রাজধানীর গুলশানের বাসিন্দা সিরাজ সাহেব একজন বিখ্যাত উকিল, যাকে কিনা বলে এক্কেবারে জাদঁরেল। শহর জুড়ে তার বিশাল প্রতিপত্তি, নাম ডাক। সাম্প্রতিক সময়ে তার বিশেষ কয়েকটি খবর হলো – তার বড় মেয়েটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল পাস করার পর বিলেতে পড়তে গিয়েছিল এবং একখানা ডিগ্রিসহ পরশু দিন ফেরত এসেছে, তিনি এতদিন গরীব মানূষের সেবা করেছেন অকাতরে এবং এই সেবাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য তিনি এখন সরকারী দলের নেতৃ পর্যায়ের লোকজনের সাথে ওঠাবসা করছেন এবং সবশেষে গত মাসে তিনি বহুদিনের শখ পূরন করে একটি লিমোজিন কিনেছেন।
ঢাকার রাস্তায় যত্তসব ভাঙ্গা গাড়ি আর অসভ্য লোকের পদচারনা, এত লম্বা গাড়ি দেখে সবাই সামনে এগিয়ে আসে, না জানি কখন কোথায় স্ক্র্যাচ ফেলে দেয় কিংবা মিছিলের মুখে পড়ে গাড়ি ভাঙ্গার শিকার হয় – এই ভয়ে উকিল সাহেব তার গাড়িটিকে বের করেন না। অবশ্য গাড়িটিকে চালু রাখার জন্য প্রতিদিন তিনি একবার করে গাড়িটিতে ভ্রমন করে নেন, সেটা একদম ভোর থেকে সূর্য উঠার কিছুপর পর্যন্ত। এ সময় তার সাথে একমাত্র ড্রাইভার ছাড়া কেউ থাকে না। গাড়িতে বসেই তিনি সকালের হাওয়া খান আর আশে পাশের লোকজনকে দেখে যান।
প্রতিদিনের মত আজ সকালেও তিনি তার লিমোজিনে ঘুরতে বেরোলেন, শুধু গুলশানের রাস্তাঘাটের মধ্যেই। পরনে তার সাদা পাজামা পান্জাবী, শুভ্র পোষাক। ঘন্টাখানেক বেরিয়ে আসার পর তিনি যখন ফিরছেন তখন অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখলেন, বিশ্বাস করা যায় না। তিনি দেখলেন দুটো লোক রাস্তার পাশে ছোট্ট মাঠে উপুর হয়ে কিছু করছে, ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলেন দুজনেই মাঠ থেকে ঘাস ছিড়ে মুখে পুড়ছে।
দেখে উকিল সাহেবের মন উচাটন করতে লাগল। পরম কৌতুহল ভরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন।
‘কি করছেন আপনারা?’
‘দেখেন না? ঘাস খাইতেছি!” লোক দুটো পাত্তা না দিয়ে মনযোগের সাথে ঘাস ছিড়েতে লাগল। ঘাস খেতে যে তাদের খুব ভালো লাগছিল না তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।
‘কেন ঘাস খাচ্ছেন?’
‘পেটে ক্ষুধা, খাইতে পারিনা তাই!’ নির্বিকার উত্তর একজনের!
“আপনি আমার সাথে আসেন!”
‘কই?’ অবাক হল লোকটি।
‘গাড়িতে, আমার সাথে যাবেন আপনি।’
‘কিন্তু আমার সাথে যে আমার বৌ আর চারটে ছেলেমেয়ে রয়েছে!’
‘তাদেরকেও সাথে নিয়ে আসুন’
এই দেখে দ্বিতীয় লোকটি চুপ থাকতে পারল না, ‘আমি?’
‘আপনিও আসুন।’
‘কিন্তু আমার সাথে আমার বৌ আর দশটা ছেলেমেয়ে আছে!’
‘সমস্যা নেই তাদেরকেও নিয়ে আসুন!’
বুঝতেই পারছেন এতগুলো মানুষের জন্য লিমোজিনটা ছোটই হল, তারপরও সবাই কষ্ট করে উঠে পড়ল, না জানি কপালে কি আছে!
এদিকে উকিল সাহেব কিছুটা আনন্দিত বোধ করছেন, সকাল বেলাতেই তিনি আঠারো জনের জন্য খাবার ব্যাবস্থা করতে পেরেছেন বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল।
গাড়ি চলতে শুরু করেছিল, এবার লোকদুটোর একজন মুখ খুলল, ” স্যার আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, অনেক কষ্ট করছেন। আপনার নতুন গাড়িটা আমরা গাদাগাদি করে বসেছি, যদি নষ্ট হয়ে যায়, তার পরও স্যার আপনার অশেষ দয়া। কিন্তু স্যার এতগুলা মানুষ নিয়া শেষে আপনার সমস্যা হবে নাতো স্যার?
না – না – কি যে বলেন, কোন সমস্যা নয়। সত্যি কথা হল, আমার বাগানের ঘাসগুলো যথেষ্ট বড় হয়েছে, তা প্রায় লম্বায় একফুট হবে নিশ্চয়ই, বিশ্বাস করুন – আপনাদের কোন কষ্ট হবে না!