আমাদের মা-খালা-বোনরা বাসায় হিন্দী সিরিয়াল দেখে দেখে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বাচ্চারা ডোমেরন দেখে দেখে বাংলা ভুলে হিন্দী বলে যাচ্ছে – এই অভিযোগ, ইনক্লুডিং মি, খুব কম লোকের না। হিন্দি সিরিয়াল দেখার ব্যবস্থা বন্ধ করা হোক – এই দাবী এখনো সফল না হলেও বাচ্চাদের জন্য ডোমেরন বন্ধ করা গেছে – আমরা অর্ধেক আনন্দিত হয়েছি, পুরোটা হতে সিরিয়ালগুলোও বন্ধের ব্যবস্থা করা দরকার।
বাচ্চারা ডোমেরন দেখে প্রভাবিত হচ্ছে, মা-খালা-বোনেরা সিরিয়াল দেখে, আমরা যারা এই অভিযোগ করছি তারা কি প্রভাবপ্রুভ কোন শিল্ড গায়ে লাগিয়ে রেখেছি? আমাকে ডোমেরন প্রভাবিত করবে না, কারণ আমি ডোমেরনের দর্শক না। আমার মা-খালা-বোনও ডোমেরন দ্বারা প্রভাবিত হয় না, কারণ তারাও এর দর্শক না। তামিল-তেলেগু-হিন্দী-কোলকাতার যে ছবিগুলো আমি দেখি সেগুলা আবার বাচ্চা বা মা-খালাকে প্রভাবিত করে না, কারণ তারাও এর দর্শক না, দর্শক হলাম আমরা, যারা দেখছি। কোন প্রভাবই কি নেই?
বছর কয়েক আগে আমার ছোট ভাই বলেছিল – ভারতীয় দোস্তানা/দস্তানা নামের মুভিটা সমকামিতাকে ডিসেনসিটাইজ করতে সবচে বেশী সাহায্য করেছে, বাংলা চলচ্চিত্রে ঢুকে গেছে আইটেম সং নামে জঘন্য এক বিষয়, সামনে আসবে কিসিং এবং বেডসিন। গত কয়েকমাসে কোন দুটো চলচ্চিত্র আমি আপনি সবচে বেশীবার নিউজ-ফিডে দেখেছি? ‘আশিকি ২’ এবং ‘বোঝেনা সে বোঝে না’। বিদ্রুপ করার জন্য হলেও আমি এই সিনেমাগুলোর নাম নিচ্ছি (আমি নিজেও নিলাম এইমাত্র) – মার্কেটিং এর ছাত্ররা বুঝবেন – লাভটা কিন্তু আদতে সেই ভারতের-ই হচ্ছে।
ডোমেরনের বিকল্প দরকার, সিরিয়ালের বিকল্প দরকার, এবং, তামিল-তেলেগু-হিন্দী-বাংলা ছবির বিকল্প দরকার – এর বাইরে আর কোন সমাধান নেই। কদিন আগে ‘মুর্গী কেন মিউট্যান্ট’ নামে আমাদের ছেলেদের বানানো একটা অ্যানিমেশন ফিল্ম দেখেছিলাম – অসাধারণ। অল্প কটা ছেলে মিলে কদিন আগে রিভ্যলুশনারী একটা কাজ করে ফেলেছে – DHAKA Comics নামে একটা প্রকাশনী খুলে কার্টুন এঁকে বই বের করা শুরু করেছে।
এই ছেলেগুলোকে ডেকে এনে, ঘরে বসিয়ে, খাইয়ে দাইয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে, পকেটে টাকা গুজে দিয়ে অনুরোধ করুন – একশটা ডোমেরন এরাই বানিয়ে দেবে। এক হাজারটা ছেলে-মেয়েকে বাছাই করে ভালো গল্প কিভাবে বলতে হয় শিখিয়ে দিন – আগামী দশ বছরে এরা আপনাকে ত্রিশ হাজার গল্পের নাটক-সিরিয়াল উপহার দেবে। একটি শিল্পের জন্য মাত্র ৫৮/৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সেই টাকা ব্যবহারের অভাবে ফেরত যাওয়অর ব্যব্স্থা করে বছরে ১৮-২০ বার দিল্লী-কোলকাতা গেলে – এই দেশের চলচ্চিত্র কোনদিনই ‘বাংলাদেশী’ চলচ্চিত্র হবে না – বাংলাদেশে নির্মিত ‘ভারতীয়’ চলচ্চিত্র হবে।
আমি-আপনি কি করতে পারি সেটা ভেবে নিয়ে কাজ শুরু করার সময় এখনো পেরিয়ে যায় নি বোধহয় – কি বলেন?