নক নক। নক নক নক। নক নক। স্বর্গের দরজায় খুব দ্রুত নক করছিল কেউ।
স্বর্গের প্রহরী দরজায় একটা ছোট খুপরী জানালা আছে, সেটা খুলে বাহিরের দিকে তাকাল। একদল নারী-পুরুষ দাড়িয়ে।’আসসালামু আলাইকুম’ – চোখে প্রশ্নের চিহ্ন একেঁ বলল প্রহরী।
‘ঢুকতে দাও’- ডান দিক থেকে মেয়েটা বলল। প্রহরী তার দিকে তাকাল। ধূলোয় একাকার ছোট্ট একটি মুখ। মাথাভর্তি চুল। বাম হাত দিয়ে কপালের এলো চুলের গোছাটাকে পেছনে পাঠিয়ে দিল সে। ধূলোয় সাদা হয়ে যাওয়া হাতে লাল মেহেদীর নকশা। কদিন আগে বিয়ে হয়েছে মেয়েটির?
‘আমরা এসে গেছি!’ এবারে বলল একটি যুবক ছেলে – সে পরম মমতায় আগলে রেখেছে এক নারীকে। নারীটির মুখ দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু সে যে তার নির্ভরতার জায়গা পেয়ে গেছে সেটা স্পষ্ট।
‘এখন কারও আসার কথা না’ – প্রহরী জবাব দিল।
‘তুমি জানো না, প্রহরী! আমাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে’ – সামনের দিকে দাড়ানো একটা মেয়ে বলল। প্রহরী আপাদমস্তক দেখল মেয়েটিকে – মেয়েটির খালি পা, এক পায়ে নূপুর। অন্য পায়ে নূপুর পড়ে নি কেন সে?
‘তালিকায় তোমাদের সম্পর্কে বলা নেই’ – প্রহরী মেয়েটাকে বলল।
‘আরেকবার দেখে নাও’ – কথাটা ভীড়ের মাঝ থেকে কে বলল প্রহরী দেখতে পারল না। সে খুপরী জানালাটা বন্ধ করে দিল। সাথে সাথেই নক শুরু হল। প্রহরী জানালা খুলে উকি দিল।
‘একটা কলম হবে? আব্বা-আম্মাকে বলে আসতে পারি নি। ভাইটাকেও বলতে হবে যেন আব্বা-আম্মার দিকে খেয়াল রাখে। আমার কাছে কাগজ আছে।’ – হাত তুলে দেখালো মেয়েটি। প্রহরী তার হাতের স্বর্গের কলমটি বাড়িয়ে দিল, মেয়েটা সেই কলম নিয়ে লিখতে বসে গেল।
প্রহরী জানালাটা বন্ধ করে দিল আবার। তার সামনে রাখা তালিকাটায় নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। সবগুলো নাম যুক্ত হয়ে গেলেই স্বর্গের দরজা খুলে দেয়া হবে। কিন্তু দরজায় দাড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর বড় তাড়াহুড়া। ডাক পেয়েই তারা ছুটে এসেছে। তাদের পায়ের জুতো হারিয়ে গেছে, তাদের শরীরে, পোষাকে, মুখে ধুলোবালি – তাদের চোখে প্রশান্তি, তৃপ্তি। এই ধূলোমাখা শরীরে ধুলোমাখা পোষাক থাকবে না, তাদের পড়ানো হবে সুন্দরতম পোষাক, তাদের জন্য থাকবে অফুরন্ত সুখ-শান্তির ব্যবস্থা। কিন্তু দরজার বাহিরের মানুষগুলো অপেক্ষা করতে পারছে না যেন – তারা দরজায় করাঘাত করেই যাচ্ছে।
নক নক। নক নক নক। নক নক নক। নক নক। নক নক।