তথ্যটা স্তব্ধ করে দেয়ার মতই বিস্ময়কর।
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া যার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৩৭ মিলিয়ন, সেখানে প্রতিবছর প্রায় ২ মিলিয়ন বা ২০ লক্ষ মুসলমান তাদের ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করছে। সে হিসেবে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন মুসলিম খ্রীষ্টান ধর্মে রূপান্তরিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর মাধ্যমে সচেতনতা তৈরীর উদ্দেশ্যে এমন তথ্যই প্রচার করছে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক দাওয়াহ সংগঠন – মার্সি মিশন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোতে মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী ও ইসলাম পালনের জন্য বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ ও প্রনোদনামূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এই প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে মার্সি মিশনের একটি অঙ্গসংগঠন আল কাউসার ইন্সটিটিউট বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে দা’য়ী ভূমিকা পালন করছে।
মার্সি মিশনের উদ্যোগ
মার্সি মিশন সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার এই ধর্ম ত্যাগের প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে একটি কর্মসূচী গ্রহন করেছে যার নাম ‘সেভ মরিয়াম’। মরিয়াম নামের মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা নারীসমাজ নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে নির্দিষ্ট করা হয় যারা ধর্মান্তর ঝুকির মধ্যে আছে। ‘সেভ মরিয়াম’ ক্যাম্পেইনটি প্রচারের উদ্দেশ্যে তারা একটি ভিডিও তৈরী করে ইউটিউব সহ বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে সরবরাহ করে।
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, বর্তমানে যে হারে ধর্মান্তর প্রক্রিয়া চলছে তা বজায় থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচে বড় মুসলিম দেশ বিশ্বের সবচে বড় খ্রীষ্টান দেশে পরিণত হবে। পাশাপাশি কিভাবে একজন মুসলিম বিভিন্ন উপায়ে অসচেতনভাবে খ্রীষ্টধর্মের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে তাও তুলে ধরা হয়েছে ভিডিও-তে।
প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত দেশ ইন্দোনেশিয়ায় একটা বড় অংশ জনগন দারিদ্র্যসীমায় বসবাস করছে এবং মূলত তারাই খ্রীষ্টান মিশনারীদের প্রচেষ্টায় ধর্ম ত্যাগ করছে। প্রকৃতপক্ষেই বছরে ২ মিলিয়ন বা প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন মুসলিমের ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটছে কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সেভ মরিয়াম ক্যাম্পেইনের পক্ষ থেকে একটি জবাব দেয়া হয়েছে। এই সংখ্যাটি যত কম হবে ততই সুখকর কিন্তু বছরে যদি ১০ জন মুসলমানও ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে তবে সেটা অন্যান্য মুসলমানদের জন্য উদ্বেগজনক হওয়া উচিত কারণ এই ১০ জনই বেড়ে গিয়ে কোন একসময় ২ মিলিয়নে দাড়াতে পারে।
ধর্ম ত্যাগ নিয়ে আমাদের করণীয়
ইন্দোনেশিয়ার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করলে এই চিত্রের ভয়াবহতা খুবই কম, তবে একদমই আশংকামুক্ত নয়। ইসলাম ধর্ম ত্যাগের পেছনে যে কারণগুলো ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকা পালন করছে সেই একই কারণগুলো এখানেও বর্তমান। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ভুল ধারনা, ইসলাম ধর্ম পালনে উদাসীনতা, বিভিন্ন অনৈতিক ও অসৎ পন্থা যেমন মদ, সুদ, জুয়া, ব্যাভিচার, নগ্নতা ইত্যাদির বিপক্ষে ইসলামের শক্ত অবস্থান প্রভৃতি এর অন্যতম কারণ।
ধর্ম পালন সম্পর্কে উদাসীনতা একসময়ে ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞানতা ও ভুল ধারনার জন্ম দেয়, ফলে নতুনভাবে উপস্থাপিত যে কোন ধর্মই তখন সঠিক বলে ভ্রান্ত ধারণা তৈরী হয়। ধর্মান্তর ও ধর্মীয় বিকৃতির ঘটনাগুলো বিশ্লেষন করলে এই একটি কারণই পাওয়া যায়। ধর্মীয় বিধিনিষেধ পালন থেকে শুরু করে ধর্মহীনতা এবং ভ্রান্ত ধর্মে বিশ্বাসের পর্যায়গুলো খুব অল্প সময়ে ঘটে না এবং জেনারেশন থেকে জেনারশনে পরিবর্তিত হয়। ফলে বর্তমান জেনারেশন যদি নিজেরা ধর্ম পালনে ব্যস্ত থেকে পরবর্তী জেনারেশনকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারে, তবে পরবর্তী জেনারেশন ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন হয় এবং তারও পরের জেনারেশন নতুন করে কোন ধর্মের প্রতি (সে ধর্ম ইসলামও হতে পারে) আকৃষ্ট হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র অনেক ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় প্রজন্মের অন্তর্ভূক্ত যেখানে ইসলাম ধর্মের প্রতি উদাসীনতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং ইসলাম ধর্ম নিছক আচারসর্বস্ব ধর্ম হিসেবে পালিত হচ্ছে। নি:সন্দেহে এই চিত্র উদ্বেগজনক এবং সময় থাকতে প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরী করতে না পারলে ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম ত্যাগের চিত্র বাংলাদেশেও ঘটবে সে নি:সন্দেহ।
আপনি যদি একজন মুসলমান হন এবং উপরে বর্নিত চিত্র আপনার মধ্যে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ তৈরী করে তবে আপনার জন্য করণীয় কাজগুলো নিম্নরূপ:
- ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়ুন, শুনুন এবং জানুন। কোন ভুল ধারনা যেন আপনার মধ্যে স্থান না পায় এবং আপনার মাধ্যমে প্রচার না হয়।
- নিজে যতটুকু জেনেছেন, তার সবটাই মানার চেষ্টা করুন এবং অন্তত আরেকজনকে এই জানা এবং মানার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করুন। আজ থেকে আপনি একজন দা’য়ী হয়ে যান।
- ইসলাম ধর্ম ব্যক্তিগত পর্যায়ে পালন করার জন্য নয়, এর সামষ্টিক ভূমিকা অনেক বেশী। সুতরাং, ইসলামের বিধানগুলো পালনের ক্ষেত্রে একাকী নয়, সামষ্টিকভাবে পালনের চেষ্টা করুন।
- আপনার আশেপাশের তরুণ প্রজন্মের দিকে লক্ষ্য রাখুন, ধর্ম ত্যাগ এর ঝুঁকিতে থাকলে যত্ন নিন। এই প্রজন্মটি ইসলামের প্রতি বিশ্বস্ত হলে তার পরের প্রজন্মের দায়িত্ব তারাই গ্রহণ করবে।
মুসলমান পরিচিত হোক কাজের মাধ্যমে, নামের মাধ্যমে নয়।