পথচলার গল্প

স্ট্যাটাস:

কেবল মুঠোয় বন্দী কফির একলা কাপ,
ডিপ্রেসনের বাংলা জানি ‘অনেক মন খারাপ’!

 
: ডিপ্রেসন?
: হুম। 🙁
: ক্যান?
: জানি না।
: ঘুমান না কেন?
: ঘুম আসে না যে।
: কারণ কি?
: জানি না।
: সুখের অসুখ?
: একদম না। মাঝে মাঝে এরকম হয়।
: ইদানিং বেশী হচ্ছে …
: তা ঠিক।

: একটা টোটকা দিই ।
: দিন।
: হেটে আসুন
: হা হা হা হা। অ্যাসিডিটির সমস্যা না কিন্তু।
: পিচঢালা রাস্তায়।
: রাত কত হয়েছে খেয়াল আছে?
: খালি পায়ে।
: হিমু?
: না।
: অবশ্যই।
: আপনি আপনিই, আপনি হিমু হবেন কেন?
: :/

: শেষ কবে হেটেছেন পিচঢালা রাস্তায়?
: মনে নাই?
: খালি পায়ে বাসার বাইরে?
: অনেক আগে। গ্রামের বাড়িতে।
: গুড।
: ছাই। কাদা পাড়িয়ে যেতে হয়েছিল।
: হা হা হা হা
: 🙁

: পিচ ঢালা রাস্তায় হাটার অভিজ্ঞতা অন্যরকম।
: আপনি হেটেছেন কবে লাস্ট?
: গত মাসে। শ্রীমঙ্গলের রাস্তায়।
: হিংসা।
: চলে আসেন, আপনাকে খালি পায়ে পিচ রাস্তায় হাটা শিখিয়ে দিই।
: মাথা খারাপ। দেড়টা বাজে।
: জেগেই তো আছেন।
: সম্ভব না। এই স্ক্রিনে বসে থাকা ছাড়া হাটাহাটির সুযোগ নেই।
: ওকে। সেভাবেই না হয় শুরু করলাম।
: ভার্চুয়াল হাটাহাটি?
: হুম। রুমের বাতিটা নিভিয়ে দিন।
: পাগলামি।
: কোথায় হাটবেন?
: ভার্চুয়াল হাটাহাটি আবার কি?
: লালমাটিয়ায় না বাসা?
: হ্যা।
: আড়ং এর সামনে চলে আসুন। কতক্ষন লাগবে?
: হা হা হা।
: রেডি হয়ে নিন।
: কিরকম?
: হাটতে বেরোচ্ছেন, রেডি হবেন না?
: স্যান্ডেল কি রেখে আসবো? নাকি হাতে নিয়ে হাটবো?
: রেখে আসুন।
: কি পড়বো?
: শাড়ি।
: আয়রন করা নেই।
: আপনার যা ইচ্ছা।
: লাল কামিজ, সাদা হিজাব?
: এই রাতে লাল কেন?
: তবে?
: যা ইচ্ছে।
: সাদা কামিস, নীল ওড়না।
: হিজাব বাদ?
: ওড়নাই হিজাব।
: গুড। ৫ মিনিটের মধ্যে আসছি। থাকবেন।
: আচ্ছা 🙂

: আছেন?
: …
: হ্যালো?
: …
: আপনি সত্যি সত্যি চলে আসছেন নাকি? চ্যাটিং চলছে কিন্তু, ভার্চূয়ালি হাটার কথা আমাদের, রিয়েল ওয়ার্ল্ডে না… আছেন?
: ভুলে যান ও কথা।
: কি ব্যাপার রিপ্লাই দিচ্ছেন না কেন? কি ভুলে যাবো?
: ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড। আপনি এখন আড়ঙ এর সামনে।
: হা হা হা

: স্যান্ডেল পড়ে এসেছেন কেন? আশ্চর্য।
: বাসা থেকে খালি পায়ে বের হবো নাকি? পানি জমে আছে, গোটা দশেক ইটের উপর পা দিয়ে আসতে হয়।
: তো?
: শুরুতেই যদি পায়ে হাটার ব্যাপারে বিতৃষ্ণা চলে আসে তো কেমনে হবে? কিন্তু আপনার হাতে এটা কি?
: কই?
: ফুল মনে হল!
: ওহ ফুলই তো। আপনার জন্য।
: থ্যাঙ্কু। কেমনে হল?ম্যাজিক?
: উহু। আপনার আর আমার সম্মিলিত ইচ্ছেশক্তির ফল।
: ভাব্। আসুন হাটি।
: স্যান্ডেল?
: এখানে রেখে যাচ্ছি, ফেরার সময় লাগবে।

: পিচ রাস্তায় খালি পায়ে হাটার সবচে বড় সমস্যা জানেন?
: কি?
: পায়ের নিচে ছ্যাপ পড়বে।
: ইয়াক।
: এটা আমার বন্ধু ডাক্তার ইমরানের থিওরী। মসজিদ থেকে স্যান্ডেল চুরি হওয়ার পরে এই থিওরী দিয়েছে সে।
: হা হা হা
: তার মতে, এমনিতে স্যান্ডেল ছ্যাপে পরে না, কিন্তু খালি পায়ে হাটলে একটু পর পরই ছ্যাপ-এ পা পড়বে।
: খালি পায়ে হাটার উৎসাহে এখন বাধা দিচ্ছেন- এইটা কিন্তু ঠিক না।

: সংসদ ভবনে ঢুকেছেন কখনো?
: না।
: বসেছেন ফুটপাতে?
: না।
: চলুন বসি।
: আজ নয়, আজ শুধু হাটবো। আরেকদিন।

: কেমন লাগছে?
: শৈশব শৈশব অনুভূতি।
: আকাশে চাদ নেই আজ, যেদিন চাদ থাকবে, বাতাস হবে সেদিন আরেকটা টোটকা দেব।
: আজ নয় কেন?
: আজ চাদ নেই তাই।
: তাই বলে জানবো না? আরেকদিন যদি আমার হাটতে ইচ্ছে হয়?
: সেদিন বলে দেবো।
: সেদিন তো আপনার সাথে নাও হাটতে পারি।
: হাটবেন।
: কেন?
: আমি সাথে না থাকলে তো আপনি হাটার আনন্দ পাবেন না।
: বোগাস।
: একদম নয়। পিচ রাস্তার সাথে মিশে আছি আমি।
: ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছেন?
: হু।
: কেন করছেন?
: পিচ রাস্তায় হাটার জন্য আপনি আমাকে চান, তাই।
: মিথ্যে কথা।
: সত্যিটা কি?
: জানি না।
: আমি জানি।
: কি?
: আমি আপনার সাথে হাটতে চাই।
: আমরা কি হাটছি না?
: আরও হাটতে চাই – এখানে, ওখানে, আজ কাল পরশু।
: … …
:কিছু বলবেন না?
: আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। আমি এখন যাই।

===============================
পাগড়ি শেরওয়ানী পড়া ছেলেটা স্যান্ডেল খুলে স্টেজে বসা মাত্রই কতগুলো কিশোর কিশোরী স্যান্ডেল নিয়ে কোথায় ছুটে পালাল।
: স্যান্ডেল হাওয়া 🙁
: পয়সা ফেলো, পেয়ে যাবে।
: পুরান কথা। নতুন কিছু বল।
: আমারগুলোও লুকিয়ে ফেলেছি। খালি পায়ে যাবো আজ। 😉

যে সকল মানবী ফেসবুকে চ্যাটিং-এর মাধ্যমে এই ধরনের গল্পগুলো লেখার উপকরণ সরবরাহ করছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *