, কিন্তু এটা আরও ছয় বছর আগে হতে পারতো। একটু টেকনিক্যাল বিষয় বলি – ধরেন আপনি শ্যুট করলেন ফিল্ম ফরম্যাটে – এই ফিল্মকে ভিডিওতে কনভার্ট করা হয় টেলিসিনে মেশিনের মাধ্যমে। ভিডিওতে কনভার্ট করা মানে হল আপনি কম্পিউটারে বসে ডিজিটালি এডিট করবেন, কালার কারেকশন ইত্যাদি করবেন। সব করার পর আপনাকে আবার ফিল্মে নিয়ে আসতে হবে রিভার্স টেলিসিনে নামক মেশিনের মাধ্যমে। এতে করে সুবিধা হল – আপনি ডিজিটালি নানারকম ইফেক্ট তৈরী করে সেটাকে প্রায় হুবহু ফিল্মে ট্রান্সফার করতে পারবেন।
সরকার এফডিসি-তে একটা টেলিসিনে মেশিন কিনে দিয়েছে বছর পাচেক আগে, কিন্তু রিভার্স টেলিসিনে মেশিন কিনে দেয় নি। ফলে, রিভার্স টেলিসিনে করতে হলে আপনাকে ভারতে যেতে হবে, অথবা, ডিজিটালি এডিট করা ফিল্মকে নানা কসরত করে ফিল্মে নিয়ে আসতে হবে। ডিজিটাল ফরম্যাট আসার আগে এভাবেই কাজ চলেছে এফডিসি-তে। আমি আপডেটেড না, সম্ভবত এফডিসি-তে এখনো কোন ডিজিটাল ক্যামেরা নেই।
ফলে ঘুরে ফিরে সব একজায়গাতেই আবর্তিত হচ্ছে। শর্টকাটে কাহিনী তৈরী হচ্ছে, শর্টকাটে সেই কাহিনীর উপর নির্ভর করে সিনেমা তৈরী হচ্ছে, সেই সিনেমা টাকা তুলে আনতে পারছে – তাহলে কষ্ট করে আপনি আরও বড় বাজেটে আরও ভালো গল্পের সিনেমা বানাবেন কেন?
এর বাইরে একটা ভালো দোষ আছে দর্শকদের – আমরা যার এইসব গ্রুপে আলাপ আলোচনা করি তাদের। সিনেমাহলের পরিবেশ ভালো না – সত্যি কথা – ঢাকা শহরে অন্তত দুইটা হল ভালো, চট্টগ্রাম শহরে অন্তত একটা। সাড়ে সাতশ হলের মধ্যে এই তিনটা হলে আমাদের দৃষ্টিতে ভালো নির্মাতাদের ভালো ছবিগুলো প্রদর্শিত হয়। আমরা যারা হলের পরিবেশ আর নির্মাতাদের নিয়ে কথা বলি – তারা কি এই সকল নির্মাতার সকল ছবি এই হলগুলোয় গিয়ে দেখি?
আর এইসব ভালো নির্মাতা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকে না – উনারা হচ্ছেন বিরিয়ানি-র বাবুর্চি, প্রত্যেক বেলায় খাওয়া যায় না। প্রত্যেক বেলায় খাওয়া যায় ভাত, আর তার জন্য বানিজ্যিক বাবুর্চি দরকার – কই কোন বিরিয়ানির বাবুর্চি তো বানিজ্যিক বাবুর্চি হয় না। কাজী হায়াত প্রথম ছবি বানিয়েছিলেন বিরিয়ানি – দি ফাদার, ফ্লপ করার পর বানিজ্যিক বাবুর্চি হয়ে গেছেন – সিনেমা বানিয়ে তাকেও তো টিকে থাকতে হবে, নাকি? এতবছর পরে একটা পরচালককে পাওয়া গেল – যে বিরিয়ানীর বাবুর্চী হয়েও সুগন্ধী বানিজ্যিক ভাত রেধেছে – সেটা হলেন রেদওয়ান রনি। ফলাফলও পেয়েছে হাতে হাতে।
আর যারা মনে করছেন – সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নতির জন্য সব সিনেমাকে আসতে দেয়া উচিত – তারা শুধু হল মালিকের স্বার্থ দেখেন, ইন্ডাস্ট্রির না। সব সিনেমা বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমা আসলে ইন্ডাস্ট্রির অবশ্যই উন্নতি হবে – তবে সেটা ঢাকায় না, মাদ্রাজ আর কোলকাতায়। চল্লিশ বছর অনেক বড় সময়, সেটা মানি – সময় পার হলে শিশু থেকে যৌবনে পৌছানো যায় বটে, তবে এই চল্লিশ বছরের অপুষ্টি নিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে ফাইট করা যায় না, কারণ চল্লিশ বছরের যুবক তখনো শিশু-কিশোররের যোগ্যতা নিয়াই থাকে।
বরাবরের মতই আমি দর্শকের দোষটারেই সবকিছুর উপরে রাখি… দর্শক দেখবে, ভালো হইলে পিঠ চাপড়ায়া দিয়ে উতসাহিত করবে আর খারাপ হইলে অভিযোগ করে নির্মাতাকে “হয় ভালো সিনেমা বানাইতে হবে নাইলে অন্য ক্যারিয়ার দেখি” – এই বোধটা দিতে হবে।
এইটা আর অপরিষ্কার কিছুনা যে – হালের ম্যাক্সিমাম সিন্ডিকেটেড নির্মাতা বা সিনেমা-ব্যাবসায়ীরা একটা শ্রেণীকে টার্গেট করেই যাচ্ছেতাই বানিইয়েই চলেছে – তারাও জানে তারা যদি ভালো মুভি বানায়ও দর্শক না দেখেই তাচ্ছিল্য করবে, আর গঠনমূলক সমালোচনা – এইটা অনেক দূরের কথা। কোনো জবাব্দিহিতার ভয়ও তাদের নাই তাই।
ঐখানে করা দুইটা কমেন্ট এখানে তুলে দিচ্ছি।কমেন্টগুলা গ্রুপের মানসিক অবস্থাভিত্তিতে করেছিলাম।
**ঢাকা শহরের কয়টা সিনেমাহলের নাম জানেন?
এরকম একটা পোস্ট আসছিল গতবছর…
কাউরে পাইনাই…
আমি একলা ই ছিলাম মনে হয়…অনেকগুলো সিনেমাহলের নাম আমি বলে দিয়েছিলাম…
আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম বাংলা মুভি কয়টা সিনেমাহলে গিয়ে দেখছেন?
রেজাল্ট ভয়ানক রকমের খারাপ…অনুপ কুমার ছাড়া আর তেমন কাউরে পাইনাই…
আমি এখনো চেষ্টা কর্লেই বলতে পার্বো ঢাকা এবং আশেপাশের হলের অবস্থা…কোন হলে কোন মুভি দেখেছি…টিকেটের কেমন দাম ছিল…
এরকম কয়জন লোক পাইবেন সিনেমাখোর গ্রুপে?
আমি সিরিয়াল পোস্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে পোস্ট শুরু করেছিলাম…তারপরে আর আগাইনাই…গ্রুপে কিছুটা মনোমালিন্য বা ক্যাচাল হওয়ার কারনে আগের মত সময় দেইনা…
বাদ দেন এসব কথা…আমি প্রায় সময় ই পোস্ট দিতাম অমুক মুভিটা কে কে সিনেমাহলে গিয়ে দেখেছেন?
ফলাফল?
এক দিপু নাম্বার টুতে কয়েকজনরে পাইছিলাম…এরমানে গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য ই বয়সে তরুন…যাদের জন্ম ৯০ দশকে…৮০ দশকের মেম্বার খুবই অল্প…আর এদের মধ্যেও নগন্য সঙ্খ্যার লোক সিনেমা হলে গিয়ে মুভি দেখেছেন…
তারা এই গ্রুপে বিদেশী মুভি কলিকাতার মুভি নিয়ে পোস্ট দেন…সত্যজিত মৃনাল আর ঘটকদের মুভি নিয়ে পোস্ট দেন…
কিন্তু তাদের সময়ে তো সিনেমাহলের পরিবেশ খারাপ আছিলনা…সিনেমায় স্টারের অভাব আছিলনা…মুভির মান ও তখনকার হিসেবে ফার্ষ্টক্লাস আছিল…
কিন্তু তারা তখনো সিনেমাহলে যান নাই…এখনো যান না…এবং ভবিষ্যতেও তারা সিনেমাহলে গিয়ে বাংলাদেশী মুভি দেখবেন (যেসব মুভিতে আমাদের শিল্প বাড়বে)বলে আমি মনে করিনা।
তারা তখনো তুলনা দিতেন বাইরের মুভির সাথে আমাদের মুভির…এখনো তারা দেন…এবং সাথে এযুগের পোলাপানেরাও দেন…
আমি দেইনা…দেইনাই…দিবনা…
কারন আমি আমার ঘরের খবর জানি…আমার রুচি সকাল বেলা আলুর ভর্তা ডাল দিয়ে ভাত এর…
পরাটা আর ভাজি চামচ দিয়ে খাওয়ার না…চা দিয়ে আমার সকাল শুরু হয়নাই…
আমি গ্রামের পোলা…চুতমারানি গাইল না…সিনেমাহলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখতে জানি…
অনেকেই আছেন গ্রামের পোলা…শুধু চুতমারানি গাইল ই দিতে জানেন…বাংলা সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে জানেন না!**
**আসলে এই গ্রুপেই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমাদেখার অভ্যাস আছে এমন লোকের সংখ্যা কম…
সিনেমাহলের স্বাদ এই গ্রুপের বেশীরভাগ সদস্য ই ১৪ আর ৩২ ইঞ্চির মনিটরে খুঁজে পেয়ে থাকেন…
এই কথা নিয়াও একজনের সাথে লেগে গিয়েছিল…উনি এই পোষ্টে কমেন্ট ও করেছেন!(মাইন্ড খাইয়েননা ভাই,মনে পইড়া গেল তাই কইয়া দিলাম)
আমি এই ছোট পর্দায় সিনেমা দেইখা মজা পাইনা…সত্যি কইতাছি কোন মজা পাইনা…সিনেমা নির্মান হয় সিনেমাহলের জন্য…উপরে বাবুর্চির কথা বলেছেন দারাশিকো ভাই…পাত্রের কথা বলেন নাই…মুভির স্বাদ পাইতে হইলে আপনাকে সিনেমাতেই দেখতে হইবে…কাচের প্লেটে কৈরা পান্তা ইলিশ নিশ্চয় বিক্রি হয়না(আমি দেখিনাই…কতটুকু বদলাইছে দেশ জানা নাই)সানকিতে করেই হয়…আশা করি বুঝাইতে পারছি।
অনেকেই শুক্রবারে বিকেলে বিটিভিতে মুভি দেখার কথা বলেন…আমি বছর ১২ হবার পরে বিটিভির শুক্রবারে দেখানো খুব অল্প কয়টা মুভি ই দেখেছি…
শুক্রবারে হলে নতুন মুভি আসে…সেই নতুন মুভি দেখেছি সিনেমাহলে গিয়ে…বাসায় বলেছি টিভি দেখতে ভাল্লাগেনা…বাইরে ঘুরতে যাই…গিয়েছি সিনেমা হলে…
সালমান শাএর কয়টা মুভি সিনেমাহলে গিয়ে দেখেছেন?প্রশ্ন করেছিলাম এক সালমান প্রেমিরে…উত্তর আসলো ভাই তখন ছোট আছিলাম…আব্বু আম্মুর সাথে গিয়ে একটা মুভি দেখেছি…জবাবে আমি কইলাম এঁকো মুভি তাও আবার আব্বু আম্মুর সাথে…এইসব নিয়া ই পার্ট লন?সব মুভি তো দেখছেন বিটিভি ইটিভি আর ইউটিউবে…
পয়সা খরচ তো সালমানের জন্য করেন নাই…আমরা করছি…সালমানের প্রায় সবগুলা মুভি এবং ওমর সানির সিনেমাহলে গিয়ে টিকেট কাইটা দেখেছি।
আপনের মত এত সালমান ভক্ত হইতারিনাই আমরা…
আমাদের হাতে অনেক অপশন আছিল তখন…সালমান সানির মুভির ফাইট আপনেরা দেখেন নাই…মান্না কাঞ্চনের ফাইট দেখেননাই…রুবেলের কি দিন আছিল সেসব দেখেন নাই…সিনেমাহলয়ে মুভি দেখার ই আপনের অভ্যাস নাই…আপনে যদি বাংলা সিনেমা নিয়ে এরকম বক্তিমা দেন তাইলে দেখতে ভাল দেখায়না…
এখন এই যখন একটা জাতির অবস্থা হয় তখন প্রশ্ন জাগতেই পারে বাংলা সিনেমার উন্নতি কেন হয়না!
