প্রতিদিন একটি মুভি – ৩: Water

কোন ট্রিলজির তৃতীয় পর্ব নিয়ে লেখা অবশ্যই অন্যায়, বিশেষতঃ তার প্রথম পর্ব দুটি সম্পর্কে যদি কোন ধারনা পূর্বে দেয়া না হয়। সুতরাং ক্ষমাপ্রার্থী, তবে নিশ্চয়তা দিতে পারি, একক মুভি হিসেবেও Water স্বতন্ত্র। আবার ট্রিলজি হিসেবে এর মহাত্বও অনেক। ট্রিলজি নিয়ে পরে পোস্ট দেবার ইচ্ছে রাখি। আজ শুধু ওয়াটার।

দীপা মেহতা মুভি বানিয়েছেন ক’টি? উইকিপিডিয়া বলে, সাতটি। আলোচনায় এসেছেন কবার? সবাই জানি, সে অনেক বার। বোধহয় বারবার আলোচনায় আসার কারনেই তার তৈরী মুভিগুলো খুব হিট হয়, অথবা, সম্পুর্ন উল্টোটা এবং বোধহয় এটাই সবচে’ গ্রহনযোগ্য, খুব ভালো ভালো মুভি বানাবার জন্যই তিনি বারবার আলোচনায় চলে আসেন। “ওয়াটার” আলোচিত ফিল্মমেকার দীপা মেহতার আলোচিত ফিল্ম। তার ‘Elements Trilogy’ র শেষ পর্ব ওয়াটার, বাকী দুটোর প্রথমটি “ফায়ার” আর পরেরটি “আর্থ”

শ্যুটিং লোকেশনের এমন ছবি দেখে ভক্তি লাগে, তাই না?

একটা গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিই। ওয়াটার কিন্তু ভারতীয় মুভি না, যদিও প্রায় সকল চরিত্রই ভারতীয়, ঠিক যেমনি স্লামডগ ভারতীয় মুভি না। তবে দীপা মেহতা ভারতীয়, এতে কোন সন্দেহ নাই। ওয়াটার কানাডিয়ান মুভি।
সাথে রয়েছে একটি মজার তথ্য। অনেক মুভির মতো ওয়াটার কোন উপন্যাসের অ্যাডাপ্টেশন নয়, বরং উপন্যাসটাই ওয়াটার মুভির অ্যাডাপ্টেশন ! ;)

মুভির শুরুটা কেমন? আসুন দেখি …
: চুইয়া?
: উম.. (ঘুমে আচ্ছন্ন)
: তোমার কখন বিয়ে হয়েছিল মনে আছে?
: নেহী বাবা! (ঘুম কাটেনি)
: তোমার স্বামী মারা গেছে, তুমি এখন বিধবা!
: উমম বাবা! (আবার ঘুম)

১৯৩৮ সালের পটভূমিকায় হিন্দুদের বিধবা রীতির পরিচয়জ্ঞাপক মুভি ওয়াটার। আট বছরের বিধবা চুইয়ার আশ্রয় হয় বেনারসের আশ্রমে, নানান বয়সী আরও চোদ্দজন বিধবার সাথে। গান্ধীকে নিয়ে তখন দেশজুড়ে মাতামাতি। তিনি দেশকে স্বাধীনতার কথা বলছেন। ভিক্ষার অর্থে চলে এসকল বিধবাদের সংসার। আশ্রমের প্রধান ৭০ বছর বয়সী বিধবা মধুমতির রয়েছে একটি ভিন্ন ব্যবসা। বিধবাদের দিয়ে বেশ্যাবৃত্তি করানো, কাস্টমার নদীর ওপারের ব্রাক্ষ্মনরা, এতে পাপ নেই, আছে পূন্য। এ কারনেই একমাত্র বিধবা কল্যানী (লিজা রে) যার চুল এখন পর্যন্ত কর্তন করা হয়নি।

কিছু অসাধারন ফ্রেম পাওয়া যাবে মুভিটিতে

গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত নারায়ন (জন আব্রাহাম) চুইয়ার মাধ্যমে পরিচিত হয় কল্যানীর সাথে, অনুরক্ত হয় বিধবার প্রতি, সমাজের প্রচলিত সংস্কারকে পাশে রেখে বিয়ে করতে চায় কল্যানীকে। বাধ সাধে সমাজ। কিন্তু পানিতে ডুবে মরে কল্যানী, সমাজের ভিত্তিহীন নিয়ম কানুনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে।

মুভিতে সবচে’ কড়া ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছে শকুন্তলা (সীমা বিশ্বাস)। আশ্রমের মাধ্যমে সামাজিক বন্দীত্বের বিরুদ্ধে চিন্তা ভাবনা করার সাহস তারই রয়েছে। চুইয়াকে মুক্তির পথ তো সেই দেখিয়েছে।

হিন্দু রীতিনীতির বিরুদ্ধে বিশাল এক প্রতিবাদ এই মুভিটি। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের হিন্দুরা একে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করে নি। ঘাটে শুটিং এর দিন তো ২০০০ প্রতিবাদীর সমাবেশ হয়েছিল। এ আর রহমানের মিউজিকে মুভিটা খুব এনজয়েবল। মাস্ট সি, তবে অনুরোধ, মুভিটা দেখেই হিন্দু রীতিনীতির প্রতি ভীষন ‘বিরক্ত’ (!) হয়ে যাব্নে না যেন।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *