ঈদের ছুটিতে বাসায় গিয়ে টেলিভিশনে ইউ এন্ড মি কনডমের নতুন একটা অ্যাড দেখলাম। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভালোই সেনসেশন সৃষ্টি করেছে বিজ্ঞাপনটি। বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখা যায় আলো আধারি এক পরিবেশে একজন নারী এবং একজন পুরুষ বাহিরে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে।
বাংলাদেশে টেলিভিশনে কন্ডমের অ্যাড প্রচারের ইতিহাস খুব নতুন নয়। বেশ ছোট থাকতে টেলিভিশনে প্যানথার আর সেনসেশন কন্ডমের অ্যাড দেখেছি, যদিও বুঝিনি এর কোন আলাদা আবেদন আছে কিনা। এতদিন পরে যখন সেই অ্যাডগুলোর কথা মনে করতে যাই, তখন মনে হয়, সময়ের আগেই নেয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি ছিল টেলিভিশনে কন্ডমের অ্যাড দেয়া।
ইউ এন্ড মি কনডমের বিজ্ঞাপনে ছোট ছোট কাটে পুরো বিষয়টিকে উপস্থাপন করায় গতি লাভ করা সম্ভব হয়েছে। স্ত্রী নিজেকে সজ্জিত করতে লিপস্টিক, পারফিউম ইত্যাদি ব্যবহার করেন, অন্যদিকে স্মার্ট স্বামী জামার বোতাম লাগানো, টাই বাধাঁর মাধ্যমে তৈরী হন। কিন্তু জামার বোতাম থেকে বের হয়ে থাকা টুকরো সুতোটিকে দূর করার জন্য এগিয়ে আসেন স্ত্রী এবং দাঁত দিয়ে কেটে ফেলেন, কিন্তু খুলে যায় লম্বা চুলের বাধানো খোপা এবং ছিটকে পড়ে চুলের কাঁটা। পরিপাটি বেশে দুজন রওয়ানা হয়, স্ত্রী দরোজা খুলে ধরেন, তবে তা বাহিরে যাবার জন্য নয় বরং বেডরুমের। দর্শকের চোখের সামনে বেডরুমের দরোজা বন্ধ হয়ে যায়।
লাইটিঙের সুন্দর ব্যবহার, পরিচ্ছন্ন এডিটিং আর ক্যামেরার মুভমেন্ট অ্যাডটিকে সুন্দর এবং আকর্ষনীয় করেছে সন্দেহ নেই তবে দর্শকের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য করেছে সে ব্যাপারে কথা থাকতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে অ্যাডটি আমার কাছে অ্যাডের তুলনায় কিছুটা অড মনে হয়েছে। অ্যাড এর পাত্র পাত্রীকে চিনতে পারিনি, তবে পাত্রী হিসেবে জোলির মতো ঠোটের অধিকারী কন্যা জোলির মতো পুরোটা না হলেও অনেকটা আবেদন সৃষ্টি করেছেন। বিশেষ করে পেছন থেকে নেয়া পিঠখোলা নারী এবং ঠোটের ঝাঁকুনি উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করেছে। কিন্তু অ্যাড হিসেবে কতটুকু সার্থক? কিংবা বলা যায় কতটুকু প্রয়োজন ছিল এতটা আবেদন সৃষ্টি করার।
এশিয়াটিক থেকে নির্মিত ইউ এন্ড মি কনডমের বিজ্ঞাপনের ক্লায়েন্ট এস এম সি। নির্মান করেছে ড্রিমস্মিথ। অ্যাডভার্টাইজিং এর উদ্দেশ্য সমূহের মধ্যে প্রধান তিনটি হলো প্রোডাক্ট সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা, দাম সম্পর্কে জানানো এবং ভোক্তাকে পুনরায় মনে করিয়ে দেয়া। এই চিত্রে এর কোনটিই প্রকাশিত হয়েছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া এ ধরনের অ্যাড টেলিভিশনের মতো মাস মিডিয়ায় প্রচার করার পূর্বে চিন্তা করার দরকার আছে বলে মনে হয়। এটি অবশ্যই ১৮+ ট্যাগ করার মতো নয়, কিন্তু ভেবে দেখুন তো, প্রাপ্তবয়স্ক একাধিক ব্যক্তি যেখানে বাবা মা থেকে শুরু করে আরও সদস্যরা থাকতে পারেন, সেখানে এই বিজ্ঞাপন কতটা সস্তি দিতে পারে দর্শকের মনে। যতটুকু দেখানো হয়েছে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তা করতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে এর সার্থকতা বিশাল।
শিল্পগুনের বিচারে ইউ এন্ড মি কনডমের অ্যাডটির ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নেই। বাসার সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখার সময় এর চেয়েও আপত্তিকর দৃশ্য চলে আসে, আসতে পারে, কিন্তু তা একবারই…. কিন্তু বার বার একই দৃশ্য দেখার সময় খুব একটা সস্তি বোধ করতে দেয় না।
ভাল লাগলো। শুদ্ধা চিন্তা আমার কাছে; অন্য হয়তো বলবে সেকেলে ভাবনা। লেখকের চিন্তার পিছনর মোটিভেশন,লেখার উদ্দেশ্য,ইত্যাদির সাথে আমি একমত হলেও তার ভাষ্য পছন্দকে আমি প্রশাংসা করতে পারছিনা। তিনি একটি আপত্তিকর ভিজুয়াল প্রদর্শণীকে আক্ষরিক বর্ণনায় নিয়ে এসে সমালোচনা করেছেন। তিনি হুবহু বর্ণনা না দিয়ে কিছু বিশেষণ ব্যবহার করলে এটি আরো সার্থক হত। তবে অবশ্যই তিনি বিষয়টি তুলে এবং প্রদর্শনীটি দৃষ্টিভঙ্গিগত ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে এক সমাজের অসাধারণ উপকার করেছেন। লেখককে ধন্যবাদ
এডটাকে এমন কিছু মনে হয়নি। যৌণ উদ্দীপনাও তৈরি করতে পারেনি তেমন, যদিও খানিক একটু সেক্সি সেক্সি ভাব ছিল। এত ভাবাভাবির কিছু আছে বলে মনে হলো না। মানুষ, সমাজ, জেনারেশন অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
এড হিসেবে এটাকে কোন শক্তিমান কিছু মনে হয়নি।
আসলে এই সব বিষয়ে শিক্ষা দেবার জন্য যে একমাত্র এই ধরনের বিজ্ঞাপনই তৈরী করতে হবে তা কিন্তু নয়। কিন্তু সম্ভবত বিদেশী কিছু বিজ্ঞাপন দেখেই এই ধরনের কিছু একটা করার ইচ্ছা ও বাস্তাবায়ন করেছে আমাদের কিছু মেধা/ব্যবসায়ীরা। শিক্ষা অন্য রকমের কিছু। আমারতো মনে পড়েনা আমি কন্ডম বিষয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক, পারিবারিক শিক্ষা পেয়েছিলাম কিনা। কিন্তু আশা করি তারপরও এইডস্ বা এই সকল বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ও সাবধান। আসলে আমরা আমাদের শিশুদেরকে প্রকৃত শিক্ষা দেইনা, কিন্তু ব্যাস্ত হয়ে যাই যখন তারা বড় হয়ে যায়। আর যখন বড় হয়ে out of control হয়ে যায় তখন আর উপায় পাইনা। উপায় না পেয়ে তখন রেডিমেড সাময়িক সমাধানের দিকে হাত বাড়াই। আমি specific এই বিজ্ঞাপন বা এই ধরনের সকল বিজ্ঞাপনেই (perfume, body spray, soap, shampoo, etc.) অসুন্তষ্ট। প্রত্যেকেই নিজের প্রডাক্টটা দেখাচ্ছে কিন্তু কেমন যেন উদ্ভট একটা বিষয় তুলে ধরছে। ‘এতো + ওতো = সামাজিক দায়বদ্ধতা কতো?’ সেই হিসাবটা যেন ওরা করেনা বললেই চলে। যারা ভালো কাজ করেন তাদের কাজ দেখার প্রত্যাশায় রইলাম।
ধন্যবাদ শিবলী মেহেদী, আপনি খুব যথার্থ কথা বলেছেন। নিজের স্বার্থের দিকে চেয়ে আমরা প্রায় সবাই এর বিধ্বংসী প্রভাবটা ভুলে যাই ..
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।