*সিনেমাহল ভালোনা…
কয়টা সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন আমি আগে সেই লিষ্ট চাইব…তারপরে এই ব্যাপারে আপনের সাথে সমাধানের আলোচনা করিব।
*ছবির মান খুবই বাজে…
কয়টা সিনেমা সিনেমাহলে গিয়ে দেখেছেন আমি আপনের কাছে সেটা জানতে চাইব।
*নায়ক নায়িকাদের অভিনয় যাচ্ছেতাই…
আমি আপনের কাছে কয়টা নায়ক নায়িকার মুভি সিনেমাহলে গিয়ে দেখেছেন সেটা জানতে চাইব।উত্তরের পরে আপনের সাথে সেই ব্যাপারে আলোচনা করিব।
*এখন আপনে শুইন্যা শুইন্যা বাংলা সিনেমার দর্শক।শুনতে পেরেছেন বাংলাদেশে ভালো কোন পরিচালক নাই…সিনেমা ভালোনা এখন বাংলাদেশের…তারেক মাসুদ তানভির মোকাম্মেল আবু সায়িদ এরকম কয়েকজনের নাম ই আপনের ভরসা…এদের কয়েকটা মুভি ই অডিটোরিয়ামে(ভার্সিটির)আপনে দেখছেন।
আমি তখন জানতে চাইব মূলধারার ১০জন পরিচালকের নাম…তারপরে আপনের সাথে আলোচনায় যাইব।**
এইসব নিয়ে আলোচনা কৈরা দুই চারজন আবেগি হইব তারপরে আবার আগেরমত ই চলব…সিনেমাহলে গিয়ে মুভি দেইখা সব মুভি ই আপনের কাছে ফাটাফাটি লাগছে নাকি?বালছাল বহুত মুভি হইছে…সেইসব তো পরের কথা এদের অনেকের ই সিনেমাহল নিয়া এলার্জি…এর আগে বিভিন্ন পোষ্টে আমি প্রমান পেয়েছি।
এরা ইন্টারনেট ঘেটে তামাম জগতের মুভি দেইখা বিশ্লেষণ কৈরা ফালাইব…বাংলা মুভির ব্যাপারে কইব এইটা নিয়া কি কমু?এইটা দেখিনাই…কম দেখা হয়…ইন্টারনেটেই এই অবস্থা…
তাইলে সিনেমাহল এ গিয়ে দেখার কি অবস্থা হইব?আমাদের বাঙ্গালের বিদেশপ্রীতি না কমাইলে সিনেমার দর্শক বাড়বেনা।
দেশপ্রেম আপনে ক্রিকেটে দেখাইতে পারবেন…আর বাংলা সিনেমায় দেশপ্রেমের নাম নিতে পারবেননা…হাসুম না কান্দুম!
নাক সিটকানি দূর কৈরা সিনেমাহল মুখি হইতে হইব…নতুন অনেক পরিচালক আইছে আর গেছে…দর্শক নাই কি সিনেমা বানাইব?যেই দর্শক আছে তারা এইসব পরিচালকের সিনেমা দেখেনা…যাদের জন্য বানায় তারা অনলাইনের বক্তিমা ছাড়ে!
যত উন্নতি ই কৈরা দেন…তারা যখন উন্নতির ব্যাপারে কনফার্ম হইব তখন তারা সিনেমামুখি হইব…
এই দর্শক দিয়া জাতির কি ফায়দা?
সমস্যা আছে।
থাকবেই,এর থেকে বের হওয়ার চেষ্টাও তো চলতেছে।
সরকার যদি বিদেশবান্ধব হয়।চলচ্চিত্রে লাভ দেখতে না পায়(মনোযোগ দেওয়ার সময় নাই এইদিকে আসলে কারো)তাইলে তো এরকম সিন্ডিকেটের মাঝেই বেঁচে থাকবে বাংলা চলচ্চিত্র।
সেইখানে হাপিত্যেশের কোন দাম নাই।কোন মানে নাই আমার কাছে।
ধন্যবাদ!
লোকজন যখন সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা শুরু করবে, তখন সিনেমার মানও আস্তে আস্তে উপরে যাবে। প্রযোজকরা যখন দেখবে তারা ছবি বানালেই সেটি ১০০ হলে যাচ্ছে, প্রথম সপ্তাহেই তাদের বিনিয়োগ উঠে আসছে তখন ভাল ছবিতে বিনিয়োগ হবে, নতুন মুখ আসবে চলচিত্র শিল্প এগিয়ে যাবে। একবার এই ধারা শুরু হলে সেটি সহজে থামবে না।
সমস্যা হল সেটি শুরু হবে কিভাবে? হলের পরিবেশ ভাল না হওয়াতে মানুষজন হলে যায় না। আর মানুষজন না যাওয়াতে হলের মালিক পরিবেশ ভাল করতে খরচ করতে চায় না। এই দুয়ের জটিল সমীকরনে পড়ে আটকে আছে চলচিত্র শিল্প।
তবে আশার কথা হল, ইদানিং একটু সুখবর আসছে। ইমপ্রেসের টিভিমুভির পরে এখন জাজের ডিজিটালের হুযোগে কিছূ কিছু মুভি ৫০ হলে খুব কমখরচে যাচ্ছে। আগে যেখানে প্রতি প্রিন্টে ৭০ হাজার খরচ হত এখন সেটি ২ হাজারেই করা যাচ্ছে। ৫০ প্রিন্ট করতে এখন আর ৩০ লাখ লাগছে না। তাই কোটি টাকা বাজেটের মুভি ৫০ হলে চললে, সাথে মিউজিক এলবাম বেচে টাকাটা লাভসহ উঠে আসার ভাল সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। তাই ইদানিং প্রযোজকরা সাহস পাচ্ছেন ছবিতে টাকা ঢালতে। রুপালী পর্দার ঝলকানি নতুন প্রযোজকদেরও কাছে টানছে। টিভি নাটক করে হাতপাকানো (সেই হাত যত অদক্ষই হোক বা দক্ষ) ডিরেক্টররা এখন মোটামোটি চেষ্টা করলে প্রযোজক পাচ্ছেন। রেদওয়ান রনি, শাহীন কবির টুটুল, অনিমেষ আইচ, মুস্তফা কামাল রাজ এরা প্রযোজক পেয়েই যাচ্ছেন। বিদেশ থেকে আসা স্বপন আহমেদ পাচ্ছেন। জাজের থেকে পুরনো ডিরেক্টররা পাচ্ছেন। ডিজিটালের কারনে পর্দায় ঝকঝকে ছবি পাওয়া যাচ্ছে। যদিও কাহিনী ও নির্মানের কারনে এখনও ছবিগুলো হাস্যকর থেকে যাচ্ছে, তবুও মানুষের নজর কাড়ছে ছবিগুলো। সাথে ষ্টার সিনেপ্লেক্সের এসিওয়ালা মাল্টিস্ক্রীনের ব্যবসার কারনে অনেক ব্যবসায়ী এমন এসিহল করার চিন্তা করতে সাহস পাচ্ছেন এখন। অন্তত এসির বাতাসে বসে অন্ধকারে ছবি দেখার জন্যে হলেও লোক আসবে। আমার ধারনা আগামী ৪/৫ বছরে দেশের অনেক শহরেই হলগুলো নতুন পরিবেশ পাবে। এবং সেই পরিবেশ এলে অনেকেই হলে ছবি দেখতে যাবার অভ্যাস তৈরি করবে। আগে যেখানে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবার সবাই মিলে দেখতে যেত, হয়ত সহসাই তেমনটা হবে না। কিন্তু নতুন প্রজন্মের ছেলেপুলেরা যাবে। কাপলরা ডেটিং করার সুত্রে যাবে।
এখানে মানুষকে দায়িত্ববোধে উদ্ভুদ্ব হয়ে সিনেমা দেখতে বলতে যাবার কিছূ নেই। কেউ কোনদিন দেশের সিনেমাশিল্পের উন্নতি করার জন্যে হলে ছবি দেখতে যায় না। পৃথিবীর কোথাও না। আমি নিজেও কখনও হলে এই জন্যে ছবি দেখতে যাব না যে তাতে করে আমার দেশ উপকৃত হবে। আমি ছবি দেখতে যাব নিজের জন্যে। এক সন্ধায় হলে একটা মুভি আবার সন্ধাটিকে রৃপালী করে দেবে, মায়ারী করে দেবে, মুভিটা চমতকার পরিবেশে উপভোগ করব এইসব ভেবে আমি হলে যাব। বিদেশে বসে আমি হলে গিয়ে মুভি দেখি এই কারনেই, দেশ উদ্ধারের কোন চিন্তা নিয়ে না। তাই দেশের মানুষ কেন দেখছে না, কোন দায়িত্ববোধ নাই, টিভিতে দেখে নিচ্ছে বা কম্পিউটারে এসব অভিযোগ খুবই হাস্যকর এবং শিশুতোষ। প্রডাক্টের আবেদন হলে লোকজন হলে যাবেই। নিজেদের স্বার্থেই যাবে। হলে গিয়ে মুভি দেখলে যে মজা। হলের পরিবেশ, বড়পর্দা, সারাউন্ড সাউন্ড মানুষের মনোজগত নিয়ে যে খেলাটা খেলে তা ঘরে বসে প্রজেক্টরে বড় পর্দায় হেডফোন কানে নিয়ে দেখলেও হয় না।
এবার আসা যাক চলচিত্রের মানে। দর্শক থাকলে, নিয়মিত লোকজন ছবি বানালেই কেবল মান ভাল হবে। কলকাতার ছবির উদাহরন টেনে আনাটা এদেশীয় ডিরেক্টরদের প্রতি অণ্যায়। কেননা কলকাতার ডিরেক্টরদের সুযোগ ছিল তারা তামিল বা বলিউডি উন্নত প্রযুক্তির সেটে গিয়ে তাদের কর্মকৌশল কাছ থেকে দেখতে পেরেছে। এদেশীয়দের সেই সুযোগটা নেই। সেই কারনে কলকাতা এগিয়েছে তাড়াতাড়ি। বাংলাদেশ এগুবে তারচেয়ে একটু আস্তে। আজকে যারা তাদের জীবনের প্রথম ছবি বানাল তারা কালকে একটু ভাল বানাবে। কিন্তু হয়ত তারা খুব ভাল কিছূ করতে পারবে না। যেহেতু এটুকুতেই তাদের কাজ চলে সেহেতু তাদের নিজেদের ভেতর থেকে চাহিদা আসবে না ভাল করার। কিন্তু তখন নতুন যারা আসতে চাইবে তারা ভাল কিছু করে আসবে। এটা একটা চিরন্তন প্রসেস। কোন কিছুই একজায়গায় থাকে না, বদলায়, উন্নতি হয়।