মেমরেবল কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স

এয়ারকন্ডিশনড বাসের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা। গরম আর ধুলাবালি থেকে বেঁচে থেকে ভ্রমণের জন্য এসি বাসে উঠে, তারপর ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য ব্ল্যাঙ্কেট (কম্বল না কিন্তু) গায়ে দেয়!

আমি দরিদ্র মানুষ। এসি বাসে কয়বার চড়েছি সেটা এক হাতের আঙ্গুলেই গুনে ফেলা সম্ভব। প্রথমবার চড়েছিলাম ছোটমামার কল্যাণে। আমাদের তিন ভাই এবং আম্মাকে এসি বাসে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন তিনি। বাসের নাম সৌদিয়া। সেই সময়ে ঢাকা চট্টগ্রামের বাস ভাড়া একশ-একশ পঁচিশ টাকা, আর এসি বাসের ভাড়া আড়াইশ। বড় আজব সেই বাস। প্রত্যেক যাত্রীর জন্য একটা করে হেডফোন (আমরা বলতাম ওয়াকম্যান), বাসের হাতলে চারটা ছিদ্রের যে কোনটিতে ঢোকালেই গান শোনা যায়। চার ছিদ্রে চার রকমের গান, দুটোয় বাংলা।

বাসের সুপারভাইজার ভদ্রলোক সুদর্শন, স্মার্ট (ওইসময়ে আমার দৃষ্টিতে)। বাস চলা শুরু করতেই তিনি কর্ডলেস মাইক্রোফোন নিয়ে আমাদেরকে শুভেচ্ছা জানালেন, তার নাম বললেন, কি করলে কি করতে হবে সেইসব বললেন, আরও কি কি যেন – সব মনে নেই। মনে আছে, মাঝ রাস্তায় সৌদিয়া বাস দারুন এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে থামলো, সুপারভাইজার ভদ্রলোক আমাদের সবাইকে নিয়ে দোতলায় গেলেন। সৌদিয়া বাসের যাত্রীদের জন্য সেখানে স্পেশাল নাস্তা। সব মিলিয়ে দু-তিনটি আইটেম ছিল, এতদিন পরে শুধু স্যান্ডউইচের কথা মনে আছে। আর মনে আছে কাটাচামচ-ছুড়ির কথা। কেটেকুটে খাওয়ার ব্যবস্থা!

নাস্তার ব্রেক শেষে গাড়ি চলা শুরু করার একটু পর সেই সুপারভাইজার ভদ্রলোক বসে বসে একটা প্লাস্টিকের কৌটার মধ্যে যাত্রীদের টিকিটের যে অংশটা ছিড়ে নিয়েছিলেন সেটা ভাজ করে ফেলতে লাগলেন। তারপর, আম্মাকে বলে আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন সামনে। র‌্যাফল ড্র হবে, বাসের সবচে কনিষ্ঠ যাত্রী হিসেবে কৌটার ভেতর থেকে একটা কাগজ তুলতে হল। মন্দ কপাল, আমাদের টিকিটের ছেড়া অংশ তুলতে পারিনি, তুলেছি সামনের সিটের একজনের। সেই ভদ্রলোককে র‌্যাপিং কাগজে মোড়া একটি মগ/বাটি দেয়া হল।

প্রায় বিশ বছর আগের ঘটনা। এর পরে আর যতবার এসি বাসে ভ্রমণ করেছি – কখনোই সেই এক্সপেরিয়েন্স পাইনি। বয়স একটা কারণ হতে পারে। তবে অভিজ্ঞতার মধ্যেও পার্থক্য আছে। একবার গ্রীনলাইনের নাইট কোচে মশার কামড় থেকে বাচার জন্য যাত্রীরা চেচাঁমেচি শুরু করলে যাত্রা শুরুর ঘন্টাখানেক পর নারায়নগঞ্জের দিকে বাস থামিয়ে মসকিউটো কিলার স্প্রে করা হয়েছিল। একই গাড়িত সকলকে দেয়ার মত ব্ল্যাঙ্কেট ছিল না, ফলে লাগেজ থেকে কাপড় বের করে গায়ে জড়াতে হয়েছিল কিছু যাত্রীকে।

আজকের সাড়ে দশঘন্টার যাত্রাপথে পুরানো এইসব কথাই ঘুরে ফিরে মনে পড়ছিল। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে আসা গেল – এক্সপেরিয়েন্স ম্যাটার্স। যদি ভালো করতে চান, টার্গেট কাস্টমারকে মেমরেবল এক্সপেরিয়েন্সের সুযোগ করে দিন।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